জিতনরাম মাঁঝি।—ফাইল চিত্র।
বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষার আগে জিতনরাম মাঁঝিকে বড় কোনও প্রশাসনিক বা আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে নিষেধ করল আদালত। জেডিইউয়ের নীতীশ-পক্ষের তরফে পটনা হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত মামলা রুজু করা হয়েছিল।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ করে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ছাড়তে নারাজ জিতনরাম গত কয়েক দিনে তাঁর সমর্থক মন্ত্রীদের সঙ্গে একের পর এক প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন। কখনও তিনি ঘোষণা করেছেন, রাজ্যে কারও কাছে ৫ একর পর্যন্ত জমি থাকলে তিনি বিনা খরচে বিদ্যুৎ পাবেন। কখনও বা পাসোয়ান সম্প্রদায়কে মহাদলিত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানিয়েছেন। জনপ্রিয় ওই সব সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হতে পারে ভেবে আশঙ্কায় পড়েন নীতীশ-গোষ্ঠীর নেতারা। চিন্তায় ছিল আরজেডি, কংগ্রেস, সিপিআইও। সে কারণে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের আগে জিতনরামকে বড় কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ার নির্দেশ দিতে ভারপ্রাপ্ত রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে আর্জি জানানো হয়। গত শুক্রবার জেডিইউ বিধায়ক নীরজ কুমার একই আবেদন নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ আদালত ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
এ দিকে, এ দিন নয়াদিল্লিতে বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী জানান, জিতনরামের আস্থা ভোটে বিজেপির অবস্থান ঠিক করতে ১৮ ফেব্রুয়ারি দলীয় বৈঠক করা হবে। তবে বিজেপি সূত্রে আভাস মিলেছে, ওই দিন জিতনরামের পক্ষে থাকতে নারাজ দলের অধিকাংশ নেতাই। তাঁদের বক্তব্য, জিতনরামকে সমর্থন করলে সাধারণ মানুষের সমর্থন নীতীশের দিকে ঘুরে যেতে পারে। তার চেয়ে জিতনরামের সরকার পড়লেই সুবিধা হবে বিজেপির।
কী ভাবে? বিজেপি সূত্রে খবর, সেই অর্থে জিতনরাম বড় মাপের কোনও নেতা নন। আস্থা ভোটে তাঁর পরাজয়ে তাই বিহারে ভোটের সমীকরণ তেমন ভাবে বদলাবে না। আস্থা ভোটে তাঁর পরাজয়ের পর সরকার গড়বেন নীতীশ কুমার। বিজেপি চাইছে, ওই সরকারের রাশ যেন লালু প্রসাদের হাতেও থাকে। তাতে রাজ্যে অরাজকতা বাড়তে পারে। সেই সুযোগে দলীয় প্রচারের এক দিকে মহাদলিত জিতনরামকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি থেকে সরানোর কথা বলবে বিজেপি। অন্য দিকে তুলে ধরবে রাজ্যের বেহাল পরিস্থিতির বিষয়টিও।
জিতনরামের আস্থা ভোটের আগে এ দিন সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন বিহার বিধানসভার স্পিকার উদয়নারায়ণ চৌধুরী। কিন্তু বিজেপি বৈঠক বয়কট করে। দিল্লিতে থাকায় সেখানে যেতে পারেননি জিতনরামও। জেডিইউ ও তার বন্ধু দলের প্রতিনিধিরা বৈঠকে যান। তবে সেখানে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। স্পিকার জানিয়েছেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ফের ওই বৈঠক হবে। এ দিনের বৈঠকে না যাওয়ার কারণ হিসেবে বিজেপি জানিয়েছে, স্পিকারের দফতর থেকে পাঠানো চিঠিতে নন্দকিশোর যাদবকে বিরোধী দলনেতার পরিবর্তে বিজেপি নেতা হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছিল। তারই প্রতিবাদে ওই বৈঠক বয়কট করা হয়। নন্দকিশোর বলেন, “আমি এতে অপমানিত হয়েছি। বিধানসভা এখন জেডিইউ অফিসে বদলে গিয়েছে।” স্পিকার উদয়নারায়ণ অবশ্য বলেন, “মুদ্রণ বিভ্রাটেই এমন ঘটেছে।”