সিবিআই চেয়ে মুন্ডের অন্ত্যেষ্টি ঘিরে তাণ্ডব

শোকের আবহের মধ্যেই বিক্ষোভ, পাথরবৃষ্টি আর পুলিশের লাঠি। বুধবার বিকেলে মহারাষ্ট্রের বিড় সাক্ষী রইল এমনই অভিজ্ঞতার। সদ্যপ্রয়াত কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গোপীনাথ মুন্ডের অন্ত্যেষ্টি ঘিরে তাঁর সমর্থকদের তাণ্ডবে পুড়ল গাড়ি। ঘেরাও হলেন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। দাবি উঠল সিবিআই তদন্তের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বিড় শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৪ ০২:৫২
Share:

শোকের আবহের মধ্যেই বিক্ষোভ, পাথরবৃষ্টি আর পুলিশের লাঠি। বুধবার বিকেলে মহারাষ্ট্রের বিড় সাক্ষী রইল এমনই অভিজ্ঞতার। সদ্যপ্রয়াত কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গোপীনাথ মুন্ডের অন্ত্যেষ্টি ঘিরে তাঁর সমর্থকদের তাণ্ডবে পুড়ল গাড়ি। ঘেরাও হলেন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। দাবি উঠল সিবিআই তদন্তের।

Advertisement

শুরুতে সব ঠিকই ছিল। গোপীনাথ মুন্ডের অন্ত্যেষ্টিতে এ দিন জমায়েত হন হাজার হাজার মানুষ। মুন্ডের নিজের গ্রাম এবং নির্বাচনী এলাকা বিড়ে বিজেপি নেতা-সমর্থকদের পাশাপাশি নেতাকে শেষ বারের মতো দেখতে এসেছিলেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। কড়া রোদ উপেক্ষা করে যাঁরা পৌঁছতে চেয়েছিলেন প্রয়াত নেতার কাছাকাছি। তবে তার সুযোগ না পেয়ে ক্রমশ অধৈর্য হয়ে পড়েন তাঁরা। আজ অন্ত্যেষ্টি শেষ হতেই কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বিড়। মুন্ডের মৃত্যুতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে সিবিআই তদন্তের দাবি জানান শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে-সহ বিভিন্ন নেতা।

গত কাল দিল্লি থেকে নিজের রাজ্যে ফেরার কথা ছিল মুন্ডের। বিমানবন্দরের পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ করে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন জানান, সিট বেল্ট বাঁধলে হয়তো বেঁচে যেতেন মুন্ডে। তাঁর কথায়, “অনেকেরই ভুল ধারণা আছে, গাড়ির পিছনের আসনে বসলে সিট বেল্ট বাঁধার প্রয়োজন নেই।” বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালানো হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

Advertisement

লোকসভা ভোটে জয় ও কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ার পর আজ মুন্ডেকে সামনে রেখে বিজয় যাত্রা বেরনোর কথা ছিল বিড়ে। মহারাষ্ট্রের পারলির টোটলা ময়দানে সংবর্ধনারও আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু নিয়তির পরিহাসে আজ মুন্ডের শায়িত দেহ সেই ময়দানেরই ঢিল ছোড়া দূরত্বে পৌঁছয় সৎকারের জন্য। আজ সকালে প্রথমে মুম্বই থেকে লাতুরে নিয়ে আসা হয় তাঁর দেহ। তার পর পারলির নাথরা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় মুন্ডেকে। বৈজনাথ চিনিকল চত্বরে শায়িত রাখা হয় মন্ত্রীর দেহ। সেখানেই শ্রদ্ধা জানান সবাই। মুখাগ্নি করেন বড় মেয়ে পঙ্কজা। পারলিরই বিধায়ক তিনি। চার দিকে শোনা যায় ‘গোপীনাথ মুন্ডে অমর রহে’ ধ্বনি। চোখের জলে তাঁকে বিদায় জানান পরিবার, ভক্তরা। ছিলেন মুন্ডে-ঘনিষ্ঠ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। পুণেতে ছাত্রনেতা হওয়ার সময় থেকেই যিনি মুন্ডের ছায়াসঙ্গী। দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীবপ্রতাপ রুডি, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিক্কর, শিবসেনাপ্রধান উদ্ধব ঠাকরে, এমএনএস প্রধান রাজ ঠাকরে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এবং অন্য রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়করা।

কিন্তু সৎকার শেষ হতেই ছবিটা যায় বদলে। অনেক ক্ষণ ধরে অপেক্ষার পরেও প্রয়াত মন্ত্রীর কাছে পৌঁছতে না পেরে খেপে যান সমর্থকরা। রাগে প্রথমে পাথর ছুড়তে শুরু করে কেউ কেউ। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামতে হয় পুলিশকে। তাতেও কাজ হচ্ছে না দেখে এগিয়ে আসেন স্বয়ং পঙ্কজা। মাইক হাতে তুলে তিনি সবাইকে শান্ত হতে আবেদন জানান। তাতে সাময়িক ভাবে ক্ষোভ প্রশমিত হলেও ফের কিছু ক্ষণের মধ্যেই জোরালো হয়ে ওঠে সিবিআই তদন্তের দাবি। এ বার আর থামানো যায়নি জনতাকে। শুরু হয় তাণ্ডব আর ভাঙচুর। এক দল একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘেরাও করা হয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের গাড়ি। সেই সময় তিনি বিড় থেকে হেলিপ্যাডের দিকে যাচ্ছিলেন। উন্মত্ত জনতা চহ্বাণের গাড়ির বনেটে ঘুষি মারতে শুরু করে। ভিতরে বসে থাকা ছাড়া উপায় ছিল না চহ্বাণের। অবস্থা জটিল হয়, যখন লোক হটাতে পুলিশও লাঠি চালায়। উত্তেজনার মধ্যেই সিবিআই তদন্তের পক্ষে সওয়াল করেন উদ্ধব ঠাকরেও। বলেন, “পার্টির কর্মী-সমর্থকদের ভাবাবেগকে সম্মান জানাতেই হবে।”

আজই এইমস থেকে দিল্লি পুলিশের হাতে এসেছে প্রয়াত মন্ত্রীর প্রাথমিক ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। যাতে বলা হয়েছে, ঘাড়ের চোট ও যকৃতের ক্ষত, সব মিলিয়ে দুর্ঘটনাজনিত ধাক্কা থেকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যু হয়েছে মুন্ডের। বাইরে থেকে দেখা গিয়েছে, শুধু তাঁর নাকের কাছে এবং ডান চোখের নীচে কিছুটা ক্ষত রয়েছে। রিপোর্টে দাবি, মূল ক্ষতি হয় মেরুদণ্ডে। এমন একটি জায়গা থেকে মেরুদণ্ড ভেঙেছে যে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফরেন্সিক প্রমাণ হিসেবে গাড়ি থেকে মুন্ডের চুলের নমুনা সংগ্রহ হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন