ঘুষ নিয়ে বাড়তি কামরা ট্রেনে, সিবিআইয়ের জালে রেল-কর্তা

এক পর্যটন সংস্থাকে অবৈধ ভাবে বাড়তি সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হলেন রেলবোর্ডের এক কর্তা। রেল সূত্রে খবর, ট্রাফিক ও কমার্শিয়াল দফতরের অধিকর্তা (কোচিং) রবিমোহন শর্মা হাওয়ালার মাধ্যমে একটি পর্যটন সংস্থার কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। বিনিময়ে ওই সংস্থাকে সুরাত থেকে হরিদ্বারগামী একটি ট্রেনে পর্যটক নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়তি কোচের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৫
Share:

এক পর্যটন সংস্থাকে অবৈধ ভাবে বাড়তি সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হলেন রেলবোর্ডের এক কর্তা। রেল সূত্রে খবর, ট্রাফিক ও কমার্শিয়াল দফতরের অধিকর্তা (কোচিং) রবিমোহন শর্মা হাওয়ালার মাধ্যমে একটি পর্যটন সংস্থার কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। বিনিময়ে ওই সংস্থাকে সুরাত থেকে হরিদ্বারগামী একটি ট্রেনে পর্যটক নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়তি কোচের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

রেলমন্ত্রক সূত্রের খবর, কোনও ট্রেনে অপেক্ষমাণ তালিকায় যাত্রীর সংখ্যা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তবেই রেলের বিভিন্ন জোনের বাণিজ্যিক বিভাগ কোচিং দফতরের কাছে ওই অতিরিক্ত কামরার জন্য আবেদন জানায়। অনেক ট্রেনে আবার অতিরিক্ত কামরা জোড়া যায় না। রেলের নিয়ম, যে সব ট্রেনে ইতিমধ্যেই ২৪ কামরা রয়েছে সেখানে আর অতিরিক্ত কামরা জোড়া হয় না। কারণ, ট্রেনের দৈর্ঘ্য বেড়ে গেলে সিগন্যাল ও প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোয় সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু রেল বোর্ডের আধিকারিক বলে ওই কর্তার হাতে ভিড় সামলাতে কোনও ট্রেনে বাড়তি কোচ দেওয়া হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। শর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর পদের অপব্যবহার করে ‘কুলিন কুমার হলিডে’ নামে একটি সংস্থাকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন।

রেল সূত্র বলছে, সুরাত থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত পর্যটক নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়তি কোচের আবেদন জানিয়েছিল অনেকগুলি সংস্থা। শর্মা অন্যান্য সংস্থার আবেদনকে উপেক্ষা করে ‘কুলিন কুমার সংস্থা’র আবেদনকে প্রাধান্য দিয়ে অবৈধ ভাবে ওই সংস্থার জন্য বাড়তি কোচের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। অবৈধ ভাবে ২৪ কামরার ট্রেনে আরও বেশি কামরা লাগানোর ফলে শেষের দিকের কামরাগুলো প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে যায়। অসুবিধায় পড়েন যাত্রীরা। সিগন্যালেও সমস্যা হয়। সিবিআই সূত্রে খবর, ওই পর্যটন সংস্থার কাছ থেকে হাওলার মাধ্যমে টাকা নেন শর্মা। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি করার সময় জল যাওয়ার পাইপ ভেঙে ওই টাকা উদ্ধার করা হয়। শুক্রবারও ওই ব্যক্তির বাড়িতে এক দফা তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

যে অপরাধে শর্মাকে গ্রেফতার করল সিবিআই, সেই অপরাধ পূর্ব রেলেও হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে পূর্ব রেলের রাজধানী ও পদাতিক এক্সপ্রেসে অবৈধ ভাবে কামরা জুড়ে সেটি আবার এক ভ্রমণ সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়। রেলের কর্মীদের কাছ থেকে ওই সুবিধা পেয়ে ওই ভ্রমণ সংস্থা গঙ্গাবক্ষে রেলের কর্তাদের একাংশকে নিয়ে নৈশ ভোজের ব্যবস্থা করেছিল। এ ভাবে বেশ কিছু দিন চলার পরে সেটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তখন তড়িঘড়ি ওই বিষয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। রেলের ভিজিল্যান্স ওই ঘটনা জানলেও তদন্ত না করায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।

তবে মন্ত্রকের অন্য একটি সূত্রের মতে, ওই সংস্থার হয়ে এক বিজেপি সাংসদ রেলের এক শীর্ষ কর্তার কাছে সুপারিশ করেছিলেন। তারপরেই ওই সংস্থাকে বাড়তি সুবিধা দিতে তৎপর হন কোচিং দফতরের কর্তারা। মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই সংক্রান্ত ফাইলে শর্মা ছাড়াও তাঁর থেকেও উচ্চপদস্থ আধিকারিদের স্বাক্ষর রয়েছে। ফলে আগামী দিনে তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ভাবছেন সিবিআই কর্তৃপক্ষ। গোটা বিষয়টির সঙ্গে একেবারে শীর্ষ স্তরের অফিসারদের কোনও সুপারিশ ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখছে সিবিআই।

তবে রেল বোর্ডের কর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পিছু ছাড়ছে না। গত বছরই চাহিদা মতো নিয়োগের জন্য বিপুল পরিমাণে অর্থ ঘুষ দিতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন রেল বোর্ডের সদস্য (কর্মিবর্গ) মহেশকুমার। মহেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, রেল বোর্ডের সদস্য হওয়ার জন্য অর্থ তো তিনি দিয়েছিলেনই, একই সঙ্গে পরবর্তী পদোন্নতিতে তিনি যাতে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান হতে পারেন, তার জন্য তৎকালীন রেলমন্ত্রী পবন বনশলের ভাগ্নেকে ঘুষ দিতে চণ্ডীগড়ে উড়ে যান মহেশ। সেখানেই ঘুষ দেওয়ার সময় তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। যে ঘটনার জেরে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব খোয়াতে হয় বনশলকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন