বসন্তে সংক্রমণ থেকে সজাগ থাকুন

শীতের বিদায়লগ্নে এবং গরমের আগে তাপমাত্রার হেরফের ঘটে। সকালে ঠাণ্ডা দুপুরে গরম। শরীর ঠিক রাখা ভারি দায়। সচেতনতাই একমাত্র রাস্তা। জানাচ্ছেন মুরারই হাসপাতালের চিকিৎসক সরোজ কুমার রাউত।শীতের বিদায়লগ্নে এবং গরমের আগে তাপমাত্রার হেরফের ঘটে। সকালে ঠাণ্ডা দুপুরে গরম। শরীর ঠিক রাখা ভারি দায়। সচেতনতাই একমাত্র রাস্তা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share:

রোগী দেখছেন চিকিৎসক। নিজস্ব চিত্র

প্রশ্ন: বসন্তকালে সাধারণত কোন ধরনের রোগ বাড়ে?

Advertisement

উত্তর: শীত ও গ্রীষ্ম ঋতুর মধ্যের ঋতুকে আমরা বসন্ত কাল বলে জানি। এই ঋতুতে আবহাওয়ার রূপান্তর ঘটে। বিকেল থেকে সকাল পর্যন্ত ঠাণ্ডাভাব থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে রোদের তাপ বাড়তে থাকে। গরম অনুভূত হয়। এক কথায় সারাদিনে আবহাওয়ার তারতম্যের ফলে এবং নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় বাতাসে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু জন্মায়। তাই বসন্ত কালে সাধারণত অ্যালার্জি জাতীয় রোগের সংক্রমণ বেশি হয়। জীবাণু বাহিত জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ বেশি হয়। এই সময় হাম, পক্স হয়।চোখের সমস্যা দেখা দেয়। চোখ লাল হয়ে যায়। চোখের পাতা সংক্রমণের ফলে ফুলে যায়। চোখ জ্বালা করে।

Advertisement

প্রশ্ন: এ সময় অনেকের ভাইরাল ফিভার হয়, এর কারণ?

উত্তর: এই সময় অনেকে ঠিক ভাবে নিজেদের যত্ন না নেওয়ার ফলে ভাইরাল রোগে আক্রান্ত হন। দুপুরে রোদের তাপ বেড়ে যায় বলে অনেকে ফ্যান চালিয়ে দেন। এটা একদম উচিৎ নয়। প্রয়োজনে ঘরের জানালা খুলে দিন। রাতে ঘুমোবার সময় গায়ে পাতলা চাদর নিয়ে শোবেন। কেন না সকালের দিকে তাপমাত্রা নেমে যায়। সেই সময় ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ঠাণ্ডা লাগার ফলে টনসিল রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হয়। এর ফলে জ্বর আসে। সর্দি, কাশি ছোঁয়াচে রোগ। বাড়ির কোনও সদস্য এই রোগে আক্রান্ত হলে বাচ্চাদের ওনার কাছ থেকে দূরে রাখুন। সর্দি হলে হাঁচি পড়লে নাক থেকে অনেক জীবাণু বাইরে বেরিয়ে আসে,কাশির ক্ষেত্রেও একই ভাবে সতর্ক থাকতে হবে। ভাইরাল জ্বরে অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। পাঁচদিন থেকে সাতদিন এই ভাইরাস থাকার ফলে জ্বর ও সর্দি হয়ে থাকে। এই জ্বরে সাধারণত সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যাথা হয়। প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, ব্রুফেন জাতীয় ট্যাবলেটে জ্বর ও ব্যাথা কম হয়।

প্রশ্ন: বিভিন্ন ধরনের পেটের ব্যধিও হয় এ সময়?

উত্তর: গ্রীষ্ম কালে সাধারণত পেটের ব্যধি বেশি হয়। তবে বসন্ত কালে হয় না বলা যায় না। ঋতু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন জীবাণুর জন্ম হওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে হবে ।

খাবারের সাথে বা পানীয় জলের মাধ্যমে নানা জীবাণুর সংক্রমণ যেমন, ১) ব্যাকটেরিয়া জনিত পেটের রোগ-কলেরা ও আন্ত্রিক হয়।

২) ভাইরাস জনিত পেটের রোগ-এটা বাচ্চাদের ও বড়দের সকলের হয়ে থাকে। অনেকরই এই সময় আমাশয় (জীবাণুর নাম আমিবা), জিয়ারডিয়া (জীবাণুর নাম জিয়ারডিয়া) হয়। সব সময় হাত ধুয়ে খাবার খেতে হবে। বালতির জল ঢেকে রাখতে হবে। পারলে এই সময় জল ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে খেলে ভালো হয়। জল ফোটানোর ফলে অনেক জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়। সঠিক সময়ে খাবার খেলে অম্বল জনিত রোগ কম হয়। ফ্যাট জাতীয় খাবার বর্জন করলে ভালো হয়। ফাইভার জাতীয় খাবার যেমন শাক, অনাজ খেলে দেহের পাচন পক্রিয়া ভালো হয় এর ফলে পেটের রোগ অনেকাংশে কমে যায়।

প্রশ্ন: হাম,পক্স কেন হয় এই সময়ে?

উত্তর: ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে এই রোগ সাধারণত হয় না। পক্স হচ্ছে বসন্ত রোগ এটি ভেরিসলা জস্টার নামক ভাইরাস থেকে হয়। জল বসন্ত একটি ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগ শীত কালের শেষ ও বসন্ত কালে বেশি হয়। এই রোগের সংক্রমণ হলে তা অনেক সময় মহামারী আকারে দেখা দেয়। তবে এটি মারাত্মক রোগ নয়। এই রোগটি খুব কষ্টদায়ক। কারও জীবনে একবার হলে আর হয় না বলে মনে করা হয়। চারদিন আগে থেকে জ্বর আসে পরে সারা শরীরে ফোস্কার মত ছোট আকারে বের হয়। সারা শরীর জ্বালা করে। এই রোগের স্থায়িত্ব সাত থেকে পনের দিন হতে পারে। এই সময় রোগীদের আলাদা ঘরে মশারীর মধ্যে রাখতে হয়। রোগীর ঘরটিকে ফিনাইলও ডেটল দিয়ে দিনে দুই বেলা পরিষ্কার রাখতে হবে। বিছানার চাদর প্রত্যেক দিন বদলে দিতে হবে। যিনি রোগীকে দেখভাল করবেন তিন ভালো করে হাত ধুয়ে খাবার খাবেন। ভাইরাস জনিত রোগে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। জ্বর ও ফোস্কা হওয়ার ফলে সারা শরীরে অস্বস্তি থাকে। চুলকানির তীব্রতা কমাতে অনেক সময় অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেন চিকিৎসকেরা। আক্রান্ত শিশুদের অনেক সময় শ্বাসনালীর সংক্রমণ ও পাতলা পায়খানা হলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

ঘরোয়া টোটকা - এই সময় খাবার তালিকায় সজনে ডাটা, সজনে ফুল, সজনে শাক ও নিমপাতা খেলে ভালো হয়। এই গুলির মধ্যে পক্স বিরোধী(অ্যান্টি পক্স) গুণাগুণ থাকে। নিম পাতার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী (্অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল) বৈশিষ্ট্যের কারণে নিম পাতা আমাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে।

প্রশ্ন: এ সময় শিশুদের সাধারণত কি ভাবে রাখব?

উত্তর: ঋতু পরিবর্তনের ফলে বাচ্চাদের শারীরিক ভাবে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়। কেন না শীত কাল থেকে বসন্ত কালে ঠাণ্ডা অনেকটা কমে যায়। মোটা জামা কাপড় পরিয়ে রাখলে বাচ্চারা ঘেমে যায় এর ফলে বুকে ও পিঠে ঠাণ্ডা লাগে। এই সময় প্রতি মুহূর্তে শিশুদের পোশাক পাল্টাতে হবে। রাত্রের দিকে বাচ্চাকে বাইরে নিয়ে গেলে ভারি পোশাক পরাতে হবে। দিনের দিকে সুতির পোশাক পরানো ভালো। জন্মের পরে শিশুকে নিয়ম মাফিক টিকা দিতে হবে। বসন্ত কালে শিশুদের জ্বর, সর্দি, কাশি হয়ে থাকে। যে সব বাচ্চাদের ঠাণ্ডা লাগার ধাত আছে তাদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। এই ঋতুতে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয় শিশুরা। কোওন শিশুর কাশি হয়, কারও বা রাত্রে ঘুমোবার সময় নাক বন্ধ হয়ে যায়। অনেকে কাশির ফলে সারা রাত ঘুমাতে পারে না। বুকে সর্দি জমেছে মনে হলে তৎক্ষণাৎ স্থানীয় হাসপাতালে বা শিশু রোগ বিশেষজ্ঞর কাছে পরামর্শ নিন।

প্রশ্ন: বিভিন্ন রকমের চোখের সমস্যাগুলি কি কি ও কিভাবে তার প্রতিকার সম্ভব?

উত্তর: শীতের শেষের ঋতুসন্ধিতে পরিবর্তন আসে সবকিছুতেই। যেমন বাতাসের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা। এই সময় ফুলের রেনু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। ফলে চোখে অ্যালার্জি জনিত নানাধরনের রোগ হয়। নানা ধরনের রোগে আক্রন্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। চোখো তার ব্যতিক্রম নয়। অনেক সময় চোখ লাল হয়ে যায়, চোখের ভেতর জ্বালা করে, চোখের পাতা ফুলে ওঠে। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখের পাতা খোলা যায় না। গ্রাম্য ভাষায় যাকে বলে অাঞ্জনি বা আজনায়। ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় ‘স্টাই’। এই সময় বাড়ি থেকে বেরোলে চশমা ব্যবহার করুন। ধুলো, বালি জনিত রাস্তা এড়িয়ে চলুন, ফুলের বাগানে চশমা পরে যান। মাথায় টুপি ব্যবহার করুন। সময় পেলে কাজের ফাঁকে ভালো করে জলের ঝাপটা দিয়ে চোখ ধুয়ে নেবেন। চিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন। ঘুমোবার সময় অনেকের চোখের পাতা অর্ধেক খোলা থাকে সেই সব ব্যক্তিরা আই প্যাড ব্যবহার করুন।

সবশেষে আমি বলতে চায় শিশুদের মোবাইল হাতে দেবেন না। টিভিতে কার্টুন দেখতে দেবেন না। এতে ছোট্ট বয়সে বাচ্চাদের চোখের ক্ষতি হয়। শুধু বসন্ত নয় সবসময়ের জন্যই অভিভাবকরা সতর্ক ও সজাগ হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন