পাক নৌকা-বিতর্কে প্যাঁচে কেন্দ্র

গত বছর শেষ রাতে সমুদ্রপথে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী হামলা রুখে দেওয়ার কৃতিত্ব দাবি করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ বার সেই ঘটনা ঘিরে বিতর্কে প্রবল অস্বস্তিতে কেন্দ্র। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছিল, ৩১ ডিসেম্বর আরব সাগরে একটি মাছ ধরার ট্রলার করে সন্ত্রাসবাদীরা ভারতে ঢুকে হামলার চেষ্টা করেছিল। সেই সন্ত্রাসবাদীরাদের অবশ্য ধরা যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৭
Share:

গত বছর শেষ রাতে সমুদ্রপথে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী হামলা রুখে দেওয়ার কৃতিত্ব দাবি করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ বার সেই ঘটনা ঘিরে বিতর্কে প্রবল অস্বস্তিতে কেন্দ্র।

Advertisement

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছিল, ৩১ ডিসেম্বর আরব সাগরে একটি মাছ ধরার ট্রলার করে সন্ত্রাসবাদীরা ভারতে ঢুকে হামলার চেষ্টা করেছিল। সেই সন্ত্রাসবাদীরাদের অবশ্য ধরা যায়নি। উপকূল রক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয়ে তারা নিজেরাই ট্রলারে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে তখন দাবি করেছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ওই ট্রলারে আদৌ পাকিন্তানি সন্ত্রাসবাদীরা ছিল, নাকি শুধুই নিরীহ মৎস্যজীবীরা ছিলেন, তা নিয়ে তখনই প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর তখন দাবি করেছিলেন, ট্রলারে চার জন সন্ত্রাসবাদী ছিল। তাঁর যুক্তি ছিল, সন্ত্রাসবাদীরা না হলে তারা নিজেরাই ট্রলারে আগুন ধরিয়ে দিত না। কিন্তু এ বার উপকূল রক্ষী বাহিনীরই এক উচ্চপদস্থ অফিসার দাবি করেছেন, তাঁরাই ওই ট্রলারটি গোলা দেগে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় রাজনৈতিক ভাবে ও কূটনৈতিক স্তরে ঘোর অস্বস্তিতে মোদী সরকার। এক দিকে পাকিস্তান ভারতের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খ্বাজা আসিফ প্রশ্ন তুলেছেন, কেন ভারত পাকিস্তানের মাছ ধরার ট্রলার ডুবিয়ে দিল? তাঁর কথায়, “ভারতের আসল চেহারা সামনে চলে এসেছে। আবার প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, ভারত আন্তর্জাতিক নিয়ম ভেঙেছে। মানবিক শর্তও মানেনি।” আগামী মাস থেকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিদেশসচিব স্তরের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। তার আগে এই ঘটনায় প্যাঁচে পড়েছে বিদেশ মন্ত্রকও।

ঘরোয়া রাজনীতিতেও বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদী সরকার। কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেছে। কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনের যুক্তি, মোদী সরকারের এই ভুলের ফলে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ভারতকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। যদি সরকারের কাছে সত্যিই প্রমাণ থাকে, তা হলে সরকারের উচিত তা প্রকাশ করে দেওয়া। আম আদমি পার্টির বক্তব্য, মোদী সরকারের এমন দশা যে, তার একটি হাত কী করছে, অন্য হাত জানে না। আগামী সোমবার থেকে সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সেখানেও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে বিরোধীরা।

Advertisement

মোদী সরকারের অস্বস্তির শুরু উপকূল রক্ষী বাহিনীর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ডিআইজি বি কে লোশালিকে নিয়ে। সম্প্রতি সুরাতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেন, “পাকিস্তানের ওই ট্রলারটি আমরাই উড়িয়ে দিয়েছিলাম। আমি সে সময় গাঁধীনগরে ছিলাম। আমিই বলি, উড়িয়ে দাও ওদের। আমরা ওদের বিরিয়ানি খাওয়াতে চাই না।” ডিআইজি-র এই মন্তব্য ও তার ভিডিও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতেই অস্বস্তিতে পড়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজ বেঙ্গালুরুতে ভারতীয় উড়ান শিল্প সম্মেলনে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদীও ছিলেন সেখানে। সাংবাদিক সম্মেলনে লাগাতার প্রশ্নের মুখে পড়ে পর্রীকর বলেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আগে যা বলেছিল, আমরা এখনও সেই অবস্থানেই রয়েছি। যদি কেউ অন্য মন্তব্য করেন, তা হলে নিয়মভঙ্গের প্রশ্ন এসে যায়।” এ বিষয়ে সরকারের হাতে যে সব তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, তা-ও শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে বলে দাবি করেছেন পর্রীকর। উপকূল রক্ষী বাহিনীর ওই অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থারও ইঙ্গিত দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, “গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এর পরেই ডিআইজি লোশালিকে ‘শো-কজ’ করা হয়।

যাঁর মন্তব্য ঘিরে এত বিতর্ক, সেই লোশালি অবশ্য আজ নিজেই ডিগবাজি খেয়ে বলেন, ৩১ ডিসেম্বর রাতে কী হয়েছিল, সে বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তাঁর দাবি, “আমি শুধু বলেছি, কোনও রাষ্ট্র-বিরোধী শক্তিকে আমাদের উপকূল সীমান্ত পেরোতে দেওয়া হবে না। ওটা গোপন অপারেশন ছিল। তার কোনও তথ্যই আমাকে দেওয়া হয়নি।” তাঁর আরও দাবি, ওই এলাকায় আইজি কুলদীপ সিংহ শেওরান অভিযানের দায়িত্বে ছিলেন। উপকূল রক্ষী বাহিনীর দাবি, লোকশালি প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখেন। অভিযানের বিষয়ে তাঁর জানার বা নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার নেই। তিনি আলোচনা সভায় গিয়ে সকলের সামনে নিজের বীরত্ব জাহির করতেই এমন বলেছেন। সরকারের মুখ পোড়ায় তাঁকে শাস্তি পেতে হবে বলেই বাহিনীর কর্তারা মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন