ইলা পট্টনায়ক
অর্থ মন্ত্রকে কোনও মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা নেই। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ বলেও কিছু নেই। নেই পরিষদের চেয়ারম্যানও। যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ হিসেবেও কাউকে নিয়োগ করা হয়নি।
কেন্দ্রীয় সরকারেরই বিভিন্ন মন্ত্রকের অন্দরমহলের আড্ডার অন্যতম বিষয়, এ বার তা হলে বাজেট তৈরি করছেন কারা?
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কারণ প্রতি বছর বাজেটের সময় উপরে বলা তিন চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অথচ নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম বাজেট তৈরির সময় এই পদগুলিতে কেউই নেই। বাজেটের ক্ষেত্রে চিরাচরিত নীতি হচ্ছে, যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ ও প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান বাজেট তৈরির সময় অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেন। অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অর্থমন্ত্রীকে নীতি সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনিই অর্থনৈতিক সমীক্ষা তৈরির দায়িত্বে থাকেন। ১০ জুলাই বাজেট পেশের আগের দিন সংসদে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পেশ হবে। যাতে দেশের অর্থনীতির হালহকিকত ফুটে উঠবে।
মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার ছেড়ে যাওয়া পদে নরেন্দ্র মোদী সরকার এখনও কাউকে যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ করেনি। মনমোহন সিংহের আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজনও পদত্যাগ করেছেন। সেখানেও কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। তা হলে বাজেট তৈরিতে এ বার মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন কারা? অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, বাজেট তৈরির প্রস্তুতিতে মূলত তিনটি দল কাজ করছে। প্রথম সারিতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। দ্বিতীয় দলে রয়েছেন অর্থসচিব অরবিন্দ মায়ারাম, রাজস্বসচিব শক্তিকান্ত দাস, ব্যয়সচিব রতন ওয়াতাল ও অন্যান্য সচিব। এঁদের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন রাজস্বসচিব ও ব্যয়সচিব। কারণ তাঁদেরকেই আয় বাড়ানো, করের নতুন উৎস সন্ধান এবং ব্যয় ছাঁটাই নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে। তৃতীয় দলটিতে রয়েছেন প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা ইলা পট্টনায়ক। তিনিই সমীক্ষা তৈরির কাজটি দেখাশোনা করছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পাশাপাশি ইলা পট্টনায়ক ও শক্তিকান্ত দাস বাজেটে কী ভূমিকা নেন, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে শিল্পমহল।
ইলা পট্টনায়ক দিল্লির ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স’-এর অধ্যাপক। তাঁকে প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদে নিয়োগ করা হলেও মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদে কাউকে বসানো হয়নি। বস্তুত ইউপিএ জমানার শেষ পর্বেও ওই পদটি খালি ছিল। আসলে রঘুরাম রাজন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের দায়িত্বে চলে যাওয়ার পর থেকেই পদটি ফাঁকা। ইলা অর্থ মন্ত্রকে যোগ দেওয়ার আগে পর্যন্ত রঘুরামের নেতৃত্বে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নীতি নিয়ে সমালোচনায় মুখর ছিলেন। তিনিই এ বার প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবেই অর্থনৈতিক সমীক্ষা তৈরির কাজ দেখছেন।
এ বারের বাজেটে রাজস্বসচিব শক্তিকান্ত দাসের ভূমিকা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। মোদী ক্ষমতায় আসার পরেই রাজস্বসচিবের পদ থেকে রাজীব টাকরুকে সরিয়ে তামিলনাড়ু ক্যাডারের আইএএস অফিসার শক্তিকান্ত দাসকে নিয়ে আসা হয়। তিনি তামিলনাড়ুতে শিল্পসচিব হিসেবে এসইজেড তৈরিতে অগ্রদূতের ভূমিকায় ছিলেন। মোদী সরকার যখন দেশের এসইজেড-গুলিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন, সে সময় শক্তিকান্তর অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। শক্তিকান্ত থেকে শুরু করে অর্থ মন্ত্রকের শ’খানেক আমলা অবশ্য এখন নর্থ ব্লকে বন্দি। কারণ ২ জুলাই থেকে বাজেট নথি ছাপানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বাজেট পেশের পরেই তাঁরা পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।