Heart Transplant

১০৫ দিন ধরে বুকের ভিতর ধুকপুক করছে টাইটানিয়াম, এমন ধাতব হৃদয় নিয়ে বাঁচা কতটা জটিল?

ধাতব হার্ট নিয়ে ১০৫ দিন কাটিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এক ব্যক্তি। এখনও অবধি কোনও সমস্যা হয়নি। ১০৫ দিন ধরে বুকের ভিতর ধুকপুক করছে টাইটানিয়াম, এমন ধাতব হৃদয় নিয়ে বাঁচা কতটা জটিল?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫ ১২:৫৬
Share:

শরীরের ভিতর ধাতব হার্ট কতটা নিরাপদ? কী ভাবে কাজ করে? ফাইল চিত্র।

রক্ত-মাংসের হার্ট নয়। টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি ধাতব হৃদয় নিয়েই বেঁচে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি। কৃত্রিম হৃদয় নিয়ে ১০৫ দিন কাটিয়েও দিয়েছেন তিনি। শুকরের হৃৎপিণ্ড মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন নিয়ে হইচই হয়েছিল। এ বার ধাতব হৃদয় প্রতিস্থাপনে ফের নজির তৈরি হল।

Advertisement

কিন্তু এমন হার্ট কতটা সুরক্ষিত? ধাতব হৃদয় নিয়ে বেঁচে থাকাটা কতটা জটিল?

নভেম্বর মাসে সিডনির সেন্ট ভিনসেন্ট’স হাসপাতালে ওই রোগীর শরীরে বসানো হয়েছিল টাইটানিয়াম ধাতু দিয়ে তৈরি হার্টটি। যিনি প্রতিস্থাপন করেছিলেন সেই চিকিৎসক ক্রিস হেওয়ার্ড জানিয়েছেন, ‘বাইভ্যাকর টোটাল আর্টিফিশিয়াল হার্ট’ নামে একটি সংস্থা টাইটানিয়ামের হৃৎপিণ্ডটি তৈরি করেছে। সেটি রোগীর শরীরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোগীর হৃৎপিণ্ড কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। বহু বার হার্ট অ্যাটাকও হয় তাঁর। তার পরই তাঁর হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপযুক্ত দাতার খোঁজ না পাওয়ায় ধাতব হৃদয় প্রতিস্থাপনের কথাই ভাবা হয়। এখনও অবধি সেটি সঠিক ভাবেই কাজ করছে বলে দাবি করেন তিনি। জানান, আগামী দিনেও যদি ধাতব হৃদয় একই ভাবে কার্যক্ষম থাকে, তা হলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে তা মাইলফলক হয়ে থাকবে।

Advertisement

কতটা সুরক্ষিত ধাতব হৃদয়?

টাইটানিয়াম ধাতু দিয়ে তৈরি হৃৎপিণ্ড বহু দিন কর্মক্ষম থাকতে পারবে। রক্তমাংসের হার্টের মতো সেটিতে হৃৎস্পন্দনের হার ওঠানামা করে না। বরং একটি মোটর লাগানো আছে তার ভিতরে, যা সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালনের কাজ করে। ধাতব হার্টের কাজই হল রক্ত সঞ্চালন ঠিক রেখে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা। এই বিষয়ে ইন্ডিয়ান কলেজ অফ কার্ডিয়োলজির সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সিএম নাগেশ জানিয়েছেন, ধাতব হৃদয় প্রতিস্থাপনের পরে তা রক্তমাংসের হার্টের মতোই শরীরের অন্য কোষগুলির সঙ্গে মিশে যাবে। মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের আগে আরও অনেক পশুর শরীরে ধাতব হার্ট বসিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রেই খারাপ ফল পাওয়া যায়নি।

সুবিধা কী কী?

অস্ত্রোপচারের পরে প্রতিস্থাপিত অঙ্গের সঙ্গে দেহের অন্যান্য অঙ্গ মানিয়ে নিতে পারে না অনেক সময়েই। যার জেরে একাধিক সমস্যা তৈরির ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে হৃৎপিণ্ডের ক্ষেত্রে এমন হয়। হৃৎপিণ্ডের অন্যান্য অস্ত্রোপচারের তুলনায় প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সাফল্যের হার কম। তা ছাড়া সঠিক সময়ে দাতার থেকে হৃৎপিণ্ড পাওয়া, তার সংরক্ষণ, সঠিক উপায়ে প্রতিস্থাপন এবং প্রতিস্থাপনের পরে রোগীর শরীরে কী কী বদল হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণে রাখা— সবগুলিই ঝুঁকির কাজ। সেখানে ধাতুর তৈরি হার্ট প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে দিয়েছে বলেই দাবি চিকিৎসকের।

অসুবিধা কী?

ধাতব হার্টে কিছু সমস্যাও হতে পারে। যেমন রোগীকে খুব সংযত ভাবে জীবন কাটাতে হবে। দৌড়দৌড়ি করা চলবে না, খুব বেশি শরীরচর্চা করাও যাবে না। বাইরে ঘোরাঘুরি বা দুর্গম জায়গায় ভ্রমণ করা যাবে না। এমন কোনও কাজ করা যাবে না, যেখানে পরিশ্রম করতে হবে বা যে কাজে মানসিক চাপ বাড়বে। খাওয়াদাওয়া চিকিৎসকের পরামর্শ মতোই করতে হবে। ধাতু থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই পুরোপুরি চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। ধাতব মোটর ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তার পরীক্ষাও করাতে হবে। আর ধাতব হার্ট প্রতিস্থাপন করা খুবই খরচসাপেক্ষ। এখনও অবধি তা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement