অভিযোগ অনুগামীর বিরুদ্ধেই

মমতা সেরা বলেও তৃণমূলে নারাজ অণ্ণা

রামলীলা কাণ্ডে শুধু মুখই পোড়েনি, খাস রাজধানীর বুকে লোক টানার ব্যাপারেও অণ্ণা হজারের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে গোটা দেশের সামনে। প্রবীণ এই গাঁধীবাদী নেতার আচরণে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি ছেড়েছেন ‘একলা চলো’-র ডাক দিয়েই। চাপে পড়ে দিল্লির সেই ভিড়শূন্য সভার পরে প্রথম বার মুখ খুলে ফের মমতার পাশেই দাঁড়ালেন অণ্ণা। জানালেন, মমতাই দেশের সেরা মুখ্যমন্ত্রী। রামলীলা ময়দানের যৌথসভায় তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে গত দু’দিন ধরে বিভিন্ন মহলে জল্পনা চলছিল। কিন্তু মমতা একবারের জন্যও অণ্ণার বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি। উল্টে অণ্ণার শারীরিক কুশল কামনা করে যাবতীয় বিতর্কে জল ঢেলে দিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫৬
Share:

সাংবাদিকদের মুখোমুখি। শুক্রবার নয়াদিল্লির এক অনুষ্ঠানে অণ্ণা হজারে। ছবি: পিটিআই।

রামলীলা কাণ্ডে শুধু মুখই পোড়েনি, খাস রাজধানীর বুকে লোক টানার ব্যাপারেও অণ্ণা হজারের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে গোটা দেশের সামনে। প্রবীণ এই গাঁধীবাদী নেতার আচরণে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি ছেড়েছেন ‘একলা চলো’-র ডাক দিয়েই। চাপে পড়ে দিল্লির সেই ভিড়শূন্য সভার পরে প্রথম বার মুখ খুলে ফের মমতার পাশেই দাঁড়ালেন অণ্ণা। জানালেন, মমতাই দেশের সেরা মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

রামলীলা ময়দানের যৌথসভায় তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে গত দু’দিন ধরে বিভিন্ন মহলে জল্পনা চলছিল। কিন্তু মমতা একবারের জন্যও অণ্ণার বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি। উল্টে অণ্ণার শারীরিক কুশল কামনা করে যাবতীয় বিতর্কে জল ঢেলে দিয়েছিলেন। আজ দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে গিয়ে সেই সৌজন্যই যেন ফিরিয়ে দিতে চাইলেন অণ্ণা। দেশের সব মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে মমতাই সবচেয়ে ভাল মন্তব্য করে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রামলীলার ঘটনার পরেও দু’পক্ষের মধ্যে অন্তত প্রকাশ্যে কোনও তিক্ততা নেই। অণ্ণার কথায়, “মমতার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। দেশের সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে তিনিই সেরা। তাঁর ত্যাগ, চরিত্র, মতাদর্শ বিচার করেই আমি তাঁকে সমর্থন করেছিলাম।”

তবে একই সঙ্গে আজ মমতার দল সম্পর্কে নিজের পুরনো অবস্থান বদলে ফেলেছেন অণ্ণা। মমতার পক্ষে সওয়াল করলেও অণ্ণা জানিয়েছেন, তৃণমূলের হয়ে কোনও প্রচার চালাবেন না তিনি। অথচ মাত্র কয়েক দিন আগে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এই কনস্টিটিউশন ক্লাবেই মমতাকে পাশে বসিয়ে গোটা দেশে তৃণমূল প্রার্থীদের হয়ে প্রচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অণ্ণা। এ দিন তিনি বলেন, “আমি মমতাকে সমর্থন করেছিলাম, ওঁর দলকে নয়।”

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নেও নিজের সুর এ দিন বদলে ফেলেছেন অণ্ণা। গত এক মাসে বিভিন্ন জায়গায় মমতাই দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য বলে মন্তব্য করলেও আজ সেই বক্তব্য থেকে সরে আসেন তিনি। উল্টে বলেন, “যে ব্যক্তিই প্রধানমন্ত্রী হোন না কেন, দেশের পরিস্থিতি উজ্জ্বল নয়। জনতার প্রতিনিধিরই প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত।”

সে দিন অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে রামলীলার জনসভায় না এলেও আজ কিন্তু অণ্ণা সম্পূর্ণ অন্য কথা জানান। এ দিন তাঁর মধ্যে অসুস্থতার কোনও চিহ্নই দেখা যায়নি। অণ্ণা এ দিন জানান, ভিড় হয়নি বলেই তিনি রামলীলায় যাননি। কিন্তু তাঁর সভাতেও কেন আসেননি লোক? অণ্ণার মতে, সে দিন ভিড় না হওয়ার পিছনে গভীর চক্রান্ত ছিল। এবং সেই চক্রান্তের পিছনে অণ্ণা ও মমতা শিবিরের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী সন্তোষ ভারতীর দিকেই আঙুল তুলেছেন বর্ষীয়ান ওই নেতা। তাঁর কথায়, “সে দিন এই গণ্ডগোলের পিছনে রয়েছেন সন্তোষ ভারতী।” অণ্ণার কথায়, “ওই জনসভা নিয়ে দু’পক্ষকেই ভুল বোঝানো হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, মমতার সভা। তিনি লোক নিয়ে আসবেন। আর মমতাকে বলা হয়েছে, লোক আনার দায়িত্বে রয়েছেন অণ্ণা।” এর পরেই অণ্ণা বলেন, “কেন এ ভাবে দু’পক্ষকেই ভুল বোঝানো হল? আমি সে দিন এগারোটা থেকে দু’টো পর্যন্ত ভিড়ের দিকে নজর রাখছিলাম। বেলা এগারোটায় যে ভিড়, দু’টোতেও তাই! অথচ, এই রামলীলা এক সময় টানা ১২ দিন ভরে থেকেছে।”

ভিড় না হওয়ার পিছনে অণ্ণা রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ তুললেও অনেকেই বলছেন, সে সময় অণ্ণার পাশে থাকতেন দক্ষ সংগঠক অরবিন্দ কেজরীবাল। যিনি রামলীলা ভরাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই ভিড়ের প্রায় পুরোটাই এখন কেজরীবালের সঙ্গে চলে গিয়েছে। অথচ এই সত্যটা উপলব্ধি করে উঠতে পারেননি অণ্ণা। তাই তিনি এ ভাবে চক্রান্তের অভিযোগ তুলছেন।

রামলীলার সভা নিয়ে অণ্ণা যে তাঁর দিকে আঙুল তুলেছেন, তা গুয়াহাটি যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে বসে জানতে পারেন সন্তোষ ভারতী। অণ্ণার অভিযোগ শুনেই তিনি দিল্লি ফিরে যান। তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অণ্ণার অভিযোগকে খারিজ করে দিয়ে সন্তোষ বলেন, “অণ্ণা কেন এ কথা বলছেন, জানি না। কেজরীবাল অণ্ণা শিবির ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে যখন তিনি একা, তখন ওঁর সঙ্গে আমিই ছিলাম। ঘটনার দিন অণ্ণা আমায় জানান, যে তাঁর শরীর খারাপ। তাই তিনি আসতে পারবেন না। এখন বলছেন, ভিড় ছিল না বলে আসেননি!” এই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, “সে দিন ভিড় হয়তো অল্প ছিল। কিন্তু যারা এসেছিলেন, তাঁরা অণ্ণার কথাই শুনতে এসেছিলেন। সভায় অল্প ভিড় দেখে অণ্ণা কম সময় বলতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি একেবারেই এলেন না!”

অণ্ণার এ দিনের বক্তব্যের পরেও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের শীর্ষ নেতা মুকুল রায়ের বক্তব্য, দিল্লির ঘটনার প্রভাব লোকসভা ভোটে পড়বে না। তাঁর কথায়, “জাতীয় স্তরে এর কোনও প্রভাব পড়বে না।” আর রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন বলেন, “সে দিন জনসভার পরে সৌজন্য দেখিয়েই মমতার যা বলা উচিত ছিল, তা তিনি বলেছেন। আমরা ওঁর সুস্থতা কামনা করি। আর বাড়তি কিছু বলার নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন