জলকামানের মুখে বিজেপি-র মহিলা মোর্চার বিক্ষোভ মিছিল। সোমবার লখনউয়ে। ছবি: পিটিআই
দুই দলিত মেয়ের ধর্ষণের ঘটনায় যখন তোলপাড় গোটা দেশ, ঠিক তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়ে দিল চারটি ঘটনা। এ বার শিরোনামে মেরঠ, বরেলী, মুজফ্ফরনগর এবং রামপুর।
বদায়ূঁর মতোই নৃশংস ঘটনার খবর মিলেছে বরেলী থেকে। সেখানকার বহেরি এলাকায় ২২ বছরের এক তরুণীকে গণধর্ষণের পরে জোর করে অ্যাসিড খাইয়ে গলা টিপে খুন করা হয়েছে। শনিবারের এই ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে আজ। আতপুরা গ্রামের একটি মাঠ থেকে শনিবার নির্যাতিতার দেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর মুখ বিকৃত হয়ে গিয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর উপরে অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছিল। তার পেটে অ্যাসিড মিলেছে। যা থেকে পুলিশের ধারণা, মেয়েটিকে জোর করে অ্যাসিড খাওয়ানো হয়েছিল। মৃত্যু সুনিশ্চিত করতে তার গলা টিপে খুন করে ধর্ষকরা। নির্যাতনের এখানেই শেষ নয়। মেয়েটিকে যাতে শনাক্ত না করা যায়, তার জন্য তাঁর মুখে অ্যাসিড এবং পেট্রোল ঢেলে দিয়ে যায় তারা।
মুজফ্ফরনগরে দ্বিতীয় ঘটনায় একই পরিবারের দুই বোনকে উত্যক্ত করার পরে এক জনের উপরে গুলি চালিয়েছে তিন দুষ্কৃতী। গত কাল ওই তিন জনই ছোট বোনকে উত্যক্ত করছিল। মেয়েটির বাবা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। তা জানতে পেরেই ওই তিন জন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয় পরিবারটিকে। তারা রাজি না হওয়ায় এ বার দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য হয় বড় বোন। তাঁকে হেনস্থার পরে গুলি মারে দুষ্কৃতীরা। গুরুতর জখম ওই তরুণী এখন হাসপাতালে ভর্তি। তিন অভিযুক্ত শাবাব, জাভেদ এবং মিন্টুর মধ্যে প্রথম দু’জনকে গ্রেফতার করা হলেও তৃতীয় জন পলাতক।
মাস তিনেক আগে মেরঠের গঙ্গানগরে দশ বছরের একটি মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল। আজ তাকেই অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা। মেয়েটির বাড়ির বাইরে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গত কাল বাড়ির কাছেই সে খেলছিল। তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় দু’তিন জন। দু’জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি এবং সুনীতা নামে এক মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে মেয়েটির পরিবার। সুনীতা এক অভিযুক্তের মা। তার ছেলে আবার ওই নাবালিকা ধর্ষণে জড়িত বলে পুলিশের দাবি। গত কাল মেয়েটিকে অপহরণের ক্ষেত্রেও সুনীতারও হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত ১৮ মার্চ সুনীতার ছেলে অরবিন্দ এবং আরও দু’জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ওই নাবালিকাকে তুলে নিয়ে গিয়ে গঙ্গানগরের একটি হস্টেলে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। অরবিন্দকে দু’দিন পরে গ্রেফতার করা হয়। বাকি দু’জন এখনও অধরাই। গণধর্ষণের মামলা তুলে নেওয়ার জন্যই মেয়েটিকে আবার অপহরণ করা হয়েছে বলে মনে করছে নাবালিকার পরিবার। তাদের দাবি, আরও কয়েক জন দুষ্কৃতী মেয়েটিকে কিছু দিন আগে গাড়ি চাপা দিয়ে মারতে চেয়েছিল। কিন্তু কোনওমতে প্রাণে বেঁচে যায় সে। তবে ভেঙে যায় তার পা।
গোটা রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা তাই প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রশ্নের মুখে। এর মধ্যে দেখা গিয়েছে, গত বছর ডিসেম্বর থেকে এ বছর মার্চের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের রামপুরে ঘটে যাওয়া তিনটি গণধর্ষণের ঘটনা জেলা পুলিশ নথিভুক্ত করেছে এত দিনে। তা-ও আবার আদালতের হস্তক্ষেপের পরে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন এত দেরি হল, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি জেলাপুলিশ প্রধান।