ভোট ভাগে মিলবে সুফল, আশায় ত্রিপুরার সিপিএম

এ বেলা মোহনপুর, তো ও বেলা জিরানিয়া। এখন খয়েরপুর, তো পরের বেলায় মান্দাই, রানির বাজার। ২৪ ঘণ্টা প্রায় গেছোদাদার মতো ছুটে বেরিয়ে প্রার্থীকে প্রমাণ করতে হয় ‘আমি তোমাদেরই লোক।’ আর সে ভাবেই ছুটে বেরাচ্ছেন সিপিএম প্রার্থী শঙ্করপ্রসাদ দত্ত।

Advertisement

আশিস বসু

আগরতলা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৫০
Share:

এ বেলা মোহনপুর, তো ও বেলা জিরানিয়া। এখন খয়েরপুর, তো পরের বেলায় মান্দাই, রানির বাজার। ২৪ ঘণ্টা প্রায় গেছোদাদার মতো ছুটে বেরিয়ে প্রার্থীকে প্রমাণ করতে হয় ‘আমি তোমাদেরই লোক।’ আর সে ভাবেই ছুটে বেরাচ্ছেন সিপিএম প্রার্থী শঙ্করপ্রসাদ দত্ত।

Advertisement

পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে গত বারের বিজয়ী সাংসদকে সরিয়ে এ বারে দলের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্করপ্রসাদকে প্রার্থী করেছে সিপিএম। ২০১৩ সালের রাজ্য বিধানসভা কিংবা ২০০৯-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের যা ফলাফল, তাতে শাসক দলের ব্যাকফুটে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নয়। পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা এলাকার ৩০টি বিধানসভা আসনের অধিকাংশই সিপিএমের দখলে। পশ্চিমবঙ্গের মতো কোনও নন্দীগ্রাম কিংবা সিঙ্গুর বা নেতাই-কাণ্ডও ঘটেনি এখানে। স্বভাবতই সিপিএম প্রার্থী কিছুটা হলেও স্বস্তিতে। তবু পরিশ্রমে খামতি নেই সিপিএমের। কেন? বিরোধী পক্ষ তো বহুধা বিভক্ত। সে দিক থেকেও ভোট ভাগাভাগির একটা সুফল তো শাসক সিপিএমের রয়েইছে। কিন্তু সিপিএম নেতৃত্বের নির্দেশ, আত্মসন্তুষ্টির কোনও জায়গা নেই। ভোট ময়দানে কংগ্রেস ছাড়াও এ বার রাজ্য-রাজনীতিতে যে আবির্ভাব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের! সিপিএম বিষয়টিকে লঘু করে দেখতে রাজি নয় কোনও ভাবেই।

সিপিএমের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে আমরা যে ভুল করেছিলাম, সেটা এখানে করতে চাই না। কোনও কিছুই লঘু করে দেখার কোনও অবকাশ নেই।” ত্রিপুরায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস নিঃসন্দেহে রাজ্য-রাজনীতির পুরনো কুশীলবদের নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেছে। ত্রিপুরার প্রথম জনসভাতেই মমতা পরিবর্তনের ডাক দেন। সেই ডাকে ভোটদাতারা কতখানি সাড়া দেবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু আগে ভাগে মমতার ডাকে সাড়া দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দীর্ঘদিনের যে সাংসদদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা পুঞ্জীভূত হতে পারত, সিপিএম নেতৃত্ব আগেভাগেই তাঁদের সরিয়ে দিয়েছেন। রাজ্যের দু’টি লোকসভা আসনেই নিয়ে এসেছেন নতুন মুখ।

Advertisement

এই কেন্দ্রে অবশ্য কংগ্রেস প্রার্থী অরুণোদয় সাহা মাঠ-ময়দানের রাজনীতির অঙ্গনে একেবারেই নবাগত। যদিও কংগ্রেস অফিসের ভোটকর্মীরা বলছেন, “স্যার রাজনীতির লোক না হলেও, সমান তালে আমাদের সঙ্গে পথসভা, মিটিং মিছিল করছেন।” প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অরুণোদয়বাবু অকপটে স্বীকার করছেন, “রাজনীতির কায়দাকানুন, ভাষা, অঙ্ক আমি জানি না। তবে ছাত্র হিসেবে আমি মনোযোগী, সকলের কাছেই রাজনীতির পাঠ নিচ্ছি।” প্রচারে তাঁর কথায় ইউপিএ সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান, সরকারের স্বনির্ভর যোজনা, ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রকল্প-সহ গ্রামীণ অর্থনীতি ও সামাজিক সুরক্ষাই প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে বিরোধী দলগুলির সম্পর্কে তীব্র আক্রমণাত্মক হওয়ার রাজনীতি ‘স্যার’ এখনও পুরোপুরি শিখে উঠতে পারেননি।

তবে রতন চক্রবর্তী অবশ্য আক্রমণাত্মক। ত্রিপুরায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভরসা রতনবাবু বিকল্পবাদেই বিশ্বাসী। তাঁর কথায়, “কিন্তু রাজ্যের মানুষ তো বিকল্প চাইছে। বিকল্প সরকারের, বিকল্প বিরোধী দলের।”

একটু অন্য রকম শোনালেও জোরের সঙ্গে এই কথাটাই সভা থেকে সভায় বলছেন রতনবাবু। পশ্চিম ত্রিপুরা কেন্দ্রে তিনিই তো তৃণমূলের ভোটপ্রার্থী। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরার কংগ্রেস-জোট সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী রতনবাবু দু’বারের ‘কংগ্রেস’ বিধায়কও। একের পর এক উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন সিপিএমের ‘দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও অত্যাচারের’ কাহিনি। পাওয়া ও না-পাওয়ার সেই চিরাচরিত দ্বন্দ্বের উপর ভরসা করেন রতনবাবুরা। তাঁর বিশ্বাস, “রাজ্যের দুর্বল বিরোধী রাজনীতির সুযোগে সুফল নিয়ে যেত শাসক দল। এ বার তা হবে না।”

আর সারা দেশে প্রাক্-নির্বাচনী সমীক্ষার নিরিখে যাঁরা প্রায় সরকার গড়ার মুখে দাঁড়িয়ে সেই বিজেপির খবর কী? নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে সরকার হচ্ছে, এই বার্তা নিয়েই ত্রিপুরা-পশ্চিম আসনে তথা দলের রাজ্য সভাপতি সুধীন্দ্র দাশগুপ্ত ভোটদাতাদের সর্মথন আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন