Mentally Disabled

সুস্থ হয়ে ওঠা মানসিক রোগীকে মূল স্রোতে ফেরাতে পাশে থাকার বার্তা

বেনিয়াপুকুরের সভাগৃহের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্তা থেকে অন্যান্য অতিথিরা সকলেই মানলেন, মানসিক সমস্যা কাটিয়ে সুস্থ হওয়া মানুষদের সমাজে জায়গা করে দেওয়ার দায়িত্ব প্রত্যেকেরই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৪ ০৫:১৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

হাসপাতালে বন্দি থাকাই, একমাত্র পথ নয়। পরিবার, বন্ধু কিংবা সমাজের সকলের যৌথ ভালবাসায় স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হতে পারেন তাঁরাও। মঙ্গলবার শহরের এক সভাগৃহে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে এমনই বার্তা দিলেন, মানসিক সমস্যা কাটিয়ে ওঠা মানুষেরা। কান্না ভেজা গলায় তাঁদের অনেকেই বললেন, ‘‘আমরাও অনেক কিছু করতে পারি। বাড়ি ফিরে কখনও কারও অসুবিধা করব না। আমাদের থেকে মুখ ফেরাবেন না।’’

Advertisement

বেনিয়াপুকুরের সভাগৃহের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্তা থেকে অন্যান্য অতিথিরা সকলেই মানলেন, মানসিক সমস্যা কাটিয়ে সুস্থ হওয়া মানুষদের সমাজে জায়গা করে দেওয়ার দায়িত্ব প্রত্যেকেরই। মানসিক সমস্যায় আক্রান্তদের নিয়ে রাজ্য জুড়ে কাজ করা একটি সংগঠনের তরফে এ দিন ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সংগঠনের কর্ণধার তথা মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মী রত্নাবলী রায়ের কথায়, ‘‘মানসিক হাসপাতালে দিন কাটানো মানেই সব শেষ নয়। বরং সুস্থ হয়ে তাঁরা নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারেন। তাঁরা যাতে পরিবার ও সমাজে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন, সেটা সুনিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’’

যেমন, পর পর দু’বার পাভলভ মানসিক হাসপাতালে থাকা ব্যারাকপুরের পম্পা গুহকে ফেরাতে চায়নি তাঁর পরিবার। মা, নিজের মেয়ে সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। দমে যাননি পম্পা। রত্নাবলীদের সংগঠনের হাত ধরেই এসেছিলেন মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠা মানুষকে কাজের প্রশিক্ষণ দিতে তৈরি সরকারি হোমে। সেখানে থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন স্বাস্থ্য পরিষেবার। এ দিন পম্পা বলেন, ‘‘মানসিক হাসপাতালে ছিলাম শুনে অনেকে চাকরি দিতে চাননি। প্রশিক্ষণের পরে, বালিগঞ্জের এক নার্সিংহোমে অ্যাটেনডেন্টের কাজ করছি।’’ সুভাষগ্রামে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন পম্পা। সপ্তাহান্তে যান মেয়েকে দেখতে।

Advertisement

স্ত্রী, মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ নেই গিরিশ পার্কের বাসিন্দা, ক্যানিং স্ট্রিটের এক দোকানের কর্মী দীপক সাউয়ের। বললেন, ‘‘এখন একা থাকতে কষ্ট হয় না। কারণ, কাজে যাই, মেলামেশাও করি।’’ স্নাতকস্তরে পড়ার সময়েই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে বাগবাজারের ভাস্কর মিত্রের দীর্ঘ দিন কেটেছে হাসপাতালে। ছুটি পেয়ে পাভলভ ও লুম্বিনীপার্ক মানসিক হাসপাতালে গিয়ে এখন গান শেখান ভাস্কর। বললেন, ‘‘সুর-তাল-ছন্দেই আগামীর দিশা দেখতে পাই।’’

মানসিক হাসপাতালে থাকা মানুষকে দিশা দেখাতে চান উলুবেড়িয়ার কাকলি মণ্ডলও। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে লোকের বাড়িতে কাজে ঢুকেছিলেন। পরে মানসিক সমস্যা হয়। বহরমপুরের হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসার পরে বাড়ি ফিরে বিয়ে করে সংসার করছেন তরুণী। তিন বছরের ছেলেকে দেখিয়ে বললেন, ‘‘ছেলেকে এমন ভাবে বড় করব, যেন ও মানসিক হাসপাতালের জন্য কাজ করতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন