রাষ্ট্রপতিকে বোঝালেন অর্থমন্ত্রী

জমি অর্ডিন্যান্সে কেন্দ্রের ব্যাখ্যা তলব প্রণবের

কেন্দ্রে সরকার গঠনের সাত মাসের মধ্যে আটটি অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) অনুমোদন করেছে নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভা। তার মধ্যে রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে নির্বিঘ্নেই বেরিয়ে গিয়েছে সাতটি। কিন্তু গোল বাধল অষ্টমে! এই প্রথম কোনও অর্ডিন্যান্সে সই করার আগে ব্যাখ্যা চাইলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১১
Share:

কেন্দ্রে সরকার গঠনের সাত মাসের মধ্যে আটটি অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) অনুমোদন করেছে নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভা। তার মধ্যে রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে নির্বিঘ্নেই বেরিয়ে গিয়েছে সাতটি। কিন্তু গোল বাধল অষ্টমে! এই প্রথম কোনও অর্ডিন্যান্সে সই করার আগে ব্যাখ্যা চাইলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত বর্তমান আইন সংশোধনের জন্য গত সোমবার একটি অর্ডিন্যান্সে অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সইয়ের জন্য প্রস্তাবটি সে দিন রাতেই পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাইসিনা পাহাড়ে। কিন্তু সূত্রের খবর, প্রস্তাবটি পড়ে দেখার পর সরকারের কাছে তার ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠান রাষ্ট্রপতি। সে কথা প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে জানিয়েও দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে। এর পরেই অর্ডিন্যান্স জারির কার্যকারণ বোঝাতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান প্রধানমন্ত্রী। জেটলির সঙ্গে যান কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া এবং সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পরে গত কাল সন্ধ্যায় অর্ডিন্যান্সে সই করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

কী ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি?

Advertisement

সরকারি ভাবে তা অবশ্য জানানো হয়নি। তবে রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্র বলছে, জমি আইন সংশোধন করতে সরকার জরুরি ভিত্তিতে অধ্যাদেশ জারি করার ঠিক যে কারণ দেখাচ্ছে, তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রণববাবু। মন্ত্রিসভায় অর্ডিন্যান্সটি অনুমোদনের পর জেটলি বলেছিলেন, মনমোহন সিংহের আমলে পাশ হওয়া জমি আইনে বলা ছিল, রেল, সড়ক-সহ ১৩টি ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত পৃথক যে আইন রয়েছে, সেখানে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের শর্ত এক বছরের মধ্যে মূল আইনের সমতুল করতে হবে। সেই এক বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। তাই অর্ডিন্যান্স জারি করতে হল। কিন্তু অনেকেই বলছেন, এটা অপযুক্তি। তাঁদের বক্তব্য, এর জন্য একটি সরকারি নোটিফিকেশনই যথেষ্ট ছিল। আসলে ১৩টি ক্ষেত্রের পৃথক আইনকে অজুহাত করে সংসদকে এড়িয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করে জমি আইনকে রাতারাতি লঘু করে দিল মোদী সরকার।

অর্থ মন্ত্রক সূত্র বলছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে জমি সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্সের কার্যকারণ ব্যাখ্যা করেছেন জেটলি। তিনি রাষ্ট্রপতিকে এও বুঝিয়েছেন, প্রশাসনিক ভাবে নোটিফিকেশন জারি করলে চলতো না। সংসদে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পরে পাশ না করালে ৩১ ডিসেম্বরের পর জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে রেল বা সড়ক বিভাগের কর্তারা আইনত গ্রেফতারও হতে পারতেন। তাই অধ্যাদেশ জারি করা জরুরি ছিল। জেটলি এও বলেন, বর্তমান জমি আইনে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এতটাই জটিল যে থমকে যাচ্ছে উন্নয়ন প্রক্রিয়া। তাঁর দাবি, জমি অধিগ্রহণ আইনের ফাঁসে প্রায় তিন লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে।

বস্তুত সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার ব্যাপারে প্রণববাবু বরাবরই রক্ষণশীল। সংসদকে এড়িয়ে ঘন ঘন অর্ডিন্যান্স জারি কোনও দিনই সমর্থন করেননি একদা রাজনীতিক প্রণব। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, সংসদের অধিবেশনের দিন একবার ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর যদি সরকার তথা মন্ত্রিসভা কোনও অর্ডিন্যান্সে অনুমোদন দেয়, তা হলে তিনি তাতে সই করবেন না। মনমোহন জমানাতেও এক বার এ রকম ঘটেছিল। মন্ত্রিসভার যে বৈঠকে সংসদের অধিবেশনের দিন নির্ধারিত হয়, সেই বৈঠকেই সেবি আইন সংশোধন অর্ডিন্যান্সে অনুমোদন দেয় সরকার। অসন্তুষ্ট প্রণব প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত ডেকে পাঠিয়েছিলেন। প্রথম সাক্ষাতে মোদীকে সেই ঘটনার কথা জানিয়েও দেন তিনি। সেই সঙ্গে এও জানিয়ে দেন, কোনও বিষয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করা হলে তার কার্যকারণ দেখিয়ে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে হবে। না হলে তিনি তাতে সই করবেন না।

ঘটনা হল, রাষ্ট্রপতি একবার অর্ডিন্যান্স ফিরিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু সরকার ফের সেই প্রস্তাব তাঁর কাছে পাঠালে, সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী তিনি তাতে সই করতে বাধ্য। সূত্রের খবর, প্রথম সাক্ষাতেই প্রধানমন্ত্রী প্রণববাবুকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, অর্ডিন্যান্স অনুমোদন করার আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মন্ত্রী গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে কার্যকারণ ব্যাখ্যা করবেন।

সম্প্রতি একাধিক অর্ডিন্যান্স অনুমোদনের ঘটনায় সে রকমই ঘটছিল। সরকারের সুষ্ঠু সহযোগিতায় খুশি ছিলেন রাষ্ট্রপতিও। কিন্তু জমি অর্ডিন্যান্সের ক্ষেত্রে সমস্যা হল, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নিজেই বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে ছিলেন! যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, তা প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি মিলেই নিয়েছেন। তাই অর্ডিন্যান্স অনুমোদনের আগে বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কেউ কথা বলেননি। তবে জেটলির সঙ্গে বৈঠকের পর সরকারের যুক্তি-তর্কে সন্তুষ্ট হয়ে রাষ্ট্রপতি প্রস্তাবটিতে সই করে দেন।

অস্বস্তি কাটে সরকারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন