প্রতিরক্ষা গবেষণা উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও)-র প্রধানের পদ থেকে অবিনাশ চন্দ্রের হঠাৎ অপসারণ নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মুখ খুলল সরকার। বিষয়টি নিয়ে দেশ জুড়ে শোরগোল শুরু হওয়ার পর বুধবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর জানিয়ে দিলেন, তাঁর সুপারিশেই এই পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিয়োগ কমিটি।
নয়াদিল্লির সাংবাদিক বৈঠকে পর্রীকর বলেছেন, “আমরা চাইনি চুক্তির ভিত্তিতে কর্মরত কেউ এত বড় পদ আঁকড়ে থাকুক। দেশে যোগ্য লোকের অভাব নেই।” অপেক্ষাকৃত তরুণ কোনও বিজ্ঞানী, যাঁর মধ্যে উন্নয়নের খিদে রয়েছে, আগামী দিনে তেমনই কেউ ডিআরডিও-র দায়িত্ব নেবেন সংযোজন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর। অপসারণ নিয়ে অবিনাশকে অবশ্য এখনও কোনও নোটিস পাঠায়নি সরকার। অভ্যাসমতো বুধবারও অফিসে এসেছিলেন তিনি।
দিল্লি আইআইটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক অবিনাশ ১৯৭২ সালে ডিআরডিও-তে যোগ দিয়েছিলেন। নানা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে তাঁর পরিকল্পনাতেই অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে পেরেছিল ভারত। তাই ‘অগ্নি মানব’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন অবিনাশ। গত ৩০ নভেম্বর ডিআরডিও প্রধান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু তাঁকে ফের ১৮ মাসের জন্য বহাল করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে এ যাবৎ কাল তাঁর সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত।
কিন্তু নয়া চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ মাস আগেই গত কাল ডিআরডিও-র প্রধানের পদ থেকে অবিনাশ চন্দ্রকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। ৩১ জানুয়ারি থেকে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথাও ঘোষণা হয়। বুধবারের সাংবাদিক বৈঠকে পর্রীকর জানিয়ে দেন, নতুন কেউ নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী ভাবে দায়িত্ব সামলাবেন গবেষণা সংস্থারই অভিজ্ঞ কোনও বিজ্ঞানী। তবে সূত্রের খবর, অবিনাশ সরে যাওয়ার পর ডিআরডিও-র দায়িত্ব নিতে চলেছেন তাঁর চেয়ে বছর দু’য়েকের ছোট ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর শেখর বসু।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে অবিনাশকে সরানোর সিদ্ধান্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় বলে দাবি করা হলেও এর পিছনে অন্য ব্যাখ্যা খুঁজছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘মেক-ইন-ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে মোদী সরকারের সুরে সুর মেলাননি অবিনাশ। তারই খেসারত দিলেন তিনি।
অবিনাশ চন্দ্রের অপসারণে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করলেও সরকারেরই একটি সূত্র বলছে, এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত নয়। সম্প্রতি পুণের একটি মন্দিরের জন্য পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে ব্যাটারিচালিত রুপোর রথ তৈরি করে ডিআরডিও। এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র সময় এবং অর্থের অপচয় বলে তখন গবেষণা সংস্থার তীব্র ভর্ৎসনা করে কেন্দ্র। গত অগস্টে ডিআরডিও-র একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, সংস্থার গয়ংগচ্ছ মনোভাব আর সহ্য করা হবে না। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও উদ্যোগের অভাবে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত পিছিয়ে পড়ছে বলে ক্ষোভও প্রকাশ করেন মোদী।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তাদের মত, হয়তো সেই অভাব ঘোচাতেই অবিনাশকে সরানো প্রয়োজন বলে মনে করেছে মোদী সরকার। সম্প্রতি এক বৈঠকেও প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ঢেলে সাজার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। অবিনাশ-অপসারণ সম্ভবত তারই প্রথম পদক্ষেপ।