novel coronavirus

করোনা নিয়ে কতটা ভয় পাবেন? টিবি কিন্তু এর চেয়েও ভয়াবহ!

কী কী বিষয়ে সাবধান হতে হবে?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ১৩:১৯
Share:

করোনা নিয়ে অকারণ আতঙ্ক না করে মেনে চলুন সহজ কিছু স্বাস্থ্যবিধি। ছবি: আইস্টক।

করোনা নিয়ে কি একটু বেশিই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছি আমরা? এর চেয়েও নাকি বেশি ভয়াবহ যক্ষ্মা! ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’-এর সঙ্গে আলোচনায় জলপাইগুড়ি রানি অশ্রুমতী টিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার সব্যসাচী সেনগুপ্ত

Advertisement

করোনা নিয়ে কতটা ভয় পাব?

সত্যি বলতে কি, আর পাঁচটা ফ্লু নিয়ে যতটা ভয় পাবেন, ততটাই। তার চেয়ে একটুও বেশি নয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ভাইরাল ফিভার নিয়ে যতটা ভয়, করোনা নিয়ে তার বেশি ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। জেনে রাখবেন, টিবি এর চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ।

Advertisement

কী বলছেন!

আমি না, বলছে অঙ্ক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান দেখুন। ২০১৮-তে যে রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে, তাতে দেখা যায়, সারা বিশ্বে ১ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন টিবি-তে। মারা গিয়েছেন ১৫ লক্ষ। ভারতেই আক্রান্তের সংখ্যা ২৭লক্ষ। অর্থাৎ সারা বিশ্বের মোট ২৭ শতাংশ টিবি আক্রান্ত মানুষই ভারতের। আর করোনায় তো ভারতে এখনও পর্যন্ত কেউ মারাই যাননি। আক্রান্তের সংখ্যাও মারাত্মক কিছুই নয়।

কিন্তু ইতিমধ্যেই ‘হু’ তো একে ‘অতিমারি’ বলে ঘোষণা করেছে!

কোনও অসুখ অতিমারির আকার ধারণ করছে কি না এটা নির্ভর করে তার অসুখ ছড়ানোর প্রবণতা, নির্দিষ্ট সময়ে মৃত্যুর হার, প্রতিষেধক না থাকা রোগ নিয়ে ভয় ইত্যাদি নানা রকম ফ্যাক্টরের উপর। তাতেও এই অসুখ টিবির চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর নয়। সারা বিশ্বেই চিকিৎসকরা এ বিষয়ে সহমত। ‘হু’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, টিবিতে প্রতি দিন বিশ্বে মারা যায় প্রায় ৪ হাজার মানুষ, অর্থাৎ এত দিন ধরে করোনায় যত জন মারা গিয়েছেন। হিসেবটা দাঁড়াল, টিবিতে প্রতি দিন মারা যান যত জন, এত দিনে করোনায় মারা গিয়েছেন তত জন। শুনতে অবাক লাগতে পারে, প্রতি ২০ সেকেন্ডে এক জন রোগী মারা যান টিবিতে। তা হলেই ভেবে দেখুন! আর এখন এ দেশে ধরে নেওয়া হয় টিবি গরিব মানুষের অসুখ। তা কিন্তু একেবারেই নয়।

আরও পড়ুন: খুব দ্রুত জিন বদলেই করোনা হয়ে উঠছে ভয়াবহ, ঠেকাতে নতুন পদ্ধতি খুঁজছেন গবেষকরা​

তা বলে করোনাকে যে হেলাফেলা করব এমনও তো নয়?

কখনওই নয়। একটা প্রতিষেধকহীন ভাইরাস এসেছে ও সে ঘন ঘন নিজের স্বভাব-চরিত্র বদলে ফেলছে। সুতরাং তা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতেই হবে। তাই করোনা থেকে বাঁচতেও কিছু প্রাথমিক বিষয় মনে রাখা দরকার। তবে আবারও বলছি, অকারণ ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। সাধারণ মানুষের মনে কিন্তু একটু বেশিই ভয় দানা বাঁধছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কিছু ‘প্রাথমিক বিষয়’ মানে আপনি কী কী পরামর্শ দিচ্ছেন?

• হাঁচি বা কাশির সময়, তালু নয়, বাহু ঢেকে ( কনুইয়ের বিপরীত দিক) হাঁচুন বা কাশুন। দৈনন্দিন কাজের সময় হাতের তালু বারবার ব্যবহার হয়, তাতে সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা বেশি।

• হ্যান্ডশেক পরিত্যাগ করুন। এতে এক মানুষের হাত থেকে অন্য মানুষের হাতে রোগ ছড়িয়ে যায়। দুই হাত জোড় করে নমস্কার জানান অতিথিকে।

• যেখানে সেখানে কফ-থুতু ফেলা বন্ধ করুন। এতে সংক্রমণ ছড়ায় বেশি।

• কথায় কথায়, নাকে মুখে কিংবা চোখে হাত দেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। এতে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে।

• খামোখা সিঁড়ির হাতল ধরে ওঠা-নামা করবেন না। কে বলতে পারে ওখানে কোনও সংক্রামক ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে ছিটকে এসে ড্রপলেট পড়ে ছিল না! আর এই ধরনের জড়বস্তুতে সংক্রমণ বাঁচতে পারে ১২ ঘণ্টা।

• খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে নিন সাবান দিয়ে কচলে। অন্তত কুড়ি সেকেন্ড ঘড়ি ধরে। যদি সাবান না থাকে ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ ব্যবহার করতে পারেন। তবে দেখে নেবেন, তাতে যেন কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে।

আরও পড়ুন: করোনা রুখতে ‘কাফ এটিকেট’ মেনে চলুন এ ভাবে, বাছুন এই ধরনের মাস্ক

তালু নয়, বাহু ঢেকে হাঁচুন বা কাশুন। অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।

আর মাস্ক? সেটা কতটা দরকার?

সত্যি বলতে কি, আমজনতার জন্য মাস্ক কোনও কাজে আসবে না। সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক পরে লাভ নেই খুব একটা। এমনকি এন৯৫ জাতীয় মাস্ক পরেও নয়। কারণ, যদি সঠিক পদ্ধতিতে আপনি এম৯৫ পরেন, অর্থাৎ টেনে ব্যান্ড বেঁধে এবং নাকের ব্রিজ চেপে, তবে এই মাস্ক পরে বেশি ক্ষণ থাকা যায় না। দম আটকে আসে। দ্বিতীয়ত, এই মাস্ক পরলেও সংক্রমণ আটকানোর সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ। টিবি কিংবা করোনা দুটোই ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। সেই ড্রপলেট আটকাতে হলে বরং উল্টে, যারা হাঁচি বা কাশিতে ভুগছেন, মাস্ক পরা উচিত তাঁদেরই। সেটা, সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক হলেও চলবে।

মাস্ক পরুন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁদের এই ধরনের রোগীর এক মিটারের মধ্যে যেতে হয়। প্রতিনিয়ত দেখভাল করতে হয় হাঁচি-কাশির রোগীদের। তাঁরা চেষ্টা করুন, খোলামেলা আবহাওয়ায় থাকতে।

আর কী কী বিষয়ে সাবধান হতে হবে?

সংক্রমণ এড়াতে বা অসুখ থেকে দূরে থাকত কয়েকটা বিষয় মেনে চলুন। এই মুহূর্তে গরমে কষ্ট হলেও আক্রান্ত রোগীরাও চেষ্টা করুন এয়ার কন্ডিশন্ড এড়িয়ে চলতে। তথ্য বলছে, কোনও ঘরের বাতাস যদি প্রতি ঘণ্টায় দশ থেকে পনেরো বার ফ্রেশ হাওয়া দিয়ে রিপ্লেসড হয়, তবে সেই ঘরে বাতাসবাহিত রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। এই একই নিয়ম মেনে চলুন যাঁরা বদ্ধ কামরায় কাজ করেন, তাঁরাও। ঘরে কোনও আলমারি বা কোনও চেয়ার-টেবিল জানালা ব্লক করছে কি না দেখে নিন। সম্ভব হলে সেগুলো সরিয়ে অন্যত্র রাখুন।

মোটামুটি ৪০ বছরের পর থেকে, বছরে এক বার করে ডায়াবিটিস টেস্ট করান। ধরা পড়ে যদি, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই অসুখ ধরা পড়ে বেশ দেরিতে। ডায়াবিটিস অবহেলা করলে শুধু করোনা কেন, যে কোনও সংক্রামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

আর হ্যাঁ, সোশ্যাল সাইটে করোনা নিয়ে অনেক মেসেজ পাবেন। তা চারপাশে 'ফরোয়ার্ড' করে দেওয়ার আগে একটু খতিয়ে দেখুন। জেনে নিন, বিষয়টা গুজব কি না। অকারণ ভয় বাড়তে না দিতে চাইলে এটা এই মুহূর্তে সবচেয়ে দরকারি।

আরও পড়ুন: করোনা থেকে বাঁচতে এই ভাবে হাত ধুয়ে নিন, মেনে চলুন এ সব সতর্কতা

টিবি আরও ভয়াবহ বলছিলেন। সে ক্ষেত্রে এই অসুখ রুখতে কী করব?

যা যা করোনা রুখতে মেনে চলব, ঠিক সে সবই। সংক্রামক রোগ রুখতে এটুকুই যথেষ্ট। সঙ্গে দু’সপ্তাহের বেশি একটানা কাশি থাকলে নিকটবর্তী সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে কফ পরীক্ষা করান।

(সাক্ষাৎকার: মনীষা মুখোপাধ্যায়)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন