মুখে বা চুলে যা মাখছেন নিরাপদ তো? কী থেকে হরমোনের গোলমাল হতে পারে? ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
বিজ্ঞাপনী চমকে ভুলে দোকান থেকে প্রায়ই নিত্যনতুন প্রসাধনী কিনে এনে ব্যবহার করেন। তাতে ত্বকের জেল্লা কতটা বাড়ে তা জানা নেই, তবে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যায়। ‘এন্ডোক্রিন সোসাইটি’ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, রূপচর্চার কিছু সাধারণ ভুলের কারণেও মহিলাদের শরীরে হরমোনের গোলমাল হতে পারে। রোজ এমন কিছু ব্যবহার করা হয়, যা হরমোন ক্ষরণে বাধা তৈরি করতে পারে। অথচ অজান্তেই সেই ভুলগুলি করে চলেন অনেকে। মুখে বা চুলে যা কিছু মাখছেন, তা আদৌ নিরাপদ কি না, জেনে নেওয়া জরুরি।
রূপচর্চার কী কী ভুলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে?
চড়া গন্ধের সুগন্ধি
অনেকেই সরাসরি ত্বকে সুগন্ধি লাগান। এই অভ্যাস স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ভাল নয়। পারফিউম বা ডিয়োতে মূলত থাকে সুগন্ধি তেল এবং অ্যালকোহলের মিশ্রণ। বেশ কিছু সুগন্ধিতে নানা প্রকার রাসায়নিকও থাকে। বিশেষ করে থ্যালেট্স নামে এক ধরনের রাসায়নিক সুগন্ধির চড়া গন্ধ ধরে রাখতে সাহায্য করে। থ্যালেট্স-যুক্ত সুগন্ধি যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁদের এন্ডোক্রিন গ্রন্থির কার্যকারিতা নষ্ট হতে থাকে। এই গ্রন্থিই হরমোনের ক্ষরণে সাহায্য করে। দেখা গিয়েছে, চড়া সুগন্ধি রোজ ত্বকের সংস্পর্শে এলে মহিলাদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্য হয়, এমনকি থাইরয়েড হরমোনের ক্ষরণেও গোলমাল হয়।
উচ্চ এসপিএফ-যুক্ত সানস্ক্রিন
সানস্ক্রিনে থাকা অ্যাভোবেঞ্জন, অক্সিবেঞ্জোন, অক্টিনোক্সেট নামক রাসায়নিক সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দিলেও, সেগুলি শরীরের জন্য খুব একটা ভাল নয়। কত এসপিএফের সানস্ক্রিন ব্যবহার করছেন তা-ও খেয়াল করা জরুরি। কেনার আগে এতে থাকা উপাদানগুলি দেখে নিতে হবে। সানস্ক্রিনে যদি এক্সিবেঞ্জোন বেশি পরিমাণে থাকে, তা হলে ইস্ট্রোজেন হরমোন উৎপাদনে বাধা তৈরি করতে পারে। ইস্ট্রোজেনের গোলমাল হলে, শরীরের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলিও বিগড়ে যাবে।
অধিক ‘এক্সফোলিয়েশন’
প্রতি দিন যদি ত্বকে স্ক্রাবার ব্যবহার করেন, তা হলে ত্বকের প্রতিরক্ষামূলক আবরণ নষ্ট হবে। এতে প্রদাহ বাড়বে। প্রদাহের কারণে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের ক্ষরণ বেড়ে যাবে। আর স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বাড়লে, বাকি হরমোনগুলির ক্ষরণেও গোলমাল শুরু হবে।
সিন্থেটিক রেটিনয়েড
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে পারে রেটিনল। এমনই বলেন রূপচর্চাশিল্পীরা। বার্ধক্যের ছাপ মুছে ফেলতে তাই অনেক মহিলাই এমন প্রসাধনী ব্যবহার করছেন বা ওষুধ খাচ্ছেন, যাতে রেটিনয়েড রয়েছে। এই উপাদান ত্বকের জেল্লা বাড়িয়ে তুলতে পারে ঠিকই, কিন্তু শরীরে বেশি পরিমাণে ঢুকলে তা হরমোনের ক্ষরণে বাধা তৈরি করতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় রেটিনয়েড-যুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করলে বা সাপ্লিমেন্ট নিলে বিপদ ঘটতে পারে।
অ্যান্টি-এজিং পণ্য
কিছু মেকআপ বা অ্যান্টি-এজিং পণ্য টিন বা অন্যান্য ধাতব পাত্রে আসে। সেগুলিতে আর্সেনিক বা ক্যাডমিয়াম জাতীয় ধাতু থাকতে পারে। ক্যাডমিয়াম থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে।
এসেনশিয়াল অয়েল
এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে হলে সব সময়ে ক্যারিয়ার অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া উচিত। মেশাতেও হবে সঠিক অনুপাতে। খুব বেশি পরিমাণে এসেনশিয়াল অয়েল রোজ ব্যবহার করলে মহিলাদের ইস্ট্রোজেন ও থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। ইদানীংকালে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারের নতুন ধারা শুরু হয়েছে। বাড়িতেও ঘরোয়া উপকরণের সঙ্গে এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে মুখে বা চুলে মাখছেন অনেকে। তাই সাবধানে ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে ল্যাভেন্ডার ও টি ট্রি অয়েলের মাত্রা বেশি হলেই মুশকিল।