লোকসভা ভোটেই পিঠ ঠেকেছে দেওয়ালে। রক্তক্ষরণ অব্যাহত মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড নির্বাচনেও। এ বার দিল্লি নির্বাচন নিয়েও অনেকটাই রক্ষণাত্মক মা ও ছেলে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, পরিস্থিতি না বদলালে ভোটের আগে মাত্র এক দিন প্রচারে বেরোবেন সনিয়া গাঁধী। রাহুল গাঁধী জনসভা করবেন দু’টি। সঙ্গে বড় জোর এক বা দু’দিন পথসভা করতে পারেন।
কেন এতটা বেহাল কংগ্রেস? দলীয় সূত্রের খবর, কংগ্রেসের নেতারা এক প্রকার ধরেই নিয়েছিলেন, দিল্লিতে আসল লড়াই বিজেপি আর আম আদমি পার্টির মধ্যে। দিন দশেক আগে হঠাৎই ঘুম ভাঙে কংগ্রেসের। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মাকেনকে কার্যত মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবেই তুলে ধরে হাইকম্যান্ড। দলের এক অংশে এই সিদ্ধান্ত ঘিরে নেতিবাচক বাতাবরণ থাকা সত্ত্বেও রাহুল শিবিরের নেতারা মনে করেন, যে হেতু বিজেপির কোনও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নেই, তাই তাঁদের এই পদক্ষেপ কাজে দেবে।
বিধি তবু বাম! এক সময় ভোটে দাঁড়াতেই নিমরাজি ছিলেন যিনি, সেই অজয় মাকেনকে ঘিরে যখন সবে স্বপ্ন দেখার শুরু, হঠাৎই বেসুরো দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অরবিন্দ সিংহ লাভলি। ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে বেঁকে বসেছেন ডাকসাইটে এই কংগ্রেস নেতা। গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের করুণ অবস্থা সত্ত্বেও গাঁধীনগর কেন্দ্র থেকে জয় অব্যাহত রেখেছিলেন শীলা দীক্ষিত মন্ত্রিসভার প্রাক্তন এই সদস্য। ওই কেন্দ্রে তাঁর নাম সম্প্রতি কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে ঘোষণাও করে দল। হঠাৎ লাভলি জানান, তিনি লড়বেন না। সূত্রের খবর, হাইকম্যান্ডের অনুরোধেও চিঁড়ে ভেজেনি। বাধ্য হয়ে আজ লাভলির পরিবর্ত প্রার্থী ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। নতুন প্রার্থীর নাম ঘোষণা হবে আগামিকাল। দলের তরফে এ-ও দাবি করা হয়, রাজ্যের সামগ্রিক নির্বাচনী দায়িত্বের জন্যই লাভলিকে অব্যাহতি দিয়েছে হাইকম্যান্ড।
অন্দরে অস্বস্তি অবশ্য তাতেও কমছে না। ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা স্বীকার করছেন, লাভলি ভোটে দাঁড়ালে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বার্তা দিতে পারত কংগ্রেস। সে দিক থেকে আজ ফের ধাক্কা খেল দল। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে দিল্লির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতার কথায়, এমনিতেই বিজেপির প্রচারের কাছে অর্থবলে পেরে উঠছে না কংগ্রেস। মোটা টাকার বিনিময়ে দিল্লির রাস্তা-ঘাটে অধিকাংশ হোর্ডিং বিজেপি আগে থেকেই নিজেদের দখলে রেখেছে। তার উপর শীলা দীক্ষিতকে নিয়ে টানাপড়েন ছিলই। এখন নতুন মাথাব্যথা তৈরি হল। ওই নেতা জানান, মোটামুটি ভাবে দিল্লিতে ২৫টি আসন চিহ্নিত করেছে কংগ্রেস, যেখানে লড়াইয়ে থাকার চেষ্টা করবে দল। তাঁদের লক্ষ্য, এর মধ্যে অন্তত ১৫ থেকে ১৭টি আসন জেতা। দিল্লি বিধানসভায় মোট ৭০টি আসন রয়েছে। বিজেপি ও আপ যখন সরকার গঠনের জন্য লড়ছে, তখন কংগ্রেসের এই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করার মধ্যেই হতাশার ছবিটা পরিষ্কার। যদিও আজ অন্য একটি প্রসঙ্গে সাহসী মুখ দেখানোর চেষ্টা করেছেন অজয় মাকেন। আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবাল আজ এক জনসভায় বলেন, “আপনারা কংগ্রেস ও বিজেপির থেকে টাকা নিন। কিন্তু ভোটটা আমাদের দিন।” কেজরীবালের এই মন্তব্যের সমালোচনা করে নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাকেন।
পরে মাকেন বলেন, মোদীর ছবি সামনে রেখে যে দিল্লি-জয় সম্ভব নয়, বিজেপি সেটা ভালই টের পেয়েছে। সেই কারণেই কিরণ বেদীকে দিল্লির মুখ করতে হয়েছে বলে দাবি তাঁর। দুর্নীতি আন্দোলনে বেদী এক সময় কেজরীবালের পাশে ছিলেন। সেই অবস্থান থেকে তিনি আজ বিজেপিতে। অন্য দিকে, আজই প্রাক্তন আপ বিধায়ক বিনোদ কুমার বিন্নি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। মাকেন বলেন, এতে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, আপের বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্যরা এখন পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছেন।
মাকেনদের আশা, কিরণ বেদীদের প্রচারের মুখ করায় বিজেপির মধ্যেই কোন্দল বাড়বে এবং অন্তর্ঘাতের চেষ্টা হবে। তাঁদের মতে, কেজরীবালের জনপ্রিয়তা কমেছে। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। এই অবস্থায় কোন কেন্দ্রে কোন প্রার্থী, তার উপরে ভোটের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করবে। সে রকম হলে কংগ্রেসের ফল আগের তুলনায় ভাল হতেও পারে। কারণ, অন্তত ২৫টি আসনে কংগ্রেস এমন প্রার্থী দিয়েছে, যাঁরা অন্তত তিন বা তার বেশি মেয়াদে বিধায়ক ছিলেন।
প্রশ্ন তবু থাকছেই। মাকেন নিজেই অন্তর্ঘাতের শিকার হবেন না তো! লাভলি ভোটে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তেই সেই সংশয় আজ বিশেষ ভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে। কংগ্রেসের একটা অংশে আশঙ্কা, বিজেপির সঙ্গে তলে তলে সমঝোতা করেছেন লাভলি। এর জবাবে অজয় মাকেন আজ বলেন, “আমি, লাভলি ও হারুন ইউসুফ এই তিন জন গত পনেরো বছর ধরে দিল্লিতে রাজনীতি করছি। এর মধ্যে ফাটল ধরার কোনও প্রশ্নই ওঠে না!”