পাসোয়ান পেয়ে লাভ না ক্ষতি, জোর তর্ক বিজেপিতে

ধর্মনিরপেক্ষ শিবির থেকে রামবিলাসকে পেয়ে বড় মুখ করে তা প্রচারে করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু বিহারে তিনি এনডিএর ঝুলিতে সত্যিই কতটা ভোট টানতে পারবেন, সেই হিসেব মেলাতে গিয়ে দু’ভাগ হয়ে পড়েছেন রাজ্যের বিজেপি নেতারা।

Advertisement

স্বপন সরকার

পটনা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫১
Share:

ধর্মনিরপেক্ষ শিবির থেকে রামবিলাসকে পেয়ে বড় মুখ করে তা প্রচারে করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু বিহারে তিনি এনডিএর ঝুলিতে সত্যিই কতটা ভোট টানতে পারবেন, সেই হিসেব মেলাতে গিয়ে দু’ভাগ হয়ে পড়েছেন রাজ্যের বিজেপি নেতারা।

Advertisement

রামবিলাসকে নিয়ে মত-দ্বৈরথে মেতেছে মূলত রাজ্য বিজেপির স্পষ্ট দু’টি শিবির। এক দিকে রয়েছেন বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি তথা রাজ্যসভার সদস্য সি পি ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ নেতারা। এন্য পক্ষে রাজ্যের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদীর সমর্থক গোষ্ঠী। রামবিলাসের লোকজনশক্তি পার্টির সঙ্গে জোটের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি সাজাচ্ছেন সকলেই। এক পক্ষ বলছেন, নিজের জাতিরই ভোট পান না রামবিলাস! তিনি জোটসঙ্গী হলেও, নিম্ন বর্ণের ভোট পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই বিজেপির। এর পাল্টা বক্তব্যও শোনা যাচ্ছে। তা হল, জেডিইউয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায়, কুর্মি জাতির একটা ভোটও পাবে না বিজেপি। সে ক্ষেত্রে পাসোয়ানদের সমর্থনই দলের বড় ভরসা। কার্যত রামবিলাসকে নিয়ে বিদ্রোহ দানা বেধেছে উচ্চ বর্ণের নেতাদের মধ্যে। তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু আসন রামবিলাসকে ছাড়া ও দলিতদের এত প্রাধান্য দেওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ। বিহারের এই বিদ্রোহী নেতারা চাইছেন, প্রার্থী বাছাইয়ের সময় যেন উচ্চ বর্ণদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। তা না হলে সেই ভোট অন্যত্র যাবে। এই পরিস্থিতিতে আগামী মঙ্গলবার বিহারের নেতারা বৈঠকে বসছেন। যাতে পর দিন দিল্লিতে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার আগে এই জট তাঁরা কাটিয়ে উঠতে পারেন।

সি পি ঠাকুর পক্ষের একাংশ নেতার বক্তব্য, রাজ্যে কোনও এক জন নেতা পাসোয়ানদের ভোট নিয়ন্ত্রণ করেন না। এক জনকে দেখে পাসোয়ানরাও ভোট দেন না। তাঁদের যুক্তি, ২০০৭ সালে বিহারের জেডিইউ-বিজেপি জোটের এনডিএ সরকার পাসোয়ানদের মহাদলিত পর্যায়ভুক্ত করেনি। সে ক্ষেত্রে কেনই বা তাঁরা বিজেপি প্রার্থীদের ভোট দেবেন? সংসদ এ বিষয়ে কিছু না-বলায় রামবিলাসকে নিয়েও ক্ষুব্ধ ওই শ্রেণির মানুষ। রামবিলাসের বিরুদ্ধে দলে পরিবারতন্ত্র চালানোরও অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির ওই নেতারা।

Advertisement

রামবিলাসের সমর্থনে এগিয়ে আসা সুশীল মোদী গোষ্ঠীর নেতারা অবশ্য এ সবে আমল দিচ্ছেন না। নীতীশের কুর্মি ভোট-ব্যাঙ্কের সঙ্গে রামবিলাসের পাসোয়ান ভোটের তুলনা টানছেন তাঁরা। বিজেপির পক্ষে ওই ভোট-ব্যাঙ্ক লাভের হতে পারে বলে হিসেবও কষছেন। তাঁদের বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদীও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ। তাই এ বারের ভোটে দলিত পাসোয়ানদের ভোট বিজেপির দিকে আসার সম্ভাবনাও প্রবল।

তবে দু’পক্ষই একটি বিষয়ে একমত। তা হল, রামবিলাসের সঙ্গে এ বারই প্রথম জোট গড়ে বিহারে লড়াই হবে। পরীক্ষার আগেই এত হিসেব ছকে ফেলাটা উচিত নয়। সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে। দলের অন্দরের এই মতবিরোধ অবশ্য প্রকাশ্যে আনতে নারাজ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্রে মোদীর সরকার গড়ার লক্ষ্যে তাই প্রচারে কোনও খামতি রাখা হচ্ছে না।

রাজ্যের ২৪৩টি বিধানসভা কেন্দ্রে ২৫০টি রথ বের করা হবে। রোজ গোটা রাজ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে এক হাজারটি করে সভা করা হবে। বিজেপি নেতাদের প্রাথমিক হিসেবে, ভোটের আগে এতে প্রায় ৫০ হাজার সভা করা সম্ভব হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন