বছর ত্রিশের তরতাজা যুবক। আচমকাই বুক ধড়ফড়। অফিসে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সব শেষ। ডাক্তাররা জানালেন, ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।’
কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। চারপাশে ইদানীং এমন নজির বহু মিলছে। কোনও রকম হুঁশিয়ারি ছাড়া হৃদগতি আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহু ক্ষেত্রেই ডাক্তারদেরও কিছু করার থাকে না। এই কারণেই আগাম সতর্কতা জরুরি বলে মনে করছেন ডাক্তাররা। বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে হৃদরোগ চিকিৎসক শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই রোগীর মৃত্যু হয়। যে সব ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো যায়, তারও অন্তত ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে এক বছরের মধ্যে ফের রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এই কারণেই চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধের ওপরেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
কী ভাবে ঠেকানো যাবে এই রোগকে? বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা তো অবশ্যই জরুরি। পাশাপাশি পরিবারে কারও এই রোগ থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা, বুক ধড়ফড় বা চোখে অন্ধকার দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি। কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন-এর উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, কারও এমন হলে পরিবারেই অন্তত কেউ এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত থাকলে মুখ দিয়ে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস বজায় রেখে রোগীকে অন্তত হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়। সম্প্রতি ট্রাফিক পুলিশদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি স্কুল-কলেজেও এই ধরনের প্রশিক্ষণ জরুরি।
সাংবাদিক বৈঠকে শুভ্রবাবু বলেন, ‘‘আগে পেসমেকার বসালে পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আর এমআরআই করানো যেত না। অথচ বহু ক্ষেত্রেই রোগ নির্ণয়ের স্বার্থে এমআরআই জরুরি।’’ তিনি জানান, বাজারে এমন পেসমেকার কিছু দিন আগেই এসেছে, যা বসানো সত্ত্বেও পরবর্তী সময়ে এমআরআই করানোর ক্ষেত্রে সমস্যা থাকে না। কখনও হার্টের গতি অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে যার সাহায্যে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই ইমপ্ল্যান্টেবেল কার্ডিওভার্টার ডেফিব্রিলেটর যন্ত্র বা আইসিডি-ও এখন এমন ধরনের পাওয়া যাচ্ছে যা বসানোর পরেও এমআরআই করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু ঠিক সময়ে সচেতন হওয়া।’’