এক জন বললেন, চলবে না। আর এক জন বললেন, কেন চলবে না!
দিল্লিতে ধর্ষণ-কাণ্ডের জেরে গোটা দেশ জুড়ে উবের-সহ সব ধরনের অনলাইন ট্যাক্সি পরিষেবা বন্ধ করতে যখন নির্দেশ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, তখন সেই নির্দেশের বিরোধিতায় সরব খোদ কেন্দ্রীয় সড়ক, পরিবহণ ও জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। শুক্রবার রাতে উবের ট্যাক্সিতে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ দিনভর সরকার থেকে বিরোধী এই মতবিরোধের সাক্ষী রইল সব পক্ষই। পাশাপাশি দিল্লিতে উবেরের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে সংস্থার জেনারেল ম্যানেজারকে (বিপণন) জেরা করছে দিল্লি পুলিশ।
আজ রাজ্যসভায় নিজে থেকেই এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেছেন, “দেশের সব রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতি আমাদের নির্দেশ: উবের-সহ সব অনলাইন ট্যাক্সি পরিষেবা যেগুলির সরকারি বৈধতা নেই, সেগুলি দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হোক।” সঙ্গে তিনি এ-ও স্পষ্ট করেন, সরকার অনলাইন ট্যাক্সি পরিষেবা নিষিদ্ধ করে দিচ্ছে, এমন ভাবার কারণ নেই। বলা ভাল, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। দিল্লিতে সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনাকে ‘জাতীয় লজ্জা’ আখ্যা দিয়ে রাজনাথের বক্তব্য, “ট্যাক্সি সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা উচিত নয়।”
অথচ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রাজনাথেরই সতীর্থ নিতিন গডকড়ী সরাসরি আঙুল তুলেছেন উবের বন্ধের নির্দেশ নিয়ে। কেন্দ্রীয় সড়ক, পরিবহণমন্ত্রী বলেছেন, “বৈদ্যুতিন ক্ষেত্রে উন্নতির জেরে পরিবহণ ব্যবস্থায় নানা বদল আসছে। রেল বা বাস দুর্ঘটনার পরে যেমন সেই সব পরিষেবা নিষিদ্ধ করা যায় না, ট্যাক্সির ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই।” নিতিনের এই কথা নিয়ে রাজনাথ সিংহকে পরে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
নিতিন ছাড়াও সরকারি এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস সাংসদ রাজীব শুক্ল এবং অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেছেন, “ট্যাক্সি বন্ধ করে কিছুই হবে না। এ ব্যাপারে সঠিক পদ্ধতি এবং নীতি প্রয়োজন। পুলিশ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।” শুক্লর বক্তব্য, কোনও সংস্থা যদি ভুল করে থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু ব্যক্তির ভুলের মাসুল কেন সংস্থাকে দিতে হবে? তবে গডকড়ীর মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন কংগ্রেসের আর এক সাংসদ রেণুকা চৌধুরি। তাঁর মতে, আমেরিকাতেই উবের নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যেই নানা জটিলতায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে উবের পরিষেবা। সেখানে গডকড়ী এমন মন্তব্য করেন কী ভাবে? এ জন্য তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।
কিন্তু ভারতে উবেরের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার গগন ভাটিয়াকে (বিপণন) জেরা করতে গিয়ে অবাক দিল্লি পুলিশ। রাজধানীতে উবেরের হয়ে কাজ করেন অন্তত চার হাজার চালক। কিন্তু তাঁদের কারও সম্পর্কে পুলিশি খোঁজখবর করা হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে অন্ধকারে সংস্থার ম্যানেজার। গগন জানান, তাঁরা শুধু খদ্দেরের সঙ্গে ফোনে কী ভাবে কথা বলতে হবে ও উবের অ্যাপ স্মার্টফোনে ব্যবহার করতে হবে, তার জন্য চালকদের তিন-চার বার প্রশিক্ষণ দেন। এর বেশি কিছুই জানে না সংস্থা। যা শোনার পরে দিল্লি পুলিশ মনে করছে আরও ঝামেলায় পড়বে উবের। কারণ সংস্থার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই জালিয়াতি ও আইনি নির্দেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। দিল্লি পুলিশপ্রধান বি এস বাসি জানিয়েছে, উবের প্রতিশ্রুতি পালন না করায় তাদের বিরুদ্ধে আর কী কী আইনি পদক্ষেপ করা হবে, ভাবছে পুলিশ। উবের নিয়ে সরকারকে অবহিত করতে বাসি আজ বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গেও।
রেলে নিরাপত্তায় বিশেষ অ্যাপ
বিপদে পড়লে বাঁচাবে বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন। ট্রেনে মেয়েদের নিরাপত্তা বাড়াতে এ রকমই এক পরিকল্পনা করছেন রেল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার নয়াদিল্লি স্টেশনে ওয়াই-ফাই পরিষেবার উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। সেখানেই তিনি বলেন, ভারতীয় রেলের প্রযুক্তিবিদরা এ বার একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ তৈরি করছেন। ফোনে তা ডাউনলোড করতে হবে। ট্রেনে সফরকালে কোনও মহিলা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়লে, ওই অ্যাপ্লিকেশনে এক বার হাত ছোঁয়ালেই বিপদবার্তা পৌঁছে যাবে জিআরপি আর আরপিএফের কাছে। কাছের স্টেশনের স্টেশন মাস্টারকেও সজাগ করবে ওই অ্যাপ। ট্রেনের প্রত্যেকটি কামরায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েও এ দিন নিরাপত্তা জোরদার করার কথা বলেছেন রেলমন্ত্রী।