ইকথিয়োসিস ভালগারিস রোগে শুষ্কতা কমানোর চিকিৎসা সীমিত। জেনে নিন বিশেষজ্ঞের মত
Skin Disease

Skin Disorder: জিনগত সমস্যায় শুষ্ক ত্বকের বিড়ম্বনা

চূড়ান্ত শুষ্ক ত্বকের অস্বস্তি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ার বিড়ম্বনার নামই ইকথিয়োসিস ভালগারিস। সঙ্গে ফাউ মাছের আঁশের মতো ত্বক।

Advertisement

শ্রেয়া ঠাকুর

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২২ ০৮:৪১
Share:

ডিজ়িজ় না ডিসঅর্ডার, বাংলায় যাকে বলে রোগ না বালাই, ইকথিয়োসিস ভালগারিস নামের ত্বকের সমস্যার ক্ষেত্রে প্রথমে এই প্রশ্নটাই মনে আসবে। তবে সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আগে অন্য যে শব্দটি মাথায় আসবে তা হল বিড়ম্বনা। চূড়ান্ত শুষ্ক ত্বকের অস্বস্তি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ার বিড়ম্বনার নামই ইকথিয়োসিস ভালগারিস। সঙ্গে ফাউ মাছের আঁশের মতো ত্বক।

Advertisement

রোগটা ঠিক কী?

আমাদের ত্বক সাধারণত চার সপ্তাহে এক্সফোলিয়েট হয়ে নতুন কোষ তৈরি করে। সেটা যখন হয় না, যখন হঠাৎ করে মৃত কোষ পর পর জমে শক্ত হয়ে মাছের আঁশের মতো ত্বকের অবস্থা তৈরি হয়, তাকে ইকথিয়োসিস ভালগারিস বলা হয়। মাছের আঁশের মতো ত্বকের অবস্থা তৈরি হওয়ার কারণে অনেক সময়ে ‘ফিশ স্কেল ডিজ়িজ়’ও বলা হয়।

Advertisement

শরীরের নিম্নাংশে, মূলত পায়ে, হাঁটুর নীচে এই সমস্যা দেখা যায়। দেখা যেতে পারে কনুই ও গোড়ালিতেও।

ত্বক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর নীলেন্দু শর্মা জানালেন, এটি মূলত একটি জেনেটিক কন্ডিশন। ‘ইকথিয়োসিস’ শব্দের অর্থ শুষ্ক ত্বক। ইকথিয়োসিস ভালগারিস এই ধরনের জিনগত অসুখের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নাম। ল্যাটিন শব্দ ‘ভালগারিস’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ সাধারণ বা কমন। বাবা বা মা কারও এক জনের থাকলে সন্তানের মধ্যে এই অসুখ আসতে পারে। তার জন্য একাধিক মিউটেশনেরও প্রয়োজন হয় না। একটি মিউটেশনই যথেষ্ট। এটাকে অটোজ়োমাল ডমিন্যান্স বলা হয়।

আমাদের ত্বকের আর্দ্রতার জন্য দায়ী মূলত একটি জিন। ‘এফএলজি’। এই জিন একটি বিশেষ ধরনের প্রোটিন তৈরি করে। তার নাম ‘ফিলাগ্রিন’। এই প্রোটিনই আমাদের ত্বককে আর্দ্র করে তোলে। পাশাপাশি, ত্বকের ‘বেরিয়ার ফাংশন’-এও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে এই প্রোটিনের। ইকথিয়োসিস ভালগারিসে এই প্রোটিনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, শুরু হয় সমস্যা। অনেক সময় জিনগত কারণে প্রোটিনটি গঠিত হতে পারে না ঠিক ভাবে, সেক্ষেত্রেও এই অসুখটি দেখা দেয়।

এই অসুখের লক্ষণ কী?

প্রফেসর শর্মা জানালেন, ভীষণ শুষ্ক ত্বক, যা শীতকালে ক্রমশ বাড়তে থাকে। সবচেয়ে বেশি শুষ্ক হয় হাঁটু থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত অংশ। এই অসুখে সাধারণত যে লক্ষণ দেখা যায় তা হল-

 আঁশের মতো ত্বক

 অস্বস্তি ও চুলকানি

 বহুভুজের মতো ত্বকের কোষগুলির গড়ন

 অত্যন্ত কষ্টকর শুষ্ক ত্বক

 আস্তে আস্তে আক্রান্ত জায়গা বাদামি অথবা সাদাটে হয়ে যাওয়া

 আক্রান্ত জায়গার ত্বক ধীরে ধীরে পুরু হয়ে যাওয়া

প্রফেসর শর্মা এ-ও জানালেন, এই রোগের প্রকোপ যদি কম থাকে, তা হলে অনেক সময়েই সাধারণ ত্বকের শুষ্কতার সঙ্গে আলাদা করা মুশকিল হয়ে যায়। তবে, সাধারণ শুষ্কতা নিয়মিত ময়শ্চারাইজ়েশনে কমে গেলেও ইকথিয়োসিস ভালগারিস কমে না। সেখান থেকেই বোঝা যায় অসুখটি আসলে কী। এই অসুখে সবচেয়ে কষ্ট হয় শীতকালে। অনেক সময় পা ও হাতের পাতা ফেটে যেতে পারে। কনুইয়ের ত্বক পুরু হয়ে শুষ্ক হয়ে যায়।

যেহেতু জিনগত সমস্যা, তাই শৈশব কাটলে তার পর থেকেই দেখা দিতে পারে ইকথিয়োসিস ভালগারিস। তবে, পরিণত বয়সেও অনেক সময়ে আক্রান্ত হন মানুষ। পাশাপাশি কিডনির সমস্যা, ক্যানসার ও থাইরয়েডের সমস্যা থাকলেও ত্বকে এর প্রকোপ দেখা যেতে পারে।

কেরাটোসিস পিলারিস, অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের সঙ্গেও এই অসুখের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় অনেক সময়েই।

চিকিৎসা কী?

প্রফেসর শর্মার কথায়, জিন আমরা পরিবর্তন করতে পারি না। ফলে এই অসুখে ত্বককে ময়শ্চারাইজ়ার বা ওষুধের মাধ্যমে আর্দ্র রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। চিকিৎসকের কথা মতো নিয়মিত তেল বা ক্রিম লাগিয়ে যেতে হবে। থাকতে হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এটুকুই আপাতত উপায়। তবে, অনেক সময়ে ত্বকে সমস্ত ক্রিম বা ময়শ্চারাইজ়ার যথাযথ কাজ করে না। সে কারণে ত্বকের পরিস্থিতি বুঝে, চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ময়শ্চারাইজ়ার বেছে নেওয়া উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন