(বাঁ দিকে) রাধিকা যাদব। (ডান দিকে) রাধিকার বাবা দীপক যাদব। ছবি: সংগৃহীত।
ছোটবেলায় বাবা দীপক যাদবের হাত ধরেই টেনিসের দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন রাধিকা।টেনিস খেলায় মেয়েকে বরাবর উৎসাহ জুগিয়ে এসেছেন দীপক। শুধু উৎসাহ দেওয়াই নয়, মেয়ের প্রশিক্ষণ, তাঁকে ভাল একটা জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিজেও অনেক ত্যাগস্বীকার করেছেন। কিন্তু রাধিকা টেনিস প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করার পর থেকেই বাবা-মেয়ের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়।
সূত্রের খবর, দীপক বাড়িতে জানিয়েছিলেন যে, তাঁকে আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের কাছে নানা কটু কথা শুনতে হচ্ছে রাধিকার এই কাজের জন্য। প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ বন্ধ করতে রাধিকার উপর চাপ সৃষ্টি করা হতে থাকে। বাবার মানসিক অবস্থার কথা বুঝতে পেরে তাঁকে নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন রাধিকা। তাঁকে এ কথাও বলেছিলেন, ‘‘আমার জন্য আড়াই কোটি টাকা খরচ করেছ। ভরসা রাখো, আমি তার মান রাখব। তোমাদের মাথা নত হবে, এমন কোনও কাজ করব না।’’
তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, রাধিকার এই কথাতেও বরফ গলেনি। বরং তাঁকে প্রশিক্ষণের কাজ বন্ধ করার জন্য জোরাজুরিও করা হয়। আর তাতে বেঁকে বসেছিলেন রাধিকা। তিনিও জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রশিক্ষণের কাজ চালিয়ে যেতে চান। জেরায় দীপক পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, বার বার কটাক্ষের শিকার হয়ে তিনি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেই কটাক্ষ তাঁর ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। ১৫ দিন ধরে ঠিকমতো ঘুমোতে পারেননি। মনের মধ্যে অস্থিরতা ক্রমেই বেড়ে চলেছিল। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তার পরেই কি খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন রাধিকাকে? যদিও দীপকের কাছ থেকে এই প্রশ্নের উত্তর পাননি তদন্তকারীরা। তবে তদন্তকারীদের কাছে দীপক দাবি করেছেন, পরিকল্পনা করেই মেয়েকে খুন করেছেন তিনি। দীপকের এই দাবির সত্যতা কতটা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, রিল বানানো পছন্দ করতেন না দীপক। তাঁর আপত্তিতে রিল বানানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন রাধিকা। এমনকি তাঁর সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে সেই রিল মুছেও দিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দেন। তার পর প্রশিক্ষণের কাজ বন্ধ করার জন্য রাধিকার উপর চাপ সৃষ্টি করেন। আর এখান থেকেই দু’জনের মনোমালিন্যের সূত্রপাত বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু এই কারণেই যে রাধিকা খুন হয়েছেন, এমনটা বিশ্বাস করতে চাইছেন না তদন্তকারীরা। নেপথ্যে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে কি না, তার হদিস পেতে চাইছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাধিকাকে গুলি করে খুন করা হয়। খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বাবা দীপকের বিরুদ্ধে। তাঁকে এক দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এফআইআরে লেখা হয়েছিল,পিছন থেকে তিনটি গুলি করা হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, রাধিকার বুকে চারটি গুলি করা হয়েছে।