লড়াইয়ের ময়দানটা বেশ কিছু দিন ধরেই অণ্ণা হজারের দুই প্রাক্তন সঙ্গীর দখলে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং কিরণ বেদী। এই অবস্থায় তারাও যে দিল্লির ভোটযুদ্ধে রয়েছে, সেটা বোঝাতে হঠাৎই হইহই করে ময়দানে নেমে কংগ্রেস সামনে রাখল সেই অণ্ণা হজারেকেই! দলের তরফে এ দিন অভিযোগ করা হল, অণ্ণাকে সামনে রেখে দেশ জুড়ে কংগ্রেস বিরোধিতার হাওয়া তোলার ষড়যন্ত্র করেছিল আরএসএস এবং তাদের সহযোগী কয়েকটি সংগঠন।
কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মার অভিযোগ, আরএসএস অনুগামী সংগঠন বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশনের ছাতার তলায় মূল ষড়যন্ত্রী ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা প্রধান অজিত ডোভাল। যিনি এখন মোদী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরএসএস নেতা গুরুমূর্তি, যোগগুরু রামদেব, প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ এবং দিল্লি ভোটে বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী কিরণ বেদী। আনন্দ জানান, সেই কারণেই কেজরিওয়াল আম আদমি পার্টি গঠন করলেও তাতে যোগ দেননি কিরণ। কারণ বিজেপি তাঁকে আগে থেকেই বড় টোপ দিয়ে রেখেছিল!
আপ নেতা কুমার বিশ্বাস গত কাল বলেছিলেন, লোকপাল বিল পাশের দাবিতে অণ্ণা যখন অনশনে বসেন, তখন কিরণ এবং ভি কে সিংহ বিজেপি-র দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনায় বারবার বাধা দিতেন। এর পরেই আজ আনন্দ বলেন, “অণ্ণা হজারেকে এঁরা বোকা বানিয়েছেন। তাঁকে অনশনের পথে ঠেলে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়েছে বিজেপি।” তাঁর অভিযোগ, বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশন এবং ‘ইন্ডিয়া এগেন্সট কোরাপশনের’ যে নেতারা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন, ক্ষমতায় এসে তাঁদের পুরস্কৃত করেছেন নরেন্দ্র মোদী। কাউকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করা হয়েছে, কেউ কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন, কাউকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করা হয়েছে। আনন্দ বলেন, “আর যাঁদের পদ দেওয়া যায়নি, তাঁদের পদ্ম পুরস্কার দিয়ে খুশি করার চেষ্টা হচ্ছে!”
কিরণ বেদী ও বিজেপি-র বিরুদ্ধে কংগ্রেসের এমন আক্রমণে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি আপ নেতৃত্ব। প্রকাশ্যে এ নিয়ে তেমন কিছু না বললেও তাদের মোদ্দা বক্তব্য, আমরা তো আগেই বলেছিলাম! আর কিরণ বেদীকে নিয়ে এমনিতেই অস্বস্তিতে থাকা বিজেপির সমস্যা বাড়িয়েছে কংগ্রেসের খোঁচা। বাধ্য হয়ে পাল্টা মুখ খুলে বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের প্রশ্ন, “কংগ্রেস এত দিন এ নিয়ে কিছু বলেনি কেন?” আর অণ্ণা? ‘নোংরা রাজনীতি’ নিয়ে কথাই বলতে চাননি তিনি।
পারস্পরিক এই তরজা দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আপ ও বিজেপির দখলে চলে যাওয়া দিল্লিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তুলতেই কংগ্রেস এখন নানা ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠছে। এবং কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী অজয় মাকেন এ কাজে অনেকটাই সফল। দিল্লিবাসীর মন পেতে আপ ও বিজেপি-র কায়দায় আজ ভোট প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে কংগ্রেস। দলের ইস্তাহার প্রকাশ করে বলা হয়েছে, দিল্লিতে সরকার গড়লে বিদ্যুৎ মাশুল এক ধাক্কায় অনেকটাই কমিয়ে দেবে কংগ্রেস।
সন্দেহ নেই, ভোটের দিন কয়েক আগে হঠাৎই যেন জেগে উঠেছে কংগ্রেস। তাই প্রশ্নও উঠেছে, বিজেপি ও আপ যখন দু’মাস আগে থেকে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে, তখন কেন খামোখা দেরি করলেন রাহুল গাঁধী। মাকেনকে তো আগেই দলের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করে লড়াইয়ে ঝাঁপাতে পারত কংগ্রেস!