বছর দুয়েকের ব্যবধানে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। শিলচরের প্রীতম ভট্টাচার্যের পর এ বার কাছাড়ের ফকরুদ্দিন আলি। ঘটনাস্থল সেই একই, বিহার। সে বার ছিল বিহারের নওগাছিয়া স্টেশন। এ বার স্টেশনের নাম কাটোয়া। প্রীতমের ব্যাগ খোয়া যায়। বাড়িতে সেই খবর দিয়ে প্রীতম ছিনতাইকারীদের পিছু ধাওয়া করেছিল। এ বার ফকরুদ্দিনও বিহারের কাটোয়া স্টেশনে ব্যাগ খোওয়া যাওয়ার খবর দেয় বাড়িতে। সে বার প্রীতমের মা বলেছিলেন, “ও নিয়ে চিন্তা করিস না।” এ বার ফকরুদ্দিনের বাবাও বলেছিলেন একই কথা, “ব্যাগের কথা বাদ দে। কাউকে কিছু না বলে বাড়ি চলে আয়।”
প্রীতমও কথা শোনেনি। ফকরুদ্দিনও শুনল না। প্রীতমের দেহ পাওয়া গিয়েছিল রেল লাইনের ধারে। আর ফকরুদ্দিনের দেহ মিলল কোচবিহারে, গুয়াহাটিমুখী ব্রহ্মপুত্র মেলের মধ্যে।
কাছাড়ের কাবুগঞ্জের লক্ষ্মীচরণ হাইস্কুলের শিক্ষক ফকরউদ্দিন (৩৬) বিএসসি, বিএড, এমবিএ পাশ করে এ বার ব্যাঙ্ককের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে দূর-শিক্ষা পাঠক্রমে বি-টেক (সিভিল) পাশ করেন। তার সার্টিফিকেট সংগ্রহের জন্য তিনি দিল্লি গিয়েছিলেন। ব্রহ্মপুত্র মেলে ফিরছিলেন। ফেরার পথে বুধবার রাতে বিহারের কাটোয়া স্টেশন থেকে বাবার সঙ্গে তাঁর মোবাইলে কথা হয়। ব্যাগ খোয়া যাওয়ার কথা তখনই বাবাকে জানিয়েছিলেন ফকরুদ্দিন। তারপর থেকে আর কোনও যোগাযোগই নেই। বাড়ি থেকে বার বার ফোন করে জানা যায় একই কথা, ফোনটি বন্ধ আছে। তাঁর মামা বাবুল খান জানান, পর দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতে কোচবিহারে তার মৃতদেহ উদ্ধারের খবর আসে। শনিবার কোচবিহার থানা থেকে মৃতদেহ নিয়ে গুয়াহাটি হয়ে আজ দেহ পৌঁছয় ফকরুদ্দিনের গ্রাম ভরাখাইয়ে। বিকেলে শেষ হয় তাঁর অন্ত্যেষ্টি।
একের পর এক বরাক উপত্যকায় ট্রেন যাত্রীদের খুনের ঘটনার প্রতিবাদে আজ ভরাখাইয়ের মানুষ শিলচর-ধোয়ারবন্দ-হাইলাকান্দি সড়ক অবরোধ করে। ফকরুদ্দিনের মৃতদেহ রাস্তায় রেখে তাঁরা ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করেন। ঘণ্টা দুয়েক ধরে অবরোধ চলায় শিলচর থেকে ঘটনাস্থলে যান এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অমিয়প্রভা দাস। তিনি তাঁদের দাবি যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ ওঠে।