কঠিন পরীক্ষা সংসদে, রাহুলের ঢাল খার্গে

রাহুল গাঁধীকে চাইছিলেন অনেকেই। কিন্তু সে সব ‘শুভার্থীর’ কথা শুনলেন না সনিয়া গাঁধী। লোকসভার বিরোধী নেতা হিসেবে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খার্গের নাম আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে দিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। সংসদীয় রীতিনীতি সম্পর্কে খার্গে অভিজ্ঞ নেতা। কর্নাটক বিধানসভায় এক সময় বিরোধী দলনেতা ছিলেন তিনি। পরে কেন্দ্রে শ্রম ও রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলান। কংগ্রেস নেতাদের মতে, বিরোধী নেতা হিসেবে এমন এক জনকে বেছে নেওয়া হল যাঁর পক্ষে হাইকম্যান্ডকে বিপাকে ফেলার সম্ভাবনা বিশেষ নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৪ ০৩:০৭
Share:

রাহুল গাঁধীকে চাইছিলেন অনেকেই। কিন্তু সে সব ‘শুভার্থীর’ কথা শুনলেন না সনিয়া গাঁধী। লোকসভার বিরোধী নেতা হিসেবে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খার্গের নাম আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে দিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী।

Advertisement

সংসদীয় রীতিনীতি সম্পর্কে খার্গে অভিজ্ঞ নেতা। কর্নাটক বিধানসভায় এক সময় বিরোধী দলনেতা ছিলেন তিনি। পরে কেন্দ্রে শ্রম ও রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলান। কংগ্রেস নেতাদের মতে, বিরোধী নেতা হিসেবে এমন এক জনকে বেছে নেওয়া হল যাঁর পক্ষে হাইকম্যান্ডকে বিপাকে ফেলার সম্ভাবনা বিশেষ নেই।

কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন বিরোধী দলনেতা পদের দায়িত্ব নিতে চাইলেন না রাহুল? সনিয়া নিজেই বা কেন সেই দায়িত্ব নিলেন না?

Advertisement

কংগ্রেসের তরফে এ সব প্রশ্নের কোনও উত্তর আজ দেওয়া হয়নি। তবে সনিয়া-রাহুলের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে খুব একটা বিস্মিত নন দলের অনেকেই। দশ নম্বর জনপথ ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক নেতা জানান, অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল ঠিকই। কিন্তু সেই সরকার ছিল শরিক নির্ভর। তাই সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তখন বিরোধী নেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন সনিয়া। বিরোধীদের মতকে অগ্রাহ্য করা বাজপেয়ীর পক্ষেও অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়নি।

ওই নেতার মতে, এ বার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিজেপি একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। সনিয়া বুঝতে পারছেন, লোকসভায় এ বার বিরোধী দলনেতার কাজ সহজ নয়। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সওয়াল করা রাহুলের পক্ষে সম্ভব হবে না। তা ছাড়া বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সংসদে রাহুলকে আরও কোণঠাসা করতে সচেষ্ট হবে বিজেপি। মা হয়ে ছেলেকে সেই বিপদের মুখে ঠেলে দিতে চাননি সনিয়া। বরং লোকসভায় রাহুলের জন্য একটা ঢালই খুঁজছিলেন তিনি।

কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতার কথায়, শারীরিক অসুস্থতার কারণে সনিয়া এমনিতেই দশ বছর আগের মতো সক্রিয় নন। আর লোকসভা ভোটে মোদী যে ভাবে গাঁধী পরিবারকে আক্রমণ করেছেন তাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সনিয়ার সম্পর্ক সহজ হওয়াও মুশকিল। এই বিষয়টি রাহুলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অথচ লোকসভার বিরোধী দলনেতা পদে থাকলে সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বার বার কথা বলতে হয়। কক্ষ সমন্বয় করতে হয়। কিন্তু মোদী বাজপেয়ী নন। ফলে সনিয়া বা রাহুলের পক্ষে এই সমন্বয় রক্ষা অস্বস্তিকর হতে পারে।

অন্য দিকে রাহুল শিবিরের নেতারা বলছেন, লোকসভার বিরোধী দলনেতা হলে রাহুলকে সংসদে অনেক বেশি সময় দিতে হবে। কিন্তু লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর এখন সংগঠনে সময় দেওয়া বেশি জরুরি বলে মনে করছেন তিনি। তা ছাড়া এ বারের ভোটে দেশের ‘মুড’ বুঝে রাহুল এও দেখাতে চাইছেন যে তিনি গাঁধী পরিবারের হাতে সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার পক্ষে নন।

তবে অনেকের মতে, রাহুল এই ঝুঁকিটা নিতেই পারতেন। অন্তত সংসদে গঠনমূলক বিরোধী নেতার ভূমিকা পালন করে তিনি তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা দেশের সামনে তুলে ধরতে পারতেন।

কিন্তু রাহুল বা সনিয়া যে সে পথে হাঁটতে চাইছেন না, তা আগেই আঁচ করেছিলেন কমল নাথ ও বীরাপ্পা মইলির মতো নেতারা। আর তাই তাঁরাই সেই পদ দখলের জন্য দৌত্য শুরু করেছিলেন। কংগ্রেস সূত্রে খবর, কমল নাথ বিরোধী দলনেতা হোন, তা দিগ্বিজয় সিংহ বা জয়রাম রমেশের মতো নেতারা চাইছিলেন না। আর সেই কারণেই তাঁরা বার বার রাহুলের নাম তুলে ধরছিলেন। দিগ্বিজয়-রমেশদের মতে, কমল নাথের কিছু বন্ধু নরেন্দ্র মোদীরও ঘনিষ্ঠ। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, কংগ্রেস নেতৃত্বকে না জানিয়ে কমল নাথ রফা করে ফেলতে পারেন শাসক দলের সঙ্গে। সেই তুলনায় মল্লিকার্জুন সম্পর্কে আশঙ্কা কম। তা ছাড়া দক্ষিণের এক জন নেতাকে লোকসভার বিরোধী দলনেতা করার ব্যাপারে দাবিও ছিল দেশের ওই প্রান্ত থেকে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, মল্লিকার্জুন খার্গেকে বিরোধী দলনেতা করে লোকসভায় কতটা সুবিধা করতে পারবে কংগ্রেস। মনমোহন জমানায় সুষমা স্বরাজ বিরোধী দলনেতা হিসেবে আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছিলেন। মল্লিকার্জুন ততটা কার্যকরী হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে কিছু কংগ্রেস নেতাই। দলের এক সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, “সনিয়া-রাহুল বিরোধী দলনেতা হতে না চাইলে আর কাকেই বা সেই দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।” তাঁর কথায় “বর্ষীয়ানদের বাদ দিয়ে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে তো বিরোধী দলনেতা করা যায় না! না হলে সিন্ধিয়া হয়তো সেরা পছন্দ হতে পারতেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন