উত্তরপ্রদেশের পর মেঘালয়।
ফের লালসার শিকার এক মহিলা। ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় স্বয়ংক্রিয় কালাশনিকভ রাইফেলের বুলেটে তাঁর মাথা উড়িয়ে দিল দুষ্কৃতীরা। স্বামী ও পাঁচ সন্তানের সামনেই। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, হানাদাররা ‘গারো ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’র (জিএনএলএ) জঙ্গি।
২৭ মে উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁর গ্রামে দলিত পরিবারের দুই নাবালিকা বোনকে গণধর্ষণের পর গাছে দড়ির ফাঁসে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না-কাটতেই বরেলীতে গণধর্ষণ করা হয় ২২ বছরের এক তরুণীকে। শুধু তাই নয়, জোর করে তাঁকে অ্যাসিড খাইয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। প্রমাণ লোপাটে তাঁর মুখে অ্যাসিড, পেট্রোল ঢেলে দেওয়া হয়। পরের পর এই সব ঘটনা নিয়ে দেশে-বিদেশে যখন নিন্দার ঝড় বইছে, তারই মধ্যে গত সন্ধেয় মেঘালয়ে ঘটে গেল আর এক নারকীয় ঘটনা।
রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, গত কাল সন্ধে ৬টা নাগাদ দক্ষিণ গারো হিল জেলার চোকপটের প্রত্যন্ত গ্রাম রাজারঙ্গতে যায় সশস্ত্র জঙ্গিরা। স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গে বাড়িতে ছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলা। দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে হানাদাররা। বাকি সবাইকে একটি ঘরে আটকে রেখে মহিলাকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে জঙ্গিরা। মারধর, শ্লীলতাহানি করা হয়। তার পর তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। নিজেকে বাঁচাতে জঙ্গিদের প্রাণপণে বাধা দেন ওই মহিলা। গ্রামবাসীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তখনই এক জঙ্গি তাঁর মাথায় রাইফেল ঠেকায়। পরের মুহূর্তেই ‘ট্রিগার’ টিপে দেয়।
‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’ থেকে বের হওয়া ৫-৬টি বুলেটের আঘাতে মহিলার মাথা টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। গলগলিয়ে রক্ত, ঘিলু বের হয়ে আসে। চোখের সামনে মাকে খুন হতে দেখে চিৎকার করতে থাকে ছেলেমেয়েরা। প্রাণভয়ে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যেতে পারেননি কোনও গ্রামবাসী। জঙ্গিরা জঙ্গলে ফিরে যাওয়ার পর তাঁরা বাইরে বের হন।
দক্ষিণ গারো হিলের এসপি লাকাডোর সিয়েম আজ জানান, গত কাল রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ জেলা সদরে জঙ্গি হানার খবর পৌঁছয়। গারো হিল এলাকায় নৈশ কার্ফু জারি ছিল। প্রথমে পুলিশ ভেবেছিল, জঙ্গিরা ভুয়ো খবর ছড়িয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে ফাঁদে ফেলতে চাইছে। হামলার আশঙ্কায় রাতে পুলিশ তাই ঘটনাস্থলে যায়নি।
রাজ্য পুলিশের ডিজি পিজেপি হানাম্যান বলেন, ‘‘সন্তানদের সামনে ঠান্ডা মাথায়, জঙ্গিরা নৃশংস ভাবে ওই মহিলাকে হত্যা করেছে। অপরাধীদের ধরতে তল্লাশি চলছে।”
তুরার সাংসদ পূর্ণ সাংমা গোটা ঘটনার নৈতিক দায় রাজ্য সরকারের উপরে চাপিয়েছেন। এমনিতেই, মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমার সঙ্গে জঙ্গি যোগসাজস নিয়ে তিনি সরব। গারো পাহাড়ে সম্প্রতি পুলিশ হেফাজতে দুই যুবকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে পূর্ণ কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তার সঙ্গে গত কালের ঘটনাটিও যোগ করেছেন তিনি। আজ পূর্ণ বলেন, “রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই।
এখানে কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীদের মদতেই সন্ত্রাসরাজ চলছে।” রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোশন ওয়ারজিরি বলেছেন, “আমি উচ্চপর্যায়ের তদন্তকারী দল নিয়ে ঘটনাস্থলে যাব। নিহতের পরিবারকে সব রকম সাহায্য ও নিরাপত্তা দেওয়া হবে।”