চিনকে রুখতে জাপানকে অস্ত্র করবে নয়াদিল্লি

অরুণাচলপ্রদেশ-সহ দেশের উত্তরপূর্ব সীমান্তে বেজিংয়ের অতিসক্রিয়তা কমাতে জাপানি সহযোগিতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চলেছে নয়াদিল্লি। জাপানের বিদেশমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সদ্যসমাপ্ত ভারত সফরে এই কৌশল রচিত হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে। ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য শরিক চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অগ্রসর ঘটানো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা তিনি করতে চাইছেন ড্রাগনের চোখে চোখ রেখে। তাই এক দিকে সার্কভূক্ত দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দেওয়ার একটি কৌশল রচনা করছে মোদী সরকার।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২১
Share:

অরুণাচলপ্রদেশ-সহ দেশের উত্তরপূর্ব সীমান্তে বেজিংয়ের অতিসক্রিয়তা কমাতে জাপানি সহযোগিতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চলেছে নয়াদিল্লি। জাপানের বিদেশমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সদ্যসমাপ্ত ভারত সফরে এই কৌশল রচিত হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য শরিক চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অগ্রসর ঘটানো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা তিনি করতে চাইছেন ড্রাগনের চোখে চোখ রেখে। তাই এক দিকে সার্কভূক্ত দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দেওয়ার একটি কৌশল রচনা করছে মোদী সরকার। অন্য দিকে আবার, জাপানকে আরও বেশি করে দেশের স্পর্শকাতর এলাকার উন্নয়নে সামিল করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। গতকাল জাপানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে সবিস্তার আলোচনা করেছেন ভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্ব।

গতকালের বৈঠকে জাপানের পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তাব নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। খুব শীঘ্রই সেগুলো রূপায়িত করতে চান নরেন্দ্র মোদী। যার মধ্যে প্রথমটি হল, ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পে সরাসরি হাত লাগাবে টোকিও। আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি শক্তিক্ষেত্রে একটি নেটওয়ার্ক-ও গড়া হবে ভারত এবং জাপানের যৌথ অংশিদারিত্বে। ভারতের সাহায্য নিয়ে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতেও উৎসাহ দেখিয়েছে জাপান। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স’-এ দেওয়া একটি বক্তৃতায় কিশিদা বলেছেন, “সার্কভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে শক্তিক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক স্থাপনে উৎসাহী জাপান সরকার। এর ফলে আঞ্চলিক সংযুক্তিকরণের রাস্তা প্রশস্ত হবে। সার্ক এবং আসিয়ানভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো হলে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর উন্নয়ন প্রকল্প শক্তিশালী হবে।” সূত্রের খবর, জাপানের এই প্রস্তাবকে শুধু স্বাগত জানানোই নয়, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ইতিমধ্যেই কিশিদার সঙ্গে সম্ভাব্য প্রকল্পগুলো নিয়ে এক দফা আলোচনাও সেরে নিয়েছেন।

Advertisement

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ভারত এবং জাপানের এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছে চিনকে মোকাবিলা করার একটি সার্বিক নীতি। সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং ভারতকে সঙ্গে নিয়ে একটি অর্থনৈতিক করিডর তৈরি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বেজিং। বিষয়টি নিয়ে ভারত যথেষ্ট সন্দিগ্ধ। এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে চিনের এই প্রস্তাবে অসম্মতি না জানালেও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এই প্রকল্পের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দিকটি নিয়ে সন্দিহান। ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, চিনের প্রস্তাবিত ওই করিডর বাস্তবায়িত করার অর্থ, দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে কার্যত চিনের সামনে হাট করে খুলে দেওয়া। এমনিতেই ওই সব রাজ্য সন্ত্রাসবাদ এবং জাতিগত সংঘর্ষের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ওই অঞ্চলে চিনের গোপন আধিপত্যও নজরে আসতে শুরু করেছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের। ভারতের সীমাম্ত অঞ্চলে চিনের কৌশলগত পদক্ষেপ কমাতে এই এলাকায় যদি বিকল্প জাপানি করিডরকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তা নয়াদিল্লির জন্য সুবিধাজনক হবে বলেই মনে করছেন মোদী সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব।

জাপান এবং চিন পরস্পর বিবদমান দু’টি দেশই সার্কের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র। পাকিস্তান-সহ সার্কের কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে চাপ তৈরি করা হচ্ছে চিনকে পর্যবেক্ষক থেকে সার্কের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার জন্য। ভারত এই চাপের মোকাবিলা করে যাচ্ছে চিনের আগ্রাসী কূটনীতির কথা মাথায় রেখে। দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত প্রভাব বাড়াতে, চিন সার্কে ঢোকার জন্য এই মরিয়া চেষ্টা করছে এমনটাই মনে করছেন ভারতীয় কর্তারা। তবে জাপানের সঙ্গে প্রস্তাবিত উদ্যোগের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার আগে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হইচই শুরু হয় বা বেজিং সতর্ক হয়ে যায়, এমনটা আদৌ চাইছেন না নয়াদিল্লি বা টোকিও দু’তরফের কর্তারাই। যে অরুণাচলপ্রদেশের ভূখণ্ড নিয়ে চিন সরব, সে রাজ্যে তাই প্রথমেই সরাসরি আর্থিক অনুদান দিয়ে গোটা অঞ্চলের নজর কাড়ারও ইচ্ছা নেই তাদের। এ ব্যাপারে কিশিদার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে সুষমার। পরে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কিশিদা বলেন, “ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে অরুণাচল রাজ্যটি ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যেই অবস্থিত। চিনের সঙ্গে এই নিয়ে ভারতের মতবিরোধও রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে ওই রাজ্যকে কোনও আর্থিক অনুদান দেওয়ার পরিকল্পনা আমাদের নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন