ওপরওয়ালার করিশ্মাতেই জয়, দাবি অরবিন্দের

এ ভাবেও ফেরা যায়! সৎ, নির্ভীক, প্রতিষ্ঠান-বিরোধী এক নায়ক সমস্ত শক্তির বিরুদ্ধে লড়ে অবশেষে জয় ছিনিয়ে নিচ্ছেন সিনেমায় এমন চিত্রনাট্যের অভাব নেই। কিন্তু সব হারিয়েও এ ভাবে যে ফিরে আসা যায়, তার এক দুর্লভ নজির গড়লেন আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরীবাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:১৪
Share:

কাটআউটে ‘নায়ক’ কেজরী। উল্লাস আপ সমর্থকদের। রামলীলা ময়দানে শনিবার। —নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেও ফেরা যায়!

Advertisement

সৎ, নির্ভীক, প্রতিষ্ঠান-বিরোধী এক নায়ক সমস্ত শক্তির বিরুদ্ধে লড়ে অবশেষে জয় ছিনিয়ে নিচ্ছেন সিনেমায় এমন চিত্রনাট্যের অভাব নেই। কিন্তু সব হারিয়েও এ ভাবে যে ফিরে আসা যায়, তার এক দুর্লভ নজির গড়লেন আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরীবাল।

আজ দ্বিতীয় বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর কেজরীবাল এই ফিরে আসাকে ব্যাখ্যা করলেন কার্যত ঈশ্বরের নির্দেশনা হিসাবেই।

Advertisement

আমজনতার সামনে অকপট স্বীকারোক্তি কেজরীবালের, “৭০-এর মধ্যে ৬৭ আসনে জয়, এ শুধু মানুষের কাজ নয়। কুদরতের করিশ্মা ছাড়া এটা হয় না!” লোকসভা নির্বাচনে দিল্লি থেকে কার্যত মুছে যাওয়া আপ যে ভাবে ক্ষমতায় ফিরেছে তা অবাক করেছে নেতা-কর্মীদের। কেজরীবালও তাই বলেন, “এই জয় দিয়ে ওপরওয়ালা কিছু বলতে চাইছেন। কোনও বড় কাজ করাতে চান তিনি। আমার সৌভাগ্য, সেই কাজের জন্য আমাকেই বেছে নিয়েছেন তিনি!”

কী সেই কাজ? আম আদমির নেতা আজ ঘোষণা করেন দিল্লিকে দেশের প্রথম দুর্নীতিমুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলা হবে তাঁর সরকারের লক্ষ্য। ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের কেউ তাঁদের আর ঘুষ চেয়ে বিরক্ত করবে না। তাঁরা মন দিয়ে ব্যবসা করুন, তবে ঠিক ঠিক করটাও দিয়ে দিন। কারণ কাজ করতে সরকারেরও টাকার দরকার।

বিজেপির ‘ঔদ্ধত্য’ চূর্ণ করে জয়ের স্বাদ নিতে আজ উৎসুক ছিলেন রাজধানীর মানুষ। তাই কেজরীবাল যখন ঘোষণা করেন, তাঁর সরকার ভিআইপি সংস্কৃতি ত্যাগ করল। কোনও মন্ত্রীর গাড়ির মাথায় আর লাল আলো জ্বলবে না, করতালিতে ফেটে পড়ল গোটা ময়দান। তবে কেজরীবাল জানান, গাড়ি এখনই ছাড়তে পারছেন না মন্ত্রীরা। গণপরিবহণে যাতায়াত করলে কাজের গতি কমে যাবে। হাতে মাত্র পাঁচটা বছর, কাজ বাকি বহু!

রামলীলা ময়দানে আজ ছিল সব অর্থেই আম-আদমির মিলন মেলা! কে নেই সেই ভিড়ে? চলচ্চিত্র জগতের গুল পনাগ, জাভেদ জাফরি, আয়ুব খান, শেখর সুমন। শেখর বলেন, “কেউ ডেকে আনেনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেজরীবাল যে লড়াই ছুড়ে দিয়েছেন, তাকে কুর্নিশ জানাতেই রামলীলায় এসেছি।” এসেছেন কেজরীবালের কিছু সহপাঠীও। তাদেরই এক জন সুব্রত সাহা উড়ে এসেছেন দুবাই থেকে। বললেন, “কত কথা যে আজ মনে পড়ছে! ছাত্রাবস্থায় অনিল কপূর-মাধুরী দীক্ষিতের ‘তেজাব’ দেখে মুগ্ধ হয়েছিল আমাদের অরবিন্দ। কত বার সে সিনেমাটা দেখেছে। আজ সে নিজেই নায়ক!”

সকাল আটটার মধ্যেই রামলীলা ময়দান সংলগ্ন মেট্রো স্টেশনগুলি যে ভাবে ভিড় উগরে দিতে থাকে, তাতে বোঝা যাচ্ছিল মানুষ কুলোবে না রামলীলার বিশাল প্রান্তরে। ফরিদাবাদের অটোচালকরা এ দিন রামলীলা অভিমুখী মানুষকে নিয়ে গিয়েছেন বিনা বাড়ায়। অটো চালক সংগঠনের নেতা সীতারাম বলেন, “আমাদের লোকই তো মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। আমরাও তাই ভাড়া নিচ্ছি না।”

ভিড়ের সামনে ক্রমশ ছোট হতে হতে মিলিয়ে যায় ময়দানের খালি অংশ। বিশাল কাট আউটে ভরে যায় প্রান্তর। রীতিমতো উৎসবের মেজাজ! মানুষ আসছেন, হাসছেন, একে অপরকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। লাড্ডু বিলোচ্ছেন দিল্লিকা লাড্ডু, শুধু আজ পস্তাচ্ছেন না কেউই!

বেলা এগারোটায় বন্ধ করে দিতে হয় রামলীলার সমস্ত গেট। শেষে মাঠের চার ধারে বসানো পর্দায় কেজরীর বক্তব্য শোনেন জনতা। নির্ধারিত সময়ের আধ ঘণ্টা পরে কেজরীবাল যখন পৌঁছলেন, উল্লাসে ফেটে পড়ল রামলীলা।

দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হল আম আদমির নেতার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement