কোর্টে চাইলেন কাগজ, কলম

সবজেটে হলুদ সালোয়ার-কুর্তা। তাতে সাদা সুতোর ছোট ছোট কাজ। একই রঙের ওড়না লম্বা ঘোমটার মতো করে টেনে মুখটা প্রায় পুরোপুরি আড়াল করা। ঠিক ফিনফিনে ওড়না নয়। তাই সেই ঘেরাটোপ ভেদ করে তাঁর চেহারার একটা আবছা অবয়ব বোঝা যাচ্ছে মাত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৪
Share:

আদালতে আনা হচ্ছে ইন্দ্রাণীকে। শনিবার বান্দ্রায়। ছবি: পিটিআই।

সবজেটে হলুদ সালোয়ার-কুর্তা। তাতে সাদা সুতোর ছোট ছোট কাজ। একই রঙের ওড়না লম্বা ঘোমটার মতো করে টেনে মুখটা প্রায় পুরোপুরি আড়াল করা। ঠিক ফিনফিনে ওড়না নয়। তাই সেই ঘেরাটোপ ভেদ করে তাঁর চেহারার একটা আবছা অবয়ব বোঝা যাচ্ছে মাত্র। চিকচিক করছে কানের দুলটা। হাতে কোনও গয়না নেই। সামান্য চুড়িটুকুও না। লম্বা লম্বা আঙুল। পরিপাটি শেপ করা নখ— ‘রঙ’বিহীন। পা ঢাকা জুতো।

Advertisement

হালফিলে দেশের সব চেয়ে চর্চিত মহিলা চরিত্র শনিবার বান্দ্রা কোর্টের ভিড়ে ঠাসা এজলাসে যখন পা রাখলেন, তখন মোটামুটি দুপুর ৩টে। একটু পরেই যাঁর দিকে আঙুল তুলে শিনা বরা হত্যা মামলার সরকারি আইনজীবী লক্ষ্মণ রাঠৌর বলে উঠলেন, ‘‘ধর্মাবতার, ইনি এক অনন্য (exceptional) মা। ভারতের ইতিহাসে এমন মায়ের কথা শোনা যায়নি।’’

তবু বিচলিত হওয়ার কোনও লক্ষণ ধরা পড়ল না ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের শরীরী ভাষায়। কাঠগড়ায় হাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন প্রায় ৫০ মিনিট। কখনও প্রার্থনা করার মতো দু’হাতের আঙুল

Advertisement

একটার মধ্যে একটা জড়িয়ে রাখলেন। কখনও মুখ মুছলেন। দু’এক বার মুখ ঘুরিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের আইনজীবী গুঞ্জন মঙ্গলাকে কিছু বললেন। ঘোমটার ফাঁকে তখনই এক ঝলক দেখা গেল তাঁর বড় বড় চোখের পাতা, নাকের কিছুটা অংশ।

ছোট আদালত কক্ষে ভ্যাপসা গরম। এক বার ওড়নাটা সরাতে গেলেন ইন্দ্রাণী। সঙ্গে সঙ্গেই পাশে দাঁড়ানো মহিলা পুলিশকর্মী ঘোমটা টেনে দিলেন। ইন্দ্রাণী বাকি সময়টা দাঁড়িয়ে রইলেন মুখ ঢেকেই।

ইন্দ্রাণীর পিছন দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন অন্য দুই অভিযুক্ত— তাঁর গাড়িচালক শ্যাম রাই ও প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব খন্না। এই দু’জনের মুখ অবশ্য ঢাকা ছিল কালো কাপড়ের ঠুলিতে। চোখ ও নাকের কাছে ফুটো করা। ফলে ইন্দ্রাণীর মুখচোখ যেটুকু দেখা যাচ্ছিল, সঞ্জীবদের দেখে সেটুকুও ঠাওর করার উপায় নেই। ইন্দ্রাণী অবশ্য তাঁদের দিকে একেবারেই দেখছিলেন না।

সরকারি আইনজীবী অভিযোগ করলেন— তদন্তে একেবারেই সহয়োগিতা করছেন না ইন্দ্রাণীরা। তাঁকে নতি স্বীকার করানো ‘দুঃসাধ্য কাজ’— এমন মন্তব্যও করলেন। ও দিকে, ইন্দ্রাণীর পুলিশি হেফাজতের বিরোধিতা করলেন তাঁর আইনজীবী গুঞ্জন। মিডিয়া ব্যারন পিটারের স্ত্রী গোটাটাই শুনলেন। এবং একটি বারের জন্যও বিচলিত হতে দেখা গেল না তাঁকে। শুনানির একেবারে শেষ প্রান্তে এসে এক বার শুধু ইন্দ্রাণী বললেন, ‘‘আমাকে একটা কাগজ-কলম দেওয়া যাবে?’’ তক্ষুনি চুপ করিয়ে দিলেন পাশে দাঁড়ানো মহিলা পুলিশটি।

কিছু কি বলতে চাইছিলেন ইন্দ্রাণী? জানা যায়নি। পরে গুঞ্জনকে সে কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি সাংবাদিককে বলে উঠলেন, ‘‘আপনাকে সে কথা বলব কেন?’’ সওয়াল-জবাব শেষে আরও দু’দিনের পুলিশ হেফাজতেরই নির্দেশ দিলেন বান্দ্রা আদালতের বিচারক চাঁদ ঘড়ি। তত ক্ষণে কোর্ট চত্বরে ঘুরছে নানা জল্পনা। কাল, রবিবার কি ইন্দ্রাণী-সঞ্জীবদের ফের নিয়ে যাওয়া হবে রায়গড় জেলার পেন থানা এলাকার সেই জঙ্গলে? তার চেয়েও বড় কথা, সোমবারের পরে কি ইন্দ্রাণীদের আর হেফাজতে পাবে পুলিশ? নাকি এ বার জেলেই যাবেন একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ চ্যানেল কর্ত্রী?

শুনানি শেষে কোর্টের ভিড় ঠেলে ইন্দ্রাণীদের গাড়িতে তুলে দিল পুলিশ। আপাতত গন্তব্য সেই খার থানা। যেখানে অপেক্ষা করে রয়েছে তদন্তকারীদের প্রশ্নবাণ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement