মুখের গড়ন যতই সুন্দর হোক, গাল জুড়ে বড় বড় ব্রণ সৌন্দর্যটাই মাটি করে দেয়। তার উপর সেই ব্রণ খুঁটে ফেললে দাগ, গর্ত হয়ে একাকার হয়। ব্রণ হলে কোনটা করা দরকার, কোনটা নয়, জানলে সহজেই সমস্যা থেকে মক্তি পেতে পারেন।
এখন কথা হল, এক দিনে ব্রণর সমস্যা দূর করা কি সম্ভব? ঘরোয়া উপায়ে ব্রণর লালচে দাগ, ফোলা ভাব ও যন্ত্রণা দূর করা যায়। তবে যদি সোরিয়াসিস বা এগজ়িমার মতো চর্মরোগ থাকে, তা হলে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে। ত্বকের ধরন বুঝে চিকিৎসা হবে। যাঁদের খুব তৈলাক্ত ত্বক, মাঝেমধ্যেই ব্রণ বা ফুস্কুড়ির সমস্যা ভোগায়, তাঁরা ঘরোয়া কিছু টোটকা ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
ব্রণ সারবে কিসে?
বরফ
ব্রণর জায়গায় বরফ চেপে ধরে রাখুন কিছু ক্ষণ। তবে রুমালে জড়িয়েই বরফ দেবেন, সরাসরি ত্বকে নয়। বরফ প্রদাহ কমায়। রক্তনালিগুলিকে সঙ্কুচিত করে। ফলে ফোলা ভাব, ব্যথা কমে যায়।
ব্যবহার: একটি পরিষ্কার কাপড়ে বা নরম কাপড়ে এক টুকরো বরফ জড়িয়ে সরাসরি ব্রণের উপর ৫-১০ মিনিটের জন্য রাখুন। প্রতি ঘণ্টায় এক বার করে করতে পারেন। সরাসরি ত্বকে বরফ লাগাবেন না, এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
টি ট্রি অয়েল
টি ট্রি অয়েলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে, যা জীবাণু ধ্বংস করতে পারে। ত্বকে ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণে যদি ব্রণর সমস্যা বাড়ে, তা হলে টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
ব্যবহার: তুলোয় করে এক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল নিয়ে সরাসরি ব্রণের উপর লাগান। না হলে, ১:৯ অনুপাতে জলের সঙ্গে মিশিয়ে (১ ভাগ টি ট্রি অয়েল, ৯ ভাগ জল) ব্যবহার করা ভাল। ঘুমানোর আগে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
মধু
মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বকের সংক্রমণ কমাতে এবং প্রদাহ নাশ করতে পারে।
ব্যবহার: সামান্য মধু নিয়ে ব্রণের উপর লাগিয়ে রাখুন ১৫-২০ মিনিট। এর পর ঈষদুষ্ণ জলে ধুয়ে ফেলুন।
গ্রিন টি
গ্রিন টিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে যা ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ব্যবহার: একটি গ্রিন টি ব্যাগ গরম জলে ডুবিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা টি ব্যাগটি ব্রণের উপর ৫-১০ মিনিটের জন্য রাখুন। আপনি ঠান্ডা গ্রিন টি দিয়ে মুখ ধুতেও পারেন। এতেও কাজ হবে।
অ্যাসপিরিনের গুঁড়ো
অ্যাসপিরিনে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড থাকে, যা ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ব্যবহার: একটি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট সামান্য জল দিয়ে গুঁড়ো করে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট ব্রণের উপর লাগান এবং ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তবে স্যালিসাইলিক অ্যাসিডে যদি অ্যালার্জি থাকে, তা হলে ব্যবহার না করাই ভাল।
১. বরফ:
-
কীভাবে কাজ করে: বরফ প্রদাহ এবং লালভাব কমাতে সাহায্য করে, রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে।
-
ব্যবহার: একটি পরিষ্কার কাপড়ে বা নরম কাপড়ে এক টুকরো বরফ জড়িয়ে সরাসরি ব্রণের উপর ৫-১০ মিনিটের জন্য রাখুন। প্রতি ঘণ্টায় একবার করে পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। সরাসরি ত্বকে বরফ লাগাবেন না, এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
২. টি ট্রি অয়েল (Tea Tree Oil):
-
কীভাবে কাজ করে: টি ট্রি অয়েলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে, যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং লালভাব কমায়।
-
ব্যবহার: একটি কটন সোয়াবে এক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল নিয়ে সরাসরি ব্রণের উপর লাগান। এটি সরাসরি ব্যবহার করা বেশি শক্তিশালী হতে পারে, তাই ১:৯ অনুপাতে জলের সাথে মিশিয়ে (১ ভাগ টি ট্রি অয়েল, ৯ ভাগ জল) ব্যবহার করা ভালো। ঘুমানোর আগে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৩. মধু:
-
কীভাবে কাজ করে: মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সংক্রমণ কমাতে এবং ত্বককে শান্ত করতে সাহায্য করে।
-
ব্যবহার: সামান্য মধু সরাসরি ব্রণের উপর লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন। এর পর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৪. অ্যালোভেরা জেল:
-
কীভাবে কাজ করে: অ্যালোভেরা প্রদাহ কমাতে এবং নিরাময় প্রক্রিয়া দ্রুত করতে সাহায্য করে।
-
ব্যবহার: তাজা অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে সরাসরি ব্রণের উপর লাগান এবং ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।
৫. সবুজ চা (Green Tea):
-
কীভাবে কাজ করে: গ্রিন টিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে যা ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
-
ব্যবহার: একটি গ্রিন টি ব্যাগ গরম জলে ডুবিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা টি ব্যাগটি ব্রণের উপর ৫-১০ মিনিটের জন্য রাখুন। আপনি ঠান্ডা গ্রিন টি দিয়ে মুখ ধুতেও পারেন।
৬. অ্যাসপিরিন পেস্ট:
-
কীভাবে কাজ করে: অ্যাসপিরিনে স্যালিসিলিক অ্যাসিড থাকে, যা ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
-
ব্যবহার: একটি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট সামান্য জল দিয়ে গুঁড়ো করে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট ব্রণের উপর লাগান এবং ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। যাদের স্যালিসিলিক অ্যাসিডে অ্যালার্জি আছে, তাদের এটি ব্যবহার করা উচিত নয়।
৭. টুথপেস্ট (সাদা টুথপেস্ট, জেল নয়):
-
কীভাবে কাজ করে: কিছু টুথপেস্টে বেকিং সোডা বা অ্যালকোহল থাকে যা ব্রণকে শুকাতে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি খুব বেশি শুষ্ক করে দিতে পারে এবং সবার ত্বকের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
-
ব্যবহার: খুব সামান্য সাদা টুথপেস্ট (জেল নয়) ব্রণের উপর লাগিয়ে overnight রেখে দিন। সকালে ধুয়ে ফেলুন। সাবধানতা: সংবেদনশীল ত্বকে এটি জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে, তাই সাবধানে ব্যবহার করুন।
তাৎক্ষণিক ফল পাওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
-
ব্রণ খোঁটা বা চাপাচাপি করবেন না: এতে সংক্রমণ আরও ছড়াতে পারে এবং দাগ হতে পারে।
-
ত্বক পরিষ্কার রাখুন: দিনে দুইবার হালকা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।
-
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন: এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন যা "নন-কমেডোজেনিক" (non-comedogenic), অর্থাৎ যা ছিদ্র বন্ধ করবে না।
-
মেকআপ কম ব্যবহার করুন: যদি খুব প্রয়োজন হয়, তবে নন-কমেডোজেনিক মেকআপ ব্যবহার করুন এবং ঘুমানোর আগে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।