মায়াবতী আসবেন, চাষের খেত রাতারাতি হেলিপ্যাড

প্রাণ গিয়েছিল আগেই। এ বার গেল খেতের ফসলটুকুও। প্রাপ্তির ঝুলিতে কেবলই দিনভর নেতা-নেত্রীদের আনাগোনা আর গুচ্ছখানেক প্রতিশ্রুতি। বদায়ূঁতে ধর্ষিতাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আজ কাটরা গ্রামে গিয়েছিলেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। সকাল থেকেই তাই সাজো সাজো রব। নেত্রীকে স্বাগত জানাতে গ্রামেরই এক চাষির জমির ফসল কেটে বানানো হয় অস্থায়ী হেলিপ্যাড।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লখনউ শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০২:৫৭
Share:

বদায়ূঁর খেতে দাঁড়িয়ে মায়াবতীর হেলিকপ্টার। ছবি: পি টি আই।

প্রাণ গিয়েছিল আগেই। এ বার গেল খেতের ফসলটুকুও। প্রাপ্তির ঝুলিতে কেবলই দিনভর নেতা-নেত্রীদের আনাগোনা আর গুচ্ছখানেক প্রতিশ্রুতি। বদায়ূঁতে ধর্ষিতাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আজ কাটরা গ্রামে গিয়েছিলেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। সকাল থেকেই তাই সাজো সাজো রব। নেত্রীকে স্বাগত জানাতে গ্রামেরই এক চাষির জমির ফসল কেটে বানানো হয় অস্থায়ী হেলিপ্যাড। কাছে একটা মঞ্চ আর অস্থায়ী ছাউনিও তড়িঘড়ি তৈরি করে ফেলেন দলের কর্মীরা।

Advertisement

জোড়া গণধর্ষণ ও খুন নিয়ে রাজনীতি অবশ্য ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদস্তুর। গত কাল ধর্ষিতাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তাঁদের বাড়িতে যান কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। মায়াবতী নিজের প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন আগেই। আজ গেলেন নিজে। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে এ দিন প্রায় ২০ মিনিট কথা বলেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের বলেন, ধর্ষিতা দুই বোনের পরিবার সরকারি অর্থসাহায্য নেবেন না বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু দলিত নেত্রী তাঁদের পাঁচ লক্ষ টাকা করে সাহায্য দিতে চান। সেই টাকা তাঁরা ফেরাবেন না বলে কথা দিয়েছেন, দাবি মায়াবতীর। কাটরা যাওয়ার আগে সকাল বেলা লখনউয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “রাজ্য শাসনের নামে অখিলেশ আসলে জঙ্গল-রাজ চালাচ্ছেন। সরকার বদায়ূঁর ঘটনা থেকে হাত ঝেড়ে ফেলতে চাইছে দেখেই প্রতিবাদ করেছিলাম।” একের পর এক অপকীর্তি এ ভাবে চলতে থাকলে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি করবেন, হুঁশিয়ারি মায়াবতীর।

দলিত নেত্রী ছাড়াও এ দিন সকালে গ্রামে যান স্থানীয় সাংসদ, সমাজবাদী পার্টির নেতা ধর্মেন্দ্র যাদব। সাংসদকে হাতের নাগালে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন গ্রামবাসীরা। দলিত বলেই পুলিশ প্রথমে পাত্তা দেয়নি, এমন অভিযোগও ধর্মেন্দ্রর কাছে করেন তাঁরা।

Advertisement

দলিত রাজনীতির ফায়দা তুলতে ময়দানে নেমে পড়েছেন রামবিলাস পাসোয়ানও। তবে তিনি যাবেন আগামী কাল। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী তিনি। রামবিলাসের সঙ্গে তাঁর সাংসদ ছেলে চিরাগ পাসোয়ানও থাকবেন বলে খবর।

বাড়িতে শৌচাগার না থাকায় গত মঙ্গলবার বাড়ির বাইরে বেরোতে বাধ্য হয়েছিল বদায়ূঁর কাটরা গ্রামের দুই বোন। বড় জনের বয়স ১৫, আর তার তুতো বোন ১৪ বছরের। মেয়েদের খুঁজে না পেয়ে পুলিশের কাছে যান বাড়ির লোক জন। খালি হাতে ফিরতে হয় সেখান থেকে। তখনই খবর আসে, গ্রামেরই এক আম গাছের ডাল থেকে ঝুলছে দুই বোনের দেহ।

বীভৎস এই গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সামনে আসতেই তোলপাড় শুরু হয় দেশ জুড়ে। চাপের মুখে কাল সিবিআই তদন্তে সায় দেন অখিলেশ। বদলি করা হয় মুখ্যসচিব জাভেদ উসমানিকেও। আজ রাতে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে বদায়ূঁর এক শ্রম অফিসারকেও সাসপেন্ড করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিবিআই অস্ত্র বা সচিব বদলির পরও রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় থামেনি। তাই মুখরক্ষার তাগিদেই আরও এক অফিসারকে শাস্তির মুখে পড়তে হল বলে মনে করা হচ্ছে।

জোড়া গণধর্ষণ ও খুনে সাত জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল থানায়। তাদের মধ্যে ধরা পড়েছে পাঁচ জন। এ দিন জেলার পুলিশ সুপার অতুল সাক্সেনা জানান, ধৃতদের দু’জন নিজেদের অপরাধ কবুল করেছে। তবে আদালতে বেশির ভাগ সময়ই এরা নিজেদের বয়ান বদল করে। তাই ধৃতদের বক্তব্যের উপর ভরসা না করে জোরালো প্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টা করছে পুলিশ।

আইনের কড়াকড়ি করেও আটকানো যায়নি ধর্ষণ। বরং সামনে এসেছে একের পর এক নৃশংস ঘটনা। তাই ধর্ষিতাদের সাহায্যের জন্য এ বার প্রতি জেলায় বিশেষ কেন্দ্র তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী মেনকা গাঁধী।

বদল আসছে বদায়ূঁতেও। বাড়িতে শৌচালয় না থাকাতেই সুযোগ হাতের মুঠোয় পেয়ে গিয়েছিল অপরাধীরা। দুই কিশোরীর প্রাণের বিনিময়ে এ বার তাই ঘরে ঘরে শৌচাগার পেতে চলেছেন কাটরা গ্রামের বাসিন্দারা। আজই এই কথা জানিয়েছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আগামী কাল থেকে শুরু হবে সেই কাজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন