বন্দিদের তত্ত্বাবধানে এ বার রেস্তোরাঁ চালু তিহাড় জেলে

আদর্শ সংশোধনাগার হিসেবে আরও এক ধাপ এগোল তিহাড়! জেল চত্বরেই গড়ে তোলা হল রেস্তোরাঁ। হোটেল ম্যানেজমেন্ট-এর পাঠ নিয়ে সেই রেস্তোরাঁ চালাবেন বন্দিরাই। রান্না থেকে পরিবেশন, খুঁটিনাটি সব দায়িত্বই তাঁদের। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁটি চালু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে এখনও বাকি কিছুটা সময়। জেলের পিআরও সুনীল গুপ্ত জানালেন, ঠিক দামে ভাল খাবার সরবরাহ করাটাই তাঁদের লক্ষ্য।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪৫
Share:

আদর্শ সংশোধনাগার হিসেবে আরও এক ধাপ এগোল তিহাড়!

Advertisement

জেল চত্বরেই গড়ে তোলা হল রেস্তোরাঁ। হোটেল ম্যানেজমেন্ট-এর পাঠ নিয়ে সেই রেস্তোরাঁ চালাবেন বন্দিরাই। রান্না থেকে পরিবেশন, খুঁটিনাটি সব দায়িত্বই তাঁদের।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁটি চালু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে এখনও বাকি কিছুটা সময়। জেলের পিআরও সুনীল গুপ্ত জানালেন, ঠিক দামে ভাল খাবার সরবরাহ করাটাই তাঁদের লক্ষ্য। গত এক মাস পর্যটন মন্ত্রকের অধীনে হোটেল ম্যানেজমেন্ট-এর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তিহাড়ের ‘সেমি ওপেন’ জেলের জনা পঞ্চাশ বন্দি। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ঘরদোর পরিপাটি রাখা, সব কিছুই হাতেধরে শেখানো হচ্ছে তাঁদের। ওই পঞ্চাশ বন্দির মধ্যে ১০ জনকে আপাতত রেস্তোরাঁর কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। পরে কাজের চাপ বাড়লে যোগ দেবেন প্রশিক্ষণরত সব বন্দিই।

Advertisement

সকাল দশটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত, সপ্তাহের সাত দিনই খোলা থাকবে পঞ্চাশ আসনের রেস্তোরাঁটি। এক কিলোমিটার পরিধিভুক্ত এলাকায় খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সুনীল গুপ্ত বললেন, রেস্তোরাঁ থেকে যে লাভ হবে তার পুরোটাই বন্দিদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। এ ক’দিনের অভিজ্ঞতায় জেল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, মোটামুটি ভালই চলছে তিহাড়ের রেস্তোরাঁ।

বারো বছরের কম সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদেরই মূলত রেস্তোরাঁর কাজে নিয়োগ করা হচ্ছে। জঘন্য কোনও অপরাধে জড়িত নয়, পাশাপাশি সদ্ব্যবহার রেখে চলেন এমন বন্দিদেরই বেছে নেওয়া হচ্ছে এই কাজের জন্য। রেস্তোরাঁর কাজে নিযুক্ত বন্দিরা শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে পুরোপুরি সুস্থ কি না তা-ও দেখে নেওয়া হচ্ছে।

বছর কয়েক আগে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলেও প্রায় একই রকম উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। উদ্যোক্তা ছিলেন খুনের চেষ্টার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলদিরাম সংস্থার মালিক প্রভুশঙ্কর অগ্রবাল। জেল চত্বরেই একটি ক্যানটিন গড়ে তুলেছিলেন তিনি। অন্য বন্দিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভুজিয়া তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। জেলে কাজ করে যা আয় হতো তা দিয়েই ক্যানটিনে প্রস্তুত খাবার কিনতেন বন্দিরা। আলিপুর সেন্ট্রাল জেল ছেড়ে প্রভু অগ্রবাল চলে যাওয়ার পরও সমবায় উদ্যোগে সেই ক্যানটিন চলছে এখনও।

তিহাড় জেলে সংস্কারের কাজ শুরু হয় সেই নব্বইয়ের দশকে। ইনস্পেক্টর জেনারেল কিরণ বেদীর হাত ধরে। তিহাড় জেলের নাম পরিবর্তন করে তিনিই তিহাড় আশ্রম নামকরণ করেছিলেন। বন্দি এবং কর্মচারীদের জন্য নানাবিধ উদ্যোগ শুরু করেছিলেন। তাঁর অধীনেই তিহাড়ের এক বন্দি আইএএস পরীক্ষায় সাফল্য লাভ করেন। দেশ জুড়ে আদর্শ সংশোধনাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় তিহাড়।

রেস্তোঁরা খোলার পাশাপাশি বন্দিদের স্বার্থে একাধিক প্রকল্পও শুরু হতে চলেছে তিহাড়ে। ‘আর্ট অব লিভিং ফাউন্ডেশন’-এর অধীনে শুরু হচ্ছে ‘হ্যাপিনেস প্রোগ্রাম’। শুধু তিহাড় নয়, দিল্লির আরও ১০টি সংশোধনাগারের বন্দিদের এক ছাদের তলায় এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাঁদের। মানসিক চাপ কাটিয়ে সমস্ত বন্দিই যাতে মূল স্রোতে ফিরে আসতে পারে সে দিকে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হবে। অপরাধ জগতে যাতে আর না ফিরে যান, তা সুনিশ্চিত করতে মনোবিদদের সাহায্য নিয়মিত কাউন্সেলিং করানো হবে বন্দিদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন