পুজোর দিনে দিল্লিতে ঝাড়ুর লড়াই।
বিজেপির একটা আশঙ্কা ছিলই। নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে ঝাড়ু হাতে তাঁর ‘স্বচ্ছ মিশন’ শুরু করতে যাচ্ছেন, আজ বা কাল ফোঁস করে উঠবেন অরবিন্দ কেজরীবাল। কারণ কেজরীবালের দল আম আদমি পার্টির নির্বাচনী প্রতীক ঝাড়ু। আজ হলও তাই। দিল্লির পাড়ায় পাড়ায় যখন থিম পুজোর লড়াই শুরু হয়েছে, কেজরীবাল লড়াইয়ে নামলেন ঝাড়ু নিয়ে। মোদী সরকারের মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে চিঠি লিখে জানালেন, ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ঝাড়ু হাতে সাফাই করবেন, ভাল কথা। কিন্তু তার পর দিন থেকে দিল্লির রাস্তায় লাগাতার ঝাড়ু হাতে সাফাই অভিযানে নামবে আম আদমি পার্টি।
ঝাড়ু হাতে সাফাই অভিযান শুরুর আগেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের একটি অংশের মত ছিল, কেজরীবাল ছেড়ে কথা বলবেন না। দিল্লির সাফাই কর্মচারীদের এলাকা বাল্মীকি নগরের রাস্তায় নিজে ঝাড়ু দিয়ে গত বছর দলের নির্বাচনী প্রতীক সকলের সামনে তুলে ধরেন কেজরীবাল। আর কিছু দিনের মধ্যেই দিল্লিতে বিধানসভা ভোট হবে। তার আগে ঝাড়ু নিয়ে মোদী ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা যে ভাবে মাতামাতি শুরু করেছেন, তাতে চুপ থাকতে পারছেন না কেজরীবাল। প্রতিপক্ষ বিজেপি তাঁর ভোটব্যাঙ্ক কেড়ে নিক, তা কিছুতেই হতে দিতে চান না তিনি। তার উপরে প্রধানমন্ত্রী আবার নিজে ঝাড়ু দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন দিল্লির বাল্মীকি সদনকেই।
তাই আজ গর্জে উঠে কেজরীবাল বলেছেন, “ক’দিন ধরেই কেন্দ্রের মন্ত্রীরা ঝাড়ু হাতে নিজেদের ছবি ছাপাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। তাঁদের ঝাড়ু দেওয়ার আগে রাস্তায় নতুন আবর্জনা ফেলা হচ্ছে, যাতে ভাল ছবি ওঠে! প্রধানমন্ত্রী তো শুনছি বাল্মীকি সদনে ঝাড়ু লাগাবেন। সে তো এক দিনের প্রতীকী। তার পর দিন থেকে বেচারা সাফাই কর্মীরাই সেই কাজ করবেন। তাঁদের দিকে নজর নেই সরকারের।” তাই ২ অক্টোবরের পর দিন থেকে ঝাড়ু হাতে সাফাই অভিযানের কথা ঘোষণা করেছেন কেজরীবাল।
কিন্তু বিজেপিও এই ঝাড়ু-লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকতে চায় না। এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, আগামী বছরের গোড়াতেই দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন হবে। এখনই ভোট হলে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-ও পেতে পারে, এই আশঙ্কায় ভোট পিছোতে চেয়েছিলেন দলের নেতারা। চেষ্টা হয়েছিল, জোড়াতালি দিয়ে সরকার গড়ার। কেজরীবাল তখনও বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, হারের ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর দল। সাহস থাকলে ভোট করে দেখাক বিজেপি।
মোদীর ঝাড়ু অভিযান নতুন করে অক্সিজেন জোগাল কেজরীবালকে। মোদীকে তাঁর বার্তা, “আপনিও ঝাড়ু হাতে নিচ্ছেন, এ তো ভাল কথা। আমরাই এটিকে প্রতীক করেছি। আমরাই সম্মান রাখব।” কেজরীবালের এই রূপ দেখে দিল্লি বিজেপির সভাপতি সতীশ উপাধ্যায় আজ বলেন, “২ অক্টোবর মহাষ্টমী। সে দিন আমরা সকলে বাড়ির আশপাশ সাফাই করে দুর্গাষ্টমী পালন করব। তার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণ করতে আমরাও লাগাতার এই অভিযান চালাব।”
এই ঝাড়ুর লড়াই কোন দিকে গড়ায়, সেটাই এখন দেখার।