কংগ্রেসকে পথে বসাতে এ বার নেহরুরও ভাগ চাইছেন মোদী

দুর্যোগের দিনে এখনও জওহরলাল নেহরুই তাঁর ভরসা। এমনকী লোকসভা ভোটে হারের ক’দিন পরেই সনিয়া গাঁধী বলেছিলেন, সাময়িক হতাশার পরিবেশ তৈরি হলেও নেহরুর দর্শনে টিকে থেকে কংগ্রেস ফের ক্ষমতায় ফিরবে বলেই তাঁর বিশ্বাস! ‘বিভাজনের রাজনীতি’ ও ‘বাজার অর্থনীতির’ বিরুদ্ধে ফের জয় হবে নেহরুর সমাজতত্ত্বেরই। কিন্তু নেহরুর সেই উত্তরাধিকারেই যদি এ বার নরেন্দ্র মোদী থাবা বসান, তা হলে কংগ্রেসের হাতে থাকল কী!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:০১
Share:

দুর্যোগের দিনে এখনও জওহরলাল নেহরুই তাঁর ভরসা। এমনকী লোকসভা ভোটে হারের ক’দিন পরেই সনিয়া গাঁধী বলেছিলেন, সাময়িক হতাশার পরিবেশ তৈরি হলেও নেহরুর দর্শনে টিকে থেকে কংগ্রেস ফের ক্ষমতায় ফিরবে বলেই তাঁর বিশ্বাস! ‘বিভাজনের রাজনীতি’ ও ‘বাজার অর্থনীতির’ বিরুদ্ধে ফের জয় হবে নেহরুর সমাজতত্ত্বেরই। কিন্তু নেহরুর সেই উত্তরাধিকারেই যদি এ বার নরেন্দ্র মোদী থাবা বসান, তা হলে কংগ্রেসের হাতে থাকল কী!

Advertisement

কংগ্রেস তথা গাঁধী পরিবারকে চমকে দিয়ে জওহরলাল নেহরুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালনে আজ একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়েছেন মোদী। অতীতে ইউপিএ জমানায় মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে এই সংক্রান্ত একটি কমিটি তৈরি হয়। সনিয়া গাঁধী ও তাঁর পারিবারিক বন্ধু সুমন দুবেও ওই কমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু লোকসভা ভোটে পরাজয়ের ঠিক পরেই সনিয়া ও সুমন কমিটির সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেন। আজ সেই কমিটিই পুনর্গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী। যে কমিটির চেয়ারম্যান পদে থাকবেন তিনি নিজে। রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ ও লোকসভায় কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের পাশাপাশি সুমন দুবেকেও ৩১ জনের ওই কমিটিতে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। আবার কমিটিতে মহম্মদ মাদানির মতো সংখ্যালঘু নেতার নাম রেখেও কৌশলী পদক্ষেপ করেছেন তিনি। তবে উদযাপন কমিটিতে কংগ্রেস বা গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠদের রাখলেও রূপায়ণ কমিটিতে তাঁদের কাউকেই রাখেননি মোদী।

প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা আজ শুধু কংগ্রেসকেই চমকে দেয়নি, রাজনীতিক ও প্রশাসনের ভিতরে জল্পনারও রসদ জুগিয়েছে বিস্তর। লোকসভার ভোট প্রচারে নেহরু-গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেন মোদী। এমনকী নেহরুর ঐতিহ্যের তুলনায় সর্দার বল্লভভাই পটেলকে বড় করে দেখাতে নর্মদার তীরে তাঁর বিশাল মূর্তি নির্মাণের প্রকল্প ঘোষণা করেন তৎকালীন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। আবার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর লোকসভায় তাঁর প্রথম বক্তৃতায় মহাত্মা গাঁধীর দেড়শোতম জন্মবার্ষিকী পালনের কথা ঘোষণা করলেও নেহরুর নাম উল্লেখ করেননি তিনি। যোজনা কমিশন ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে মোদীর সিদ্ধান্তকে ঘিরেও এই সমালোচনা হয় যে নেহরুর চিহ্নটুকুও মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। সর্বশেষ বিতর্ক হয়েছিল, চন্দ্রযানের সফল উৎক্ষেপণের পর। সে দিন ইসরোয় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় নেহরুর নাম এক বারও উল্লেখ করেননি। অথচ ইসরো প্রতিষ্ঠার মূলে ছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

নেহরুর ১২৫ বছরের জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়ে দেন সনিয়া গাঁধী। সেখানেই আনন্দ শর্মা, মুকুল ওয়াসনিক, জয়রাম রমেশের মতো প্রাক্তন মন্ত্রীদের নেতৃত্বে পাঁচটি পৃথক সাব কমিটিও গড়েন সনিয়া। ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা বলেন, নেহরুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দিল্লিতে তিন দিনের একটি সম্মেলন করে আন্তর্জাতিক স্তরের নেতাদের ডাকবে কংগ্রেস। সরকার যখন নেহরু সম্পর্কে নীরব ছিল, তখন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করে মোদীকে অস্বস্তিতে ফেলার পরিকল্পনা করে কংগ্রেস। তাতেই আজ জল ঢেলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যে মহাত্মা গাঁধীর ঐতিহ্যকে সামনে রেখে দেশ জুড়ে স্বচ্ছতা অভিযান শুরু করেছে সরকার। সম্প্রতি হরিয়ানায় নির্বাচনী প্রচারের মধ্যেই নেহরুর নাম টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, নেহরুর জন্মদিনে দেশ জুড়ে ‘বাল স্বচ্ছতা অভিযান’ শুরু করার কথা ভাবা হয়েছে। প্রশ্ন হল, আচমকাই কেন এমন অবস্থান বদল করলেন প্রধানমন্ত্রী?

অনেকের মতে, কংগ্রেসের রাজনীতির পরিসরটাই ছোট করে দিতে চাইছেন মোদী। বিজেপি-র রাজনৈতিক ক্ষেত্রকেও বাড়াতে চাইছেন। হিন্দুত্বের বিষয়কে প্রধানমন্ত্রী এমনিতেই পাশে সরিয়ে রেখেছেন। গাঁধী ও নেহরুকে নিয়ে আবেগকে সামনে রেখে বৃহত্তর সমাজকে বার্তা দিতে চাইছেন মোদী। যদিও এই বিষয়টি মোদী একা করছেন না। যে সঙ্ঘ পরিবার এত দিন দীনদয়াল উপাধ্যায় ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো তাঁদের ঘরানার নেতাদের ঐতিহ্য ও মতাদর্শের কথাই বলত, তাঁরাও এখন সমসাময়িক অন্য নেতাদের অবদানের কথা বলতে শুরু করেছেন। বিজয়াদশমীর দিন তাঁর বক্তৃতায় সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত, জয়প্রকাশ নারায়ণ ও রামমনোহর লোহিয়ার অবদানের কথাও উল্লেখ করেন।

তবে প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে খাটো করে দেখানোরই চেষ্টা করেছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র সন্দীপ দীক্ষিত বলেন, কেন্দ্রে সরকার গঠনের পর নেহরুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী কমিটি নতুন করে তৈরি করা জরুরি ছিল। কমিটি গড়তে প্রধানমন্ত্রী এত দিন দেরি করলেন কেন, সেটাই বিস্ময়! এর থেকেই মোদী সরকারের মানসিকতা বোঝা যাচ্ছে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এর পর নেহরুর জন্মবার্ষিকী পালনে কংগ্রেসের আয়োজন জোলো হয়ে যাবে না তো! হয়তো সেটাই নতুন উদ্বেগ সনিয়ার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন