সারা বছরের প্যান্ট-শার্ট থেকে দিন চারেকের বিরতি। টি-শার্ট, শার্ট, প্যান্ট, ট্রাউজ়ার্স থেকে আরামের নিরিখে কোনও অংশে কম নয়। তাই এ বার পুজোর কেনাকাটার মধ্যে মুখ্য এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্রে থাকুক ধুতি ও পাঞ্জাবি বা কুর্তা। দুর্গাপুজো ছাড়া এমন সুযোগ আর কোথায় মিলবে! ভিড়ের মধ্যে গরমে কষ্ট হওয়ার কথা ভাবছেন কি? দুর্গাপুজোর আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই নতুন নতুন ধুতি ও পাঞ্জাবি এসেছে এ বার শহরে। তেমনই কয়েকটি সম্ভার তুলে দেওয়া হল এখানে। পুজোর চার দিনের জন্য বেছে নিন, বা উপহার দিন আত্মীয়স্বজনকে।
বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব, শুভ উৎসব। শুভ রং সাদা-লাল ছাড়া সম্পূর্ণ হয় কী করে! উৎসবের এই ধুতি আর পাঞ্জাবিতে তাই কোরা সাদা জমিতে উজ্জ্বল লাল রঙের ব্লক প্রিন্টের টেম্পল নকশা। পুজোর যে কোনও সকাল বা অষ্টমীর অঞ্জলির জন্য এ পোশাক বেছে নিতে পারেন কেতাদুরস্ত বাঙালি যুবক।
বাগবাজারের মুকুট কুর্তা আর রাজপথ ধুতি। কলকাতার সব সিমেট্রিকাল রাস্তার কথা মাথায় রেখেই নকশা হয়েছে ধুতির। ঘিয়ে রঙের উপর লাল সুতোর কাজ। বাগবাজারের মুকুটের নকশা ফুটে উঠেছে পাঞ্জাবির বুকে আর দুই হাতায়। তিনটি ভাগ রয়েছে মুকুটের। বুকের নকশায় যদি কল্পনা করা যায় দুর্গাকে। দুই হাতে রয়েছে লক্ষ্মী-সরস্বতীর অস্তিত্ব।
দশমীর সাজের জন্য বেছে নিতে পারেন লাল রং। সপ্তপদী, লাল সিল্কের পাঞ্জাবিতে জারদৌসির নকশা। হাতে বোনা এমব্রয়েডরি। গলায় বেনিয়ান কায়দার নকশা। সঙ্গে চিরাচরিত লাল পাড় সাদা ধুতি। জমকালো অথচ আরামদায়ক এমন সাজ পুজোর জন্য হতে পারে নজরকাড়া।
এ বার পুজোয় ধুতি ও পাঞ্জাবির সাজে তাক লাগিয়ে দিতে পারেন। তার জন্য যদি হাতে আসে একেবারে নতুন কাপড় ও নকশা? লখনউয়ের চিকনকারীর কাজ করা কুর্তি ও শাড়ি তো দেখাই যায়, কিন্তু ধুতি-কুর্তায় এমন কাজ সম্পূর্ণ নতুন। সাদা চিকনকারীর কাজ করা এমন ধুতি-পাঞ্জাবির সেট থাকুক এ বারের অষ্টমী বা দশমীর রাতের জন্য। লখনউয়ের চিকনকারীতে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া লক্ষ করা যায় এই পোশাকে।
অষ্টমীর সকালে সাদা রঙের ধুতি-পাঞ্জাবি পরলে মন্দ হয় না। এ ক্ষেত্রে পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে স্বর্ণসূত্র। ঘিয়ে রঙের সিল্কের পাঞ্জাবির উপর জারদৌসি নকশার কারুকাজ। এই পাঞ্জাবির আদলে রয়েছে খানিকটা উত্তমকুমারের ছায়া, সঙ্গে আবার রয়েছে আজকের বাবুমশাইদের পছন্দের ‘টাচ্’। নীচে চিরাচরিত কেরালা কটন ধুতি। আধুনিকতা আর সাবেকিয়ানা মিলেমিশে একাকার।
তবে কেবল অষ্টমীর জন্য ভাবলেই চলবে না। অন্যান্য দিনের জন্য মানানসই ধুতি ও পাঞ্জাবি বেছে নিতে হবে। আর আপনি যদি হালকা রঙের প্রতি আকৃষ্ট হন, তা হলে হাতেবোনা কাপড়ের উপর স্ক্রিন প্রিন্টের এই সেট পছন্দ হওয়ার কথা। বাদামি রঙের পাঞ্জাবিতে গাঢ় বাদামি রঙের ছাপ। হালকা বাদামি রঙের নড়ুন পাড়ের সুতির হাতেবোনা ধুতি।
পোশাকে টোন-অন-টোন কাজ পছন্দ? অর্থাৎ, যে রঙের কাপড়, সেই রঙের সুতোর কাজ করা? তা হলে বাংলার নিজস্ব নকশা কাটা পাঞ্জাবি বেছে নিতে পারেন। সাজে থাকবে আভিজাত্যের ছোঁয়া। সঙ্গে হালকা বাদামি রঙের নড়ুন পাড়ের সুতির হাতেবোনা ধুতি সাজে অন্য মাত্রা যোগ করুন।
এ পোশাকের বিশেষত্ব এর মেটে হলুদ চৌখুপি নকশায়। যা ধুতিতেও আছে। আবার রয়েছে পাঞ্জাবির গলা ও হাতের কারুকাজেও। সাদাবের ধুতিটি আগে থেকেই সেলাই করা। অর্থাৎ কষ্ট করে কুঁচিয়ে পড়ার ঝঞ্ঝাট নেই। পাজামার মতো গলিয়ে নিলেই হবে। কালো ঢালা পাড় আর মেটে হলুদে সরু চেকের নকশা করা ধুতির সঙ্গে কালো পাঞ্জাবিই মানাত। তবে তাকে আরও মাননসই করে তুলতে গলায় মেটে হলুদের টুকরো টুকরো চৌকো ইঁটের মতো নকশা বুনেছে উৎসব। তার ফাঁকে ফাঁকে সবুজসুতোর ঘাসের উঁকিঝুঁকি।
গায়ে ভারী জামা চাপাতেই আতঙ্ক? হালকা সাজেও ভিড়ের মধ্যে স্পটলাইট যেতে পারে আপনার দিকেই। আর তাই এমন ধুতি-কুর্তা বেছে নিতে পারেন। হালকা ছাইরঙা পাঞ্জাবিতে থাকুক নীলের আভা। হাতেবোনা সুতির কাপড়ের উপর সুতো দিয়ে হাতে করা এমব্রয়েডারি। তাঁতির হাতেবোনা সরু পাড় অর্থাৎ নড়ুন পাড়ে কালোর ছোঁয়া থাকুক ধুতিতে।
বাংলার আদি-অকৃত্রিম মোম বাটিক। শান্তিনিকেতনে এই মোম বাটিকের কাজ বিখ্যাত। তবে বাটিকের চল রয়েছে ভারতের অন্য প্রান্তেও। ছবিতে মডেল যে পাঞ্জাবিটি পরেছেন, সেটির গলা বেনিয়ানের আদলে। বোতাম খুলে আলগা ভাঁজ হয়ে পড়েছে একটি প্রান্ত। তেমনটা যে হতে পারে জানাই ছিল। তাই ভিতরেও বাটিকের নকশার অ্যাপ্লিক করা হয়েছে। যে নকশা রয়েছে সঙ্গের গাঢ় চকোলেট ধুতির পাড়ে।
একই রকমের হালকা সাজের জন্য হাতেবোনা সুতির জামদানি খয়েরি পাঞ্জাবি বেছে নিতে পারেন। তার উপর জ্যামিতিক নকশা কাটা। কালো নড়ুন পাড়ের ধুতির সঙ্গেই মানাবে ভাল এমন পাঞ্জাবি।
কালো খাদি কটনের পাঞ্জাবির উপর রঙিন সুতোর প্যাচওয়ার্ক। গলায় অ্যাসিমেট্রিক নকশা, হাতে চওড়া কাজ। পাঞ্জাবির সঙ্গে মিলিয়ে কালো ধুতিতেও লাল-হলুদ-কমলা সুতোর ঠাসা কাঁথার কাজ। পুজোর সকালে কোনও ঠাকুর দালানে সময় কাটাতে হলে এমন একটি ধুতি-পাঞ্জাবি যেমন আরাম দেবে, তেমন মানিয়ে যাবে পরিবেশের সঙ্গেও।
কে বলে গোলাপি কেবল নারীদের রং? ছেলেদের পুজোর সাজে দিব্যি মানায় গোলাপি। এই রঙের সিল্কের কুর্তার গলায় ও হাতে ম্যাট গোল্ড জরির জারদৌসি ভারী নকশা থাকলে ভিড়ের মাঝেও নজর কাড়বে সাজ। একই সুতোর ছোট ছোট বুটি ছড়িয়ে রয়েছে পাঞ্জাবি জুড়ে। পাঞ্জাবির গোলাপি আভা রয়েছে ধুতির পাড়েও। ঘিয়ে রঙের রেশম ধুতির পাড়ে শোভা বাড়িয়েছে মধুবনী আর্ট ওয়ার্ক। নবমী নাইটে নজর কাড়ুন এমনই সাজে।