জয়ার জামিনে আগাম দীপাবলি তামিলনাড়ুতে

হতাশ করেছিল হাইকোর্ট। কিন্তু শীর্ষ আদালতে অবশেষে জামিন পেলেন আম্মা। তাই তামিলনাড়ুতে দীপাবলির আগেই দীপাবলি উদ্যাপন শুরু করলেন এডিএমকে সমর্থকেরা। সেপ্টেম্বরের শেষে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় জয়ললিতা গ্রেফতার হওয়ার পরে আশা-নিরাশার দ্বন্দ্বে দুলেছেন তাঁর সমর্থকেরা। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন মেনে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন নেত্রী। বিশ্বস্ত সৈনিকের মতো সেই দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন ও পনিরসেলভম। কিন্তু বার বারই আদালতের দিকে তাকিয়ে আম্মার মুক্তির প্রার্থনা করেছেন তাঁরা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি ও চেন্নাই শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৫
Share:

নেত্রীর জামিনের পরে সমর্থকদের উল্লাস। শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে, সেন্ট্রাল জেলের সামনে। ছবি: পিটিআই।

হতাশ করেছিল হাইকোর্ট। কিন্তু শীর্ষ আদালতে অবশেষে জামিন পেলেন আম্মা। তাই তামিলনাড়ুতে দীপাবলির আগেই দীপাবলি উদ্যাপন শুরু করলেন এডিএমকে সমর্থকেরা।

Advertisement

সেপ্টেম্বরের শেষে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় জয়ললিতা গ্রেফতার হওয়ার পরে আশা-নিরাশার দ্বন্দ্বে দুলেছেন তাঁর সমর্থকেরা। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন মেনে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন নেত্রী। বিশ্বস্ত সৈনিকের মতো সেই দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন ও পনিরসেলভম। কিন্তু বার বারই আদালতের দিকে তাকিয়ে আম্মার মুক্তির প্রার্থনা করেছেন তাঁরা।

৭ অক্টোবর কর্নাটক হাইকোর্টে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি জয়ললিতার জামিনের বিরোধিতা করেননি। ফলে আশা জেগেছিল সমর্থকদের মনে। কিন্তু তাতে জল ঢেলে জামিনের আর্জি খারিজ করে হাইকোর্ট। মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে।

Advertisement

ঘটনাচক্রে আজই এডিএমকে-র প্রতিষ্ঠা দিবস। তবে গম্ভীর মুখেই দিনটি শুরু করেছিলেন দলীয় নেতা-সমর্থকরা। চেন্নাইয়ে দলের সদর দফতরে দলীয় পতাকা তোলা হয়। মালা দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠাতা এম জি রামচন্দ্রনের মূর্তিতে। কিন্তু কালো পোশাক পরে অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন সমর্থকেরা। নেত্রীর জেলবাসের কথা মাথায় রেখে দাড়ি রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভাম ও অন্য কয়েক জন শীর্ষ নেতা। রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তেও রামচন্দ্রনের মূর্তিতে মালা দেওয়ার পাশাপাশি জয়ললিতার মুক্তির জন্য প্রার্থনা জানান নেতা-কর্মীরা। ততক্ষণে সুপ্রিম কোর্টে শুরু হয়ে গিয়েছে জামিনের আর্জির শুনানি।

হাইকোর্টে জয়ললিতার হয়ে সওয়াল করেছিলেন রাম জেঠমলানী। তবে আজ শীর্ষ আদালতে তাঁর কৌঁসুলি হিসেবে হাজির হন ফলি এস নরিম্যান। জয়ললিতাকে জামিন দিতে প্রথমে খুব একটা উৎসাহ দেখায়নি প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তুর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। বিচারপতিরা জানান, বছরের পর বছর ধরে নানা কায়দায় এই মামলার শুনানি পিছিয়ে দিয়েছেন এডিএমকে নেত্রী। এখন তিনি জামিন পেলে দু’দশকেও মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে না। বিচারটা খেলা নয়।

নরিম্যান বলেন, “আগে হয়তো বিচার নিয়ে খেলা হয়েছে। কিন্তু আমি হলফনামা দিয়ে বলতে পারি আর খেলা হবে না।” বেঞ্চ জানতে চায়, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কর্নাটক হাইকোর্টে আপিলের পুরো নথি জমা দিতে কত সময় লাগবে। দু’মাসের মধ্যেই নরিম্যান তা দিতে পারবেন শুনে বেঞ্চ জানায়, দু’মাসের মধ্যে হাইকোর্টে নথি জমা না পড়লে জয়ললিতা আর এক দিনও সময় পাবেন না। হাইকোর্টকে তিন মাসের মধ্যে মামলার ফয়সালা করার নির্দেশ দেবে শীর্ষ আদালত।

জামিন পেতে এমনই মরিয়া হন জয়ললিতা যে, জেলের বাইরে একটি বাড়িতে ২-৩ মাস বন্ধ থাকতেও রাজি আছেন বলে আর্জিতে জানান তিনি। বেঞ্চ জানায়, এমন ‘অদ্ভুত’ নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি হয় জামিন পাবেন, নয় পাবেন না। জামিনের নির্দেশ দেওয়ার পরে বেঞ্চ জানায়, তিনি তামিলনাড়ুতে গিয়ে সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।

জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেন মামলার আবেদনকারী সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তিনি বলেন, “এ বার ওঁর সমর্থকেরা রাজ্যে গোলমালও করতে পারে।” সঙ্গে সঙ্গে বেঞ্চ জানায়, সমর্থকরা গোলমাল করলে কোর্ট কড়া পদক্ষেপ করবে। বেঙ্গালুরুর জেল থেকে দেওয়া প্রথম বিবৃতিতে জয়ললিতাও তাঁর সমর্থকদের শান্তি বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের রায়ের সমালোচনা না করতেও বলা হয়েছে।

জয়ললিতার জামিনের খবর আসতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন দলীয় কর্মীরা। গোটা রাজ্যেই শুরু হয় নাচানাচি, বাজি পোড়ানো। কালো পোশাকও পুড়িয়ে দেন অনেকে। নেত্রীর সঙ্গেই জামিন পেয়েছেন মামলার অন্য তিন অভিযুক্ত শশীকলা, ভি এন সুধাকরণ ও ইলাভারসি। প্রাক্তন অভিনেত্রী শশীকলা জয়ললিতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ভি এন সুধাকরণ তাঁর পালিত পুত্র। অবশ্য পরে সুধাকরণের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন জয়া। তৃতীয় অভিযুক্ত ইলাভারসিও অভিনেত্রী। তাঁর সঙ্গে জয়ার আত্মীয়তা আছে। কারাদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে জয়ার ১০০ কোটি ও বাকি তিন জনের ১০ কোটি করে জরিমানা ধার্য করেছিল নিম্ন আদালত। তাও স্থগিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।

সমর্থকদের আশ্বস্ত করে আগামিকাল জয়া জেলের বাইরে পা রাখবেন বলে জানান তাঁর আইনজীবীরা। কারণ, আইনি প্রক্রিয়া শেষ হতে আগামিকাল ভোর হয়ে যাবে। তার পর রাজনৈতিক-আইনি লড়াই চালাতে হবে তাঁকে। সমর্থকেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা আম্মার সঙ্গে আছেন। তাঁদের জয় হবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন