শ্যাম্পেন-মহিমা মেলে ধরতে শহরে ঘুরে গেল ফরাসি দল

ফরাসি প্রতিনিধিদলটির দাবি, আলজ়াকে আমেরিকা, চিন, জাপান, কানাডা, জার্মানির পরেই ভারতীয় পর্যটকের ছড়াছড়ি। সম্ভাবনাপূর্ণ পর্যটনের উৎস হিসেবে তাই ভারতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে ফ্রান্স।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ০২:৩৩
Share:

ভিন্ন ঘরানার শ্যাম্পেন নিয়ে শহরে ফ্রান্সের প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র

দুই নারী, হাতে তরবারি! না, ঠিক তরবারি নেই বটে, তবু ধারটা তাতেও কিছু কম হচ্ছে না।

Advertisement

কারণ হাতে যা ধরা, সেই তন্বী পেয়ালাটি হল শ্যাম্পেন ফ্লুট। আর তাতে বন্দি তরল উচ্ছ্বাসের নামে তো মাত গোটা দুনিয়াই। ফরাসি সংস্কৃতি-সুরভি বা পর্যটন উৎকর্ষ মেলে ধরতে শ্যাম্পেন-সম্ভার হাতে ফ্রান্সের শ্যাম্পেন মুলুক থেকে একটি দল সদ্য কলকাতা ঘুরে গেল।

ফ্রান্সের উত্তর-পুবে শ্যাম্পেন-অর্দেন প্রদেশে জাত পানীয়টির পরিচিতি তার জন্মভূমির নামেই। স্পার্কলিং বা হোয়াইট ওয়াইনের সঙ্গে মিল থাকলেও শ্যাম্পেন হল শ্যাম্পেনই! নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানার অন্তর্গত আঙুর খেতের ফসল, বিশেষ কসরতে দু’বার মজানো না-হলে তাকে শ্যাম্পেন বলাই যাবে না! এমনই শুনিয়ে গেলেন দুই ভিন্‌ গোত্রের শ্যাম্পেন ঘরানার পতাকা নিয়ে শহরে হাজির দুই ফরাসিনি। দু’জনের মধ্যে খানিক গম্ভীর ব্যক্তিত্বময়ী সফি সিগল-গনে। তিনি মিশেল গনে শ্যাম্পেন-স্রষ্টাদের সপ্তম প্রজন্ম। আঙুর-বাগিচার ফসলের উৎকর্ষে শ্যাম্পেন ক্ষেত্রের একেবারে কুলীন গ্রাম আভিজ ও মেসনিতে জন্মেছে এই ‘মিশেল গনে’। কলকাতায় বোতল-বন্দি যা এসেছিল, তা নাকি ২০০৫-এর প্রাচীন আঙুরজাত রসস্থ ভিন্টেজ শ্যাম্পেন। সফির সঙ্গী ঝকঝকে তরুণী ইমানুয়েল ভোতরাঁ। তিনি খানিক উচ্ছলতর এক শ্যাম্পেন-ঘরানা, ল্যক্লেয়র ব্রিয়াঁ-র স্রষ্টাদের কর্মকর্তা। ২০১৬-র আঙুর ফসলজাত হাল্কা লালাভ তরল, ল্যক্লেয়র ব্রিয়াঁয় মৃদু রোজ় ওয়াইনের আভাস মিলল।

Advertisement

এই দু’টি শ্যাম্পেন নির্মাতাই উনিশ শতকের। শ্যাম্পেন গনে ১৮০২-এর সৃষ্টি। ল্যক্লেয়র ব্রিয়াঁ ১৮৭৬-এর। প্রথমটিতে শুধুই হলুদ-রঙা শার্দনে আঙুর মিশেছে। ল্যক্লেয়র ব্রিয়াঁর রক্তিমতায় শার্দনের সঙ্গে পাঁচ শতাংশ লাল আঙুর পিনো নোয়ারও ছোঁয়াচ। শ্যাম্পেন-অর্দেন প্রদেশের এপেরনে শহরের কাছের মেয়ে ইমানুয়েল বলেন, ‘‘আঙুর বাগানই আমার পৃথিবী। ইউরোপের কত কিছু পাল্টাচ্ছে, আগের থেকে শীত কম পড়ছে, তবু শ্যাম্পেনের ফসল এখনও মহিমায় খাটো নয়।’’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী, শ্যাম্পেন এলাকার বাইরের কোনও মদিরা মিল থাকলেও নিজেকে শ্যাম্পেন বলে দাবি করতে পারে না। ফরাসি দেশে সুরার পরম্পরা নিয়ে শ্যাম্পেনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের টক্কর বুর্গান্ডির মাদকতার। কলকাতায় ফ্রান্সের কনসাল জেনারেল ভির্জিনি কোর্তেভাল আদতে বুর্গান্ডির কন্যা। তবু তিনিও অকপটে বললেন, “শ্যাম্পেন থাকলে কোনও পার্টিই ম্যাড়মেড়ে হতে পারে না!”

পর্যটনের নিরিখে গোটা দুনিয়ায় পয়লা নম্বর আকর্ষণ হলেও ফ্রান্স এখন চাইছে, প্যারিসের বাইরে দেশের অন্য আকর্ষণসমূহ মেলে ধরতে। তাতেই আলো পড়ছে শ্যাম্পেন-ক্ষেত্রে। শ্যাম্পেন-অর্দেন, লরেইন ও আলজ়াক— এই তিনটি এলাকা নিয়ে ফ্রান্সের একটি নির্দিষ্ট প্রশাসনিক অঞ্চল ‘গ্রঁদ এ’। কলকাতার সামনে এই গোটা এলাকাটিরই উৎকর্ষ মেলে ধরা হল। শ্যাম্পেন অঞ্চলের প্রধান শহর র‌্যেঁসে আগে অভিষেক ঘটত ফ্রান্সের রাজার। প্রাচীন ঐতিহ্য, ইতিহাসের ছড়াছড়িতে ইউনেস্কো-র ঐতিহ্য অঞ্চল। প্যারিস থেকে এক ঘণ্টারও কম দূরত্বে ওই এলাকা জুড়েই ওয়াইন টুরিজ়ম বেড়েছে। আলজ়াকও ঐতিহ্যে গরীয়ান। আলজ়াকের রাজধানী স্ত্রাসবুর্গ ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও রাজধানী।

ফরাসি প্রতিনিধিদলটির দাবি, আলজ়াকে আমেরিকা, চিন, জাপান, কানাডা, জার্মানির পরেই ভারতীয় পর্যটকের ছড়াছড়ি। সম্ভাবনাপূর্ণ পর্যটনের উৎস হিসেবে তাই ভারতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে ফ্রান্স। শ্যাম্পেনের মাদকতার চর্চার পিছনে নাকি আসলে লুকিয়ে একটি দুর্ঘটনা। দু’দফায় তরলটি মজিয়ে নির্দিষ্ট কসরতে শ্যাম্পেন তৈরি হলেও প্রথমে কিছুটা ভুল করেই ব্যাপারটা হয়ে গিয়েছিল। সেই তরলের চাপে বোতল প্রায় ফেটে যাওয়ার উপক্রম হলে বিষয়টি নজরে আসে। পরে বোতল বা আধারও পাল্টায় শ্যাম্পেনের মাদকতা ধারণ করার জন্য। শ্যাম্পেন-ক্ষেত্রের মেয়ে সফি-ইমানুয়েলরা এসে এমন উৎকর্ষ নিয়ে বাঙালির খানিকটা চোখ খুলে দিয়ে গেলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন