প্রশাসনের কর্তাদের বদলির হিড়িক উত্তরপ্রদেশে

কলমের একটা আঁচড়ে বদলি ৬৬ জন আইএএস, ৪২ জন আইপিএস অফিসার! সাসপেন্ড বদায়ূঁর পুলিশ সুপারও। বদায়ূঁ-গণধর্ষণ নিয়ে যখন উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের দিকে আঙুল উঠেছে দেশের নানা মহল থেকে, তখন রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকদের বদলির ধারা অক্ষুণ্ণ রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লখনউ শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৪ ০৩:৪৩
Share:

কলমের একটা আঁচড়ে বদলি ৬৬ জন আইএএস, ৪২ জন আইপিএস অফিসার! সাসপেন্ড বদায়ূঁর পুলিশ সুপারও।

Advertisement

বদায়ূঁ-গণধর্ষণ নিয়ে যখন উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের দিকে আঙুল উঠেছে দেশের নানা মহল থেকে, তখন রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকদের বদলির ধারা অক্ষুণ্ণ রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। ঘটনার চার দিনের মাথায় সাসপেন্ড হয়েছিলেন মুখ্যসচিব জাভেদ উসমানি। আচমকাই কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারিকেও। তবে আজ যে ভাবে প্রশাসনের মাথাদের বদলির হিড়িক পড়ে গিয়েছে, তা এক কথায় নজিরবিহীন।

শনিবার প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি (স্বরাষ্ট্র) ও রাজ্য পুলিশের ডিজি-র সঙ্গে বৈঠকের পরই প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে আমূল রদবদলের সিদ্ধান্ত নেন অখিলেশ। পরে সাংবাদিকদের মুখ্যসচিব অলোক রঞ্জন জানান, “বদায়ূঁর ঘটনার পর প্রশাসন যদি ঠিক সময়ে সক্রিয় হতো, পরিস্থিতি আজ অন্য রকম হতে পারত। রাজ্যের কোথাও অনিয়ম কিছু হলে তার দায় তো পদস্থ কর্তাদের নিতেই হবে।” বদায়ূঁর পুলিশ সুপার অতুল সাক্সেনাকে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি জেলাশাসক চন্দ্র প্রকাশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে বলেও স্থির হয়েছে। সাক্সেনার বদলে দায়িত্ব নেবেন এল আর কুমার।

Advertisement

যে ৬৬ জন আইএএসকে বদলির নির্দেশ ধরানো হয়েছে, সেই তালিকায় রয়েছেন আগরা, বরেলী, চিত্রকূট, মথুরা, হামিরপুরের মতো বিভিন্ন জেলার জেলাশাসকরা। আর আইজি, ডিআইজি, নানা জেলার পুলিশ প্রধানেরা রয়েছেন আইপিএসদের দলে।

অখিলেশ যাদব প্রশাসনে এই ঢালাও রদবদলের দিনই আবার সামনে এসেছে বদায়ূঁ গণধর্ষণ নিয়ে এক নতুন তথ্য। বাড়িতে শৌচাগার না থাকায় গত ২৭ মে রাত্তিরে বাইরে বেরিয়েছিল কাটরা সাদতগঞ্জ গ্রামের দুই বোন। বড় জনের বয়স ১৫ আর তার চেয়ে এক বছরের ছোট তুতো বোন। পরের দিন গ্রামেরই এক আম গাছ থেকে উদ্ধার হয় ঝুলন্ত দুই বোনের দেহ। ছোট্ট দু’টো শরীরে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছিল ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে। কিন্তু আজ সেই অবস্থান থেকে বেশ কিছুটা সরে এলেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজি এ এল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, দুই বোনের এক জনের দেহে ধর্ষণের নিশ্চিত প্রমাণ এখনও পাননি ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। বরং একেবারে আনকোরা এক সম্ভাবনা উস্কে দিয়েছেন ডিজি।

এ এল বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই দুই বোনের এক জনের বাবা-মায়ের আর কোনও ছেলে-মেয়ে নেই। তার বাবারা তিন ভাই। সম্পত্তির ভাগ থেকে যদি এক জনও কমে, অন্যদের লাভের পরিমাণ বাড়বে পাল্লা দিয়ে। ঘটনাস্থল থেকে মদের বোতল ও গ্লাস খুঁজে পাওয়ার কথা উল্লেখ করে ডিজির মন্তব্য, “এটাই খুনের এক মাত্র কারণ আমি বলছি না। তবে এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা এমন অনেক জিনিস পেয়েছেন, পুলিশ একটু তৎপর হলে যা হয়তো আরও আগেই মিলত এমন আক্ষেপও শনিবার শোনা গিয়েছে ডিজির মুখে।

কিছু দিন আগে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এ-ও বলা হয়, জীবন্ত অবস্থাতেই দু’জনকে গাছ থেকে টাঙিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ফলে দমবন্ধ হয়ে, হাঁসফাঁস করেই মারা যায় দুই কিশোরী। এ দিন সেই তত্ত্ব থেকেও সরে এসেছে পুলিশ। ডিজি জানান, আগে মেরে ফেলে নিষ্প্রাণ দেহগুলোই টাঙিয়ে রাখা হয় বলে অনুমান।

দশ দিন আগে কাটরা গ্রামে আদতে যে কী ঘটেছিল, পরস্পরবিরোধী তথ্যে তা নিয়ে ধোঁয়াশা কিন্তু ক্রমেই বেড়েছে। অসঙ্গতি কাটাতে ধৃতদের নার্কো অ্যানালিসিস ও লাই ডিটেক্টর পরীক্ষা করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।

এ দিকে মুখ্যমন্ত্রী যতই সংবাদমাধ্যমকে কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা করুন না কেন, সেই উত্তরপ্রদেশেই ফের একাধিক ধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছে। মুলায়ম-অখিলেশদের খাসতালুক এটাওয়ায় বদায়ূঁর মতোই ১৪-১৫ বছরের দুই বোনকে ধর্ষণ করেছে তিন যুবক। আজ বরাবাঁকি ও কুরথাল গ্রাম থেকে আরও দুই নাবালিকা গণধর্ষণের খবর এসেছে। অন্য দিকে মুজফ্ফরনগরের দুলহেরা গ্রামে এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগে ব্যবস্থা না নেওয়ায় চাকরি গিয়েছে ছয় পুলিশের।

বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে ঢালাও ছাঁটাই-বদলি-সাসপেন্ডের রাস্তা বেছে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। কিন্তু লাগামছাড়া ধর্ষণের খবর থেকে উত্তরপ্রদেশ কবে বেরোবে, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন