বুথ ফেরত সমীক্ষা সত্যি হলে দু’দিন পরে তিনি আর সিনেমা দেখার সময় পাবেন না। তখন তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসতে হবে। বিদ্যুতের বিল অর্ধেক করে দেওয়া ও পরিবার পিছু মাসে ২০ হাজার লিটার জল জোগানোর বন্দোবস্ত করতে হবে।
ক্ষমতায় এলে কী ভাবে তিনি এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন, কী ভাবেই বা ঘুষের রাজত্ব বন্ধ করবেন---রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও শিল্পমহলের সকলেই তা দেখতে চাইছেন। দিল্লিতে কেজরীবালের জয় ও বিজেপির হারের পর জাতীয় রাজনীতিতে মোদী-সরকার বিরোধীরা একজোট হওয়ার চেষ্টা করেন কি না, সংস্কারের কাজ হোঁচট খায় কি না, তাও দেখার বিষয়।
তার আগে আজ অরবিন্দ কেজরীবাল কী দেখলেন? কৌশাম্বীতে তাঁর বাড়ির কাছেই মাল্টিপ্লেক্স। দলবল নিয়ে সেখানে গিয়ে অরবিন্দ কেজরীবাল দেখলেন অক্ষয় কুমারের নতুন সিনেমা ‘বেবি’। এক পাশে কুমার বিশ্বাস, অন্য পাশে মণীশ সিসৌদিয়া। তার আগে সকালে উঠে যোগাসন, ধ্যান, তার পর ছেলে-বউ-বাবা-মায়ের সঙ্গে গল্প-আড্ডা। আপের স্বেচ্ছাসেবকদেরও তিনি টুইট করে বার্তা দিয়েছেন, “আপনারা দারুণ কাজ করেছেন। এখন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। ঘুমোন।”
কেজরীবালের কথা থেকেই স্পষ্ট, দিল্লির ভোটে জেতার বিষয়ে তিনি নিশ্চিন্ত। কিন্তু দিল্লির সরকারে আসার পর তিনি কেন্দ্রীয় সরকার সম্পর্কে কী মনোভাব নেবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দিল্লি দেশের রাজধানী। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। দিল্লির উন্নয়নের সবটাই নির্ভর করে কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্যের উপর। কেন তাঁরা দিল্লির রাজ্য সরকারে ক্ষমতায় আসতে চাইছেন, সে বিষয়ে অরুণ জেটলি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, রাজধানী দেশের মুখ। সেই কারণেই দিল্লিতে উন্নয়মুখী সরকার প্রয়োজন। কেজরীবাল যদি কেন্দ্রের সাহায্য না পান, তা হলে কি ফের ধর্নায় বসবেন?
প্রথম বার ভোটে কেজরীবালের একমাত্র প্রচারের বিষয় ছিল দুর্নীতি। যার জন্য লোকপাল বিল ও স্বরাজ বিল আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিধানসভায় এই লোকপাল বিলে বাধা পেয়েই পদত্যাগ করেন কেজরীবাল। এ বার কেজরীবালের প্রচারে লোকপাল ও স্বরাজ এসেছে শেষবেলায়।
তার আগে বিদ্যুৎ, জল, মহিলাদের নিরাপত্তা, দিল্লি জুড়ে ওয়াই-ফাইসবই গুরুত্ব পেয়েছে। ভোটের বিতর্কে অন্যতম বড় বিষয় ছিল মহিলা-নিরাপত্তা। দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন। সে ক্ষেত্রে যা-ই করতে যান, কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া পথ নেই।
বিদ্যুতের বিল অর্ধেক করে দেওয়া বা পরিবার পিছু মাসে ২০ হাজার লিটার জল নিখরচায় দেওয়ার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে কংগ্রেস বা বিজেপি অন্য কেউ পাল্লা দিতে পারেনি। কারণ দিল্লিতে বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা পুরোটাই বেসরকারি হাতে। বিল কমাতে গেলে সরকারকেই ভর্তুকি দিতে হবে। কিন্তু কেজরীবাল বেসরকারি সংস্থাগুলির হিসেবের খাতা অডিট করানোর হুমকি দিয়েছেন। ফলে ওই সংস্থার কর্তারা চিন্তায় পড়েছেন। হরিয়ানা থেকে জল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে দিল্লিতে জলকষ্ট শুরু হয়। সেখানে প্রতি বাড়িতে ২০ হাজার লিটার জল কোথা থেকে আসবে, তা-ও এক প্রশ্ন।
উল্টো দিকে কেজরীবাল জিতে এলে জাতীয় রাজনীতিতেও তাঁর প্রভাব পড়বে বলে রাজনীতিকরা মনে করছেন। এমনিতেই রাজ্যসভায় মোদী সরকার এখনও সংখ্যালঘু। তাই একের পর এক সংস্কারের বিল লোকসভায় আটকে যাওয়ায় অর্ডিন্যান্সের পথ নিতে হয়েছে মোদী-জেটলিকে। কিন্তু শিল্পমহল, বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পাকাপোক্ত আইন চাইছেন। কারণ বিনিয়োগ করার পর আইন বদলে গেলে তাঁরা বিপাকে পড়বেন। কেজরীবাল বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ে তাঁর নীতি এখনও স্পষ্ট করেননি। শুধু জানিয়েছেন, তিনি খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধে। দিল্লির ভোটে কেজরীবালের দলকেই সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল এবং সিপিএম। এই দু’টি দলই রাজ্যসভায় সংস্কারের বিলে বাধা দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। দিল্লিতে বিজেপির হারে উৎসাহিত হয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এই দলগুলি আরও জোটবদ্ধ হয়ে নামতে পারে।
কেজরীবাল তাঁর স্বেচ্ছাসেবকদের ঘুমোনোর পরামর্শ দিলেও তিনি দিল্লির অনেকেরই রাতের ঘুম কেড়েছেন।