বিতর্কিত মাংস ব্যবসায়ীর খোঁজে হন্যে গোয়েন্দারা

তাঁর পেশা মাংস রফতানি। কিন্তু নাম জড়িয়েছে আয়কর ফাঁকি, হাওয়ালা এমনকী সন্ত্রাসের মামলাতেও। কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত উত্তরপ্রদেশের মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশির বিরুদ্ধে ইউপিএ আমলে কোনও পদক্ষেপও করা হয়নি। কিন্তু দিল্লিতে পট পরিবর্তনের পরে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে দ্রুত কুরেশির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

মইন কুরেশি

তাঁর পেশা মাংস রফতানি। কিন্তু নাম জড়িয়েছে আয়কর ফাঁকি, হাওয়ালা এমনকী সন্ত্রাসের মামলাতেও। কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত উত্তরপ্রদেশের মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশির বিরুদ্ধে ইউপিএ আমলে কোনও পদক্ষেপও করা হয়নি। কিন্তু দিল্লিতে পট পরিবর্তনের পরে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে দ্রুত কুরেশির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

কিন্তু কোথায় কুরেশি? আপাতত তিনি ফেরার। কুরেশির খোঁজ পেতে ইন্টারপোলের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।

প্রথমে দুন স্কুল ও পরে দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের ছাত্র কুরেশি মাংস বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন উত্তরপ্রদেশের রামপুর থেকে। ইউপিএ জমানায় বিদেশে মাংস রফতানির ব্যবসাও শুরু করেন তিনি। কুরেশি কংগ্রেসের একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

Advertisement

আয়কর দফতরের মতে, বিদেশে মাংস রফতানির সুযোগে হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা লেনদেনের চক্র গড়ে তোলেন কুরেশি। যার মাধ্যমে গত কয়েক বছরে কয়েকশো কোটি টাকা বেআইনি ভাবে বিদেশে গিয়েছে বলে জানতে পেরেছে কেন্দ্র।

আয়কর দফতর সূত্রের খবর, এই কাজে কুরেশির অন্যতম মদতদাতা ছিলেন পঙ্কজ শাহ নামে এক ব্যবসায়ী। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, নিজের অবৈধ ব্যবসা চালানোর জন্য পছন্দের লোককে আর্থিক পরিষেবা দফতরের সচিব করার চেষ্টা করেছিলেন কুরেশি। সে জন্য নিয়মিত সরকারের শীর্ষ স্তরে তদ্বির করেছেন তিনি। আয়কর দফতর সূত্রে খবর, ঘোষিত সম্পত্তির পাশাপাশি ভারতে কুরেশির ১৫৭ কোটি টাকার সম্পত্তি থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। ওই সম্পত্তি সম্পর্কে তিনি আয়কর দফতরকে কিছুই জানাননি। ভারত ছাড়াও লন্ডন ও হংকং-এ বেনামে কুরেশির একাধিক সম্পত্তি রয়েছে বলে জানিয়েছে আয়কর দফতর। যার বাজারদর আরও কয়েকশো কোটি।

সরকারি সূত্রের দাবি, কুরেশির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস নেতাদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাঁকে এত দিন ছোঁয়ার সাহস করেননি গোয়েন্দারা। আর্থিক দুর্নীতি, সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার পাশাপাশি সুনন্দা পুষ্করের মৃত্যু রহস্যের সঙ্গেও জড়িয়েছে কুরেশির নাম। সম্প্রতি কুরেশি সংক্রান্ত একটি ফাইল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে পৌঁছয়। তার পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। নরেন্দ্র মোদী বৈঠক করেন রাজনাথ সিংহের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে কুরেশিকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। রাজনাথ সিংহের কথায়, “একাধিক অভিযোগ রয়েছে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সরকারের উপরে কোনও চাপ নেই। কোনও ভাবেই ছাড় পাবেন না কুরেশি।” কুরেশির বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে আয়কর দফতর, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, সিবিআই ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরো। সংস্থাগুলির মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তুলতে একটি সমন্বয় কমিটিও গঠন করেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর।

তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা এও জেনেছেন, প্রায়শই পাকিস্তানে যেতেন কুরেশি। সরকারি ভাবে ব্যবসার কাজেই পাকিস্তান সফর করতেন তিনি। কিন্তু গোয়েন্দাদের সন্দেহ তিনি ভারত-বিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ভারতে সন্ত্রাসের কাজে তাঁর টাকা ব্যবহার হতো বলেই মনে করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের মতে, হাওয়ালার মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানে টাকা পাঠাতেন। বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে।

ইউপিএ জমানায় কুরেশি সিবিআইয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগেও হস্তক্ষেপ শুরু করেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মতে, সিবিআইয়ের প্রাক্তন থেকে বর্তমান- সব শীর্ষ কর্তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলার নীতি নেন ওই ব্যবসায়ী। ২০১২ সালের নভেম্বরে সিবিআই কর্তা এ পি সিংহ অবসর নেন। তার পরেই ইউপিএসসি বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত হন তিনি। কুরেশির হস্তক্ষেপেই ওই নিয়োগ হয়েছিল বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। সম্প্রতি কুরেশির একটি দফতরে তল্লাশি চালায় গোয়েন্দারা। তদন্তে দেখা যায় ওই বাড়িটির আসল মালিক হলেন এ পি সিংহের মা। কুরেশির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকার কারণে দু’দিন আগে এ পি সিংহকে ইউপিএসসি-এর সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিতে নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রীর দফতর।

এ পি সিংহের পরে সিবিআইয়ের দায়িত্ব নেন রঞ্জিত সিন্হা। সদ্য প্রাক্তন সিবিআই কর্তার সঙ্গেও মধুর সম্পর্ক ছিল কুরেশির। দু’জনের মধ্যে কয়েকশো ঘণ্টা ফোনালাপ ছাড়াও রঞ্জিতের দু’বছরের কার্যকালে কুরেশি ১৫ মাসে ৭০ বার তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন।

তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা এখন দেখছেন কেবল সিবিআই নয়, ইন্টারপোলেও নিজের জাল পেতেছিলেন কুরেশি। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ইন্টারপোলে কর্মরত এক ভারতীয় অফিসারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে কুরেশির। দুবাইয়ের বাসিন্দা বিনোদ কারনাম ও আলানা সিরাজ আব্দুল রজ্জাক নামে দুই ব্যক্তির নামে রেড অ্যালার্ট জারি করেছিল মিশর সরকার। কুরেশি ইন্টারপোলের ওই অফিসারের কাছে ওই দুই ব্যক্তির নামে থাকা সতর্কবার্তা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন