ত্রিপুরার ভোটের লড়াইয়ের মূল প্রশ্ন দ্বিতীয় স্থানে কে

ষোড়শ লোকসভার ভোটের সময় যতই ‘ফিনিশিং পয়েন্ট’-এর কাছাকাছি চলে আসছে, প্রাক্-নির্বাচনী সমীক্ষার নিরিখে জাতীয় রাজনীতিতে ততই ব্যবধান বাড়ছে বিজেপি ও কংগ্রেসের। ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ছে কংগ্রেস, কদম কদম এগিয়ে চলেছে গেরুয়া বাহিনী। কিন্তু উত্তরপূর্বের প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী রাজ্য ত্রিপুরার রাজনীতির ছবিটা একেবারেই উল্টো। শাসক দল এখানে সিপিএম, বিরোধী দল কংগ্রেস।

Advertisement

আশিস বসু

আগরতলা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৫:১৯
Share:

ষোড়শ লোকসভার ভোটের সময় যতই ‘ফিনিশিং পয়েন্ট’-এর কাছাকাছি চলে আসছে, প্রাক্-নির্বাচনী সমীক্ষার নিরিখে জাতীয় রাজনীতিতে ততই ব্যবধান বাড়ছে বিজেপি ও কংগ্রেসের। ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ছে কংগ্রেস, কদম কদম এগিয়ে চলেছে গেরুয়া বাহিনী। কিন্তু উত্তরপূর্বের প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী রাজ্য ত্রিপুরার রাজনীতির ছবিটা একেবারেই উল্টো। শাসক দল এখানে সিপিএম, বিরোধী দল কংগ্রেস। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের দু’টি আসনে সব থেকে আকর্ষণীয় লড়াই দ্বিতীয় স্থানের জন্য। শাসক দলের ভোটের ব্যবধান কমিয়ে কে ‘দ্বিতীয় স্থান’ দখল করবে এই লড়াইয়ে সামিল মূলত কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস।

Advertisement

বামফ্রন্ট তথা শাসক দলের বড় শরিক সিপিএম নিশ্চিত, দু’টো আসনে তাদের প্রার্থীই জিতছেন। প্রতিটি জনসভায় রাজ্য কমিটির সম্পাদক থেকে সদস্য, সকলের আবেদন, ‘‘আরও বেশি ভোটের ব্যবধানে বাম প্রার্থীদের জয়ী করুন।’’ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এক জনসভায় বলেছেন, ‘‘রাজ্যের বাম প্রার্থীদের জয় নিয়ে আমাদের কোনও সংশয় নেই। প্রশ্নটা অন্যত্র।’’ কী প্রশ্ন? এ প্রসঙ্গে তিনি এক বছর আগেকার ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটের ফলাফলের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৩ সালে বামফ্রন্ট রাজ্যের ৬০টির মধ্যে ৫০টি আসন পেয়েছে। কিন্তু রাজধানী আগরতলার বিধানসভা আসনগুলির অধিকাংশই বিরোধী কংগ্রেসের দখলে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আগরতলা ব্যতিক্রম কেন?’’ তাই রাজ্যের বাম নেতৃত্বের আবেদন, ‘‘বার বার শহরবাসী কংগ্রেসকে ভোট দিচ্ছেন কেন?’’

রাজ্যের দু’টি আসনই ১৯৯৬ সাল থেকে টানা সিপিএমের দখলে। সেই চিত্র বদলে দিতে ত্রিপুরায় বিরোধী শিবির কংগ্রেস মাঠে নেমেছে ‘ভোট ভিক্ষার’ আবেদন নিয়ে। বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সুদীপ রায়বর্মন দলীয় সমাবেশে বলছেন, ‘‘রাজ্যে বামফ্রন্ট থাকলেও, সংসদে কংগ্রেস প্রার্থীদেরই পাঠানো জরুরি।’’ জুজু হিসেবেই দেখানোর চেষ্টা করছেন বিজেপি-র ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’। বলছেন দেশের ঐক্য, সংহতি ও উন্নয়নের কথা।

Advertisement

ত্রিপুরার দু’টি আসনেই এ বার কার্যত ‘ত্রিমুখী’ লড়াই জমে উঠছে। সিপিএম, কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরাই লড়াইয়ের ময়দানে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। ‘ত্রিমুখী’ লড়াইয়ে রাজ্যে নবাগত তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্কে কংগ্রেস আশ্চর্য রকমের নীরব। যেন তৃণমূলকে তাঁরা গুরুত্বই দিচ্ছে না। তবে একান্তে একাধিক কংগ্রেস নেতা স্বীকার করছেন, “লোকসভায় তৃণমূল কত ভোট পায়, তা দেখার জন্য আমরাও মুখিয়ে আছি।” এ বারই প্রথম তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে ত্রিপুরায়। তবে লোকসভায় প্রার্থী দিলেও তাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য কিন্তু ২০১৮ সালে রাজ্যের পরবর্তী বিধানসভা ভোটের দিকেই। আপাতত তাঁদের লক্ষ্য, বিরোধী দল হিসেবে রাজ্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা। রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু’টি রাজনৈতিক জনসভা সেই দৌড়ে নিঃসন্দেহে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে। উজ্জীবিত রাজ্য নেতৃত্ব বার বার বলছেন, ‘‘ভোটা দাতারা যদি ঠিক মতো ভোট দিতে পারেন, তা হলে শাসক দল ও কংগ্রেস, উভয় শিবিরের উল্লেখযোগ্য সংখ্যার ভোট কাটবে তৃণমূল। এ বারেই পরিষ্কার হয়ে যাবে রাজ্যে বাম-বিরোধী শক্তি আসলে কে।’’

আর দেশে যারা এগিয়ে আছে রাজ্যে তাদের সাংগঠনিক শক্তি যে একেবারেই দুর্বল তা তাঁরা জানেন। তবে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের আশা, ত্রিপুরায় দলের জনপ্রিয়তা বাড়বে, শতাংশের হিসেবে ভোটও বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন