ডাইন অপবাদ, টাকা দিয়ে মুক্তি যুবকের

ডাইন অপবাদে খুনের ঘটনা নতুন নয়। প্রচারেও অবস্থার উন্নতি যে হয়নি— তার প্রমাণ ফের মিলল গোড্ডার হরলা গ্রামে। প্রাণে বাঁচতে ডাইন অপবাদ পাওয়া এক যুবককে ঘটিবাটি বেঁচে হাজার হাজার টাকা তুলে দিতে হল ওঝা, গ্রামের মোড়লদের হাতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাঁচি শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:২৬
Share:

পরিবােরর সঙ্গে গণেশ (গোলাপি চাদর)। — নিজস্ব চিত্র

ডাইন অপবাদে খুনের ঘটনা নতুন নয়। প্রচারেও অবস্থার উন্নতি যে হয়নি— তার প্রমাণ ফের মিলল গোড্ডার হরলা গ্রামে। প্রাণে বাঁচতে ডাইন অপবাদ পাওয়া এক যুবককে ঘটিবাটি বেঁচে হাজার হাজার টাকা তুলে দিতে হল ওঝা, গ্রামের মোড়লদের হাতে।

Advertisement

হরলা গ্রামের বছর তিরিশের অন্নু সোরেন কয়েক মাস ধরে জ্বরে ভুগছেন। ‘টোটকা’য় কাজ না হওয়ায় অন্নুর আত্মীয়রা গাঁওবুড়োদের দ্বারস্থ হন। তাঁরা জানান, কোনও ডাইনের তুকতাকেই অন্নুর অসুখ সারছে না। গ্রামবাসীরা জানান, বিহারের বাঁকার বেলটিকরি গ্রামে এক নামী ওঝা রয়েছে। তার কাছেই অন্নুর পরিবার গিয়ে জেনে নিক, কে ডাইন। গ্রামবাসীদের একাংশ জানায়, নির্দোষ কেউ ডাইন অপবাদ পেলে তা ঠিক হবে না। তা ছাড়া ওঝা গ্রামের কাউকে না দেখে কী ভাবেই বা ডাইনকে চিনবে? বৃহস্পতিবার ম্যাটাডোর ভাড়া করে অন্নুর পরিবার গ্রামের ৩৫ জনকে নিয়ে বেলটিকরিতে যায়। ওঝারা জানায়, তাদের সঙ্গে আসা বছর তিরিশের যুবক গণেশ সোরেন ডাইন। ওঝা জানায়, ৫৫ হাজার টাকা পেলে গণেশকে ঝাড়ফুঁক করে ডাইন দোষ কাটিয়ে দেবে। গণেশ জানান, তাঁর কাছে টাকা নেই। অভিযোগ, টাকা দিতে না পারায় গ্রামবাসীরা তাঁকে ওঝার কাছে রেখে যায়। শেষে ১১ হাজার টাকায় রফা হয়। গণেশ বলেন, ‘‘আমার পরিবার দু’টো গরু ১১ হাজার টাকায় বিক্রি করে ওঝাকে দেওয়ার পর মুক্তি পাই।’’

ফিরেও গণেশের বিপদ কাটেনি। গত শনিবার মোড়লরা জানায়, গাড়ি ভাড়া করে বাঁকা যাওয়ার খরচ, রাস্তায় খাওয়া দাওয়া ও অন্নুর চিকিৎসার জন্য খরচ হওয়া ২২ হাজার টাকা গণেশকেই দিতে হবে। কারণ তাঁর জন্যই গ্রামের লোকদের এত সমস্যা হয়েছে। গণেশ মোড়লদের জানান, তাঁর কাছে মাত্র ৪ হাজার টাকা রয়েছে। অভিযোগ, মোড়লরা সেই টাকা গণেশের কাছ থেকে নিয়ে নেয়। একই সঙ্গে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি টাকা
না দিলে তাঁকে লাঠিপেটা করে গ্রামছাড়া করা হবে।

Advertisement

গণেশ বলেন, ‘‘আমাকে যে এ ভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে তা পুলিশকে আগে জানাইনি।’’ কিন্তু দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে বুঝে গত কাল থানায় যান গণেশ। গণেশের লিখিত অভিযোগ নেয় পুলিশ। খবর যায় গোড্ডার এসপি সঞ্জীব কুমারের কাছে। তিনি গত রাতেই হরলা গ্রামে পুলিশ পাঠান। এসপি বলেন, ‘‘এটা খুব ভয়ঙ্কর ঘটনা। কয়েক দিন ধরে এক জন নিরপরাধ মানুষকে যে ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে তা ভাবা যায় না। তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষীরা শাস্তি পাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন