গুরুর ঝড় উধাও। শিষ্যের শিরে সংক্রান্তি।
গুরু নরেন্দ্র মোদীর ঝড়ে সওয়ার হয়েই যে লোকসভা ভোটে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, তা বুঝতে পেরেছেন শিষ্য অমিত শাহ।
কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে মোদী-ঝড়ও স্তিমিত।
এই অবস্থায় সামনে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর, দিল্লি, ঝাড়খণ্ডে নির্বাচন। উপনির্বাচন বিহারেও। এই অবস্থায় মোদী-ঝড়ের অনুপস্থিতিতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তাই এখন থেকেই যুদ্ধজয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
গুরু নরেন্দ্র মোদীর কারণেই যে লোকসভা ভোটে বিজেপি ভাল ফল করেছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত অমিত। কারণ, তাঁর হিসেব ছিল উত্তরপ্রদেশে দল খুব ভাল ফল করলে ৮০টির মধ্যে ৫৫টি আসন পাবে। কিন্তু বিজেপি পেয়েছে ৭১টি আসন। অমিতের মতে মোদী-ঝড়ের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, মোদী-ঝড় বদলে দিয়েছে বহু হিসেব-নিকেশ। উত্তরাখণ্ড এবং দিল্লিতে সব ক’টি আসন জিতেছে বিজেপি।
কিন্তু এখন আর অবস্থা সে রকম নেই। যে উত্তরাখণ্ডে সব ক’টি আসনই বিজেপি পেয়েছিল, এখন সেখানে উপনির্বাচনে তিনটি আসনই কংগ্রেসের দখলে। তার মধ্যে দু’টি আবার বিজেপিরই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আসন!
আজ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য অমিত উত্তরাখণ্ডের নেতাদের ডেকে পাঠান। বলেন, “উত্তরাখণ্ডের পরাজয়ে শুধু বিজেপি নয়, মোদীর নাক কেটেছে। কোনও অবস্থাতে এর পুনরাবৃত্তি বরদাস্ত করা হবে না।”
কিন্তু কেন এই দুরবস্থা? অমিতের মতে, লোকসভায় মানুষ ভোট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পদে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। বিধানসভা উপনির্বাচনে সেই লক্ষ্য ছিল না। তা ছাড়া যে নরেন্দ্র মোদী ভোটের আগে ঝোড়ো প্রচার করতেন, এখন তিনিও ‘চুপ’। এ ছাড়াও বিহারের উপনির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করতে জোট বাঁধছেন একদা প্রতিপক্ষরাও। এই অবস্থায় লড়াইটা যে কত কঠিন, তা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছেন অমিত শাহ।
উত্তরাখণ্ডের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় উপনির্বাচনে পরাজয়ের বেশ কয়েকটি কারণ উঠে এসেছে। এক, স্থানীয় বিজেপি নেতাদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছিলই। লোকসভা ভোটের পর ফের তা মাথাচাড়া দিয়েছে। দুই, উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের হরিশ রাওয়াতের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা ছিল। বিজেপি সেখানে কিছুটা ঢিলে দেওয়ায় কংগ্রেসের পক্ষে রায় গিয়েছে। আর তিন, বিজেপি কোনও বিকল্প নেতাও তুলে ধরতে পারেনি।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের খবর, এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে অমিত শাহ এখন ত্রিমুখী কৌশল নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক, আগের মতো না হোক, মোদীকে আরও কিছুটা সক্রিয় হতে হবে ভোটের আগে। মোদী তাতে রাজি না হলে তাঁকে ছাড়াই ঘুঁটি সাজাতে হবে। দুই, প্রতিটি রাজ্যে একটি মুখ তুলে ধরতে হবে। সেটিই এখন সব থেকে কঠিন কাজ। গোপীনাথ মুন্ডের মৃত্যুর পর মহারাষ্ট্রে বড় নেতার অভাব। দিল্লিতে অতীতে হর্ষবর্ধনকে সামনে রাখা হলেও এখন তিনি কেন্দ্রের মন্ত্রী। ঝাড়খণ্ডে অর্জুন মুন্ডা থাকলেও যশবন্ত সিন্হাও সক্রিয়। রাজ্যে-রাজ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আর তিন, বুথ স্তর পর্যন্ত সংগঠনকে আরও চাঙ্গা করা।
মোদী-ঝড়ের অনুপস্থিতিতে অমিত এই কাজে কতটা সফল হন, সেটাই দেখার।