Hair Botox

যৌবন ধরা থাক চুলেও, পুজোর আগে করিয়ে নিন হেয়ার বোটক্স, কী ভাবে করে? কলকাতায় খরচ কত?

কেশসজ্জা যতই সুন্দর হোক না কেন, রুক্ষ চুলে তা মানাবে না। চুল উঠে পাতলা হয়ে গেলেও দেখতে ভাল লাগবে না। তাই হাতে সময় থাকতে পুজোর আগেই হেয়ার বোটক্স করিয়ে নিতে পারেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:০৪
Share:

হেয়ার বোটক্স কী, কলকাতায় খরচ কত? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পুজোর জন্য চুলের যত্ন নেওয়া শুরু করেছেন নিশ্চয়ই। নানা রকম কেশসজ্জা করার ইচ্ছাও আছে। তার জন্য হেয়ার কাটও করাচ্ছেন। তবে চুল যদি নিষ্প্রাণ ও জেল্লাহীন হয়, তা হলে সব চেষ্টাই মাটি হবে। কেশসজ্জা যতই সুন্দর হোক না কেন, রুক্ষ চুলে তা মানাবে না। চুল উঠে পাতলা হয়ে গেলেও দেখতে ভাল লাগবে না। তাই হাতে সময় থাকতে হেয়ার বোটক্স করিয়ে নিতে পারেন।

Advertisement

ত্বকের বয়স ধরে রাখতে অনেকেই সাহায্য নেন স্কিন বোটক্সের। তেমনই চুলের জন্যও বোটক্স হয়। তবে তার পদ্ধতি আলাদা। ত্বকের বোটক্স আর চুলের বোটক্স কিন্তু একেবারেই এক নয়। ত্বকের বোটক্সের মতো এতে ‘বোটুলিনাম টক্সিন’ ব্যবহার করা হয় না। পুরোটাই সালোঁতে বিশেষ উপায়ে কেশ পরিচর্যার মাধ্যমে করা হয়। কেশসজ্জাশিল্পীরা বলেন, বোটক্স করালে অন্তত ২-৪ মাস চুল ভাল থাকবে। চুলের গোড়া মজবুত হবে, অহেতুক জট পড়বে না। চুল নরম ও জেল্লাদার হয়ে উঠবে। তবে হেয়ার বোটক্স করানোর আগে ভাল করে জেনে নিন, পদ্ধতিটি ঠিক কেমন। এটি করাতে খরচই বা কত পড়বে?

ত্বকের মতো চুলেরও যৌবন ধরে রাখবে বোটক্স

Advertisement

চুলের পুষ্টি জোগানোর এক বিশেষ পদ্ধতিই হেয়ার বোটক্স। কেশসজ্জাশিল্পী প্রিয়ঙ্কা জৈন বললেন, “হেয়ার বোটক্স হল এক ধরনের ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট। চুলর ক্ষয়ক্ষতি মেরামতের জন্যই তা করা হয়। চুলের ডগা ফেটে গেলে, রুক্ষ হয়ে গেলে, চুল বেশি উঠে যেতে শুরু করলে হেয়ার বোটক্স করা হয়। এটি মাঝেমধ্যে করিয়ে নিলে চুল আরও ঘন হয়, চুল ওঠা বন্ধ হয় এবং চুলের ঔজ্জ্বল্যও বাড়ে।”

কী ভাবে করে হেয়ার বোটক্স? ছবি: এআই।

কেরাটিন চিকিৎসার থেকে আলাদা বোটক্স

চুল নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা অনেকেরই শখ। কখনও কোঁকড়ানো চুল সোজা করা, আবার কখনও সোজা চুলে ঢেউ খেলানো, তার উপর নানা রকম রঙের বাহার, কিছুই বাদ যায় না। কিন্তু এই সব পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে চুলের স্বাভাবিক জেল্লা, মসৃণতা হারিয়ে যায়। সে কারণেই বোটক্স বা কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করাতে হয়। কিন্তু এখানে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। বোটক্স আর চুলের কেরাটিন চিকিৎসা কিন্তু এক নয়।

হেয়ার বোটক্স মূলত প্রোটিন, কোলাজেন, ভিটামিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, কেরাটিন ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের মিশ্রণ। এই উপাদানগুলি চুলে পুষ্টির জোগান দেয়। আর কেরাটিন হল এক ধরনের প্রোটিন। যা মানবদেহে স্বাভাবিক ভাবেই থাকে। কিন্তু বাইরে থেকে এই প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করার ফলে চুল সাময়িক ভাল হলেও এর মধ্যে থাকে ‘ফরমালডিহাইড’ নামক এক ধরনের যৌগ। যা চুলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ফরমালডিহাইডি থেকে অ্যালার্জি, হাঁচি, কাশি, গলা ব্যথা, এমনকি শ্বাসকষ্টও হতে পারে। তাই কেরাটিনের চেয়ে বোটক্স অনেক বেশি নিরাপদ বলেই মনে করছেন কেশসজ্জাশিল্পীরা। কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করালে সেই চুল স্ট্রেট হয়ে যায়। তবে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু হেয়ার বোটক্সে তা হয় না, চুলের গঠন আগের মতোই থাকে।

রুক্ষ, ক্ষতিগ্রস্ত চুলে প্রাণ ফেরাতে পারে বোটক্স। ছবি: এআই।

ধাপে ধাপে বোটক্স

১) প্রথমে শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে ধুয়ে নেওয়া হয়। শ্যাম্পু ভাল ভাবে করা হয়, যাতে চুলে জমে থাকা ধুলোময়লা, তেল পরিষ্কার হয়ে যায়। এটিই শুরুর ধাপ।

২) শ্যাম্পু করার পর পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে চুলের অতিরিক্ত জল শুষে নেওয়া হয়। বোটক্স করানোর সময়ে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা হয় না। চুলে কোনও রকম তাপও দেওয়া হয় না।

৩) এ বার চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী কয়েক ভাগে ভাগ করে নিয়ে প্রতিটি ভাগের আগা থেকে গোড়া অবধি বোটক্স লাগানো হয়।

একবার বোটক্স করালে প্রায় চার মাসের জন্য চুল নরম ও জেল্লাদার থাকবে। ছবি: এআই।

৪) বোটক্স লাগানোর পর ৪৫-৯০ মিনিট রেখে দেওয়া হয়।

৫) চুল নরম হয়ে গেলে আরও এক বার শ্যাম্পু করানো হয়। এর পর ড্রায়ারের কুল মোডে খুব কম তাপমাত্রায় কোল্ড ব্লাস্ট করা হয় চুলে। এতে চুলে বোটক্স খুব ভাল ভাবে বসে যায় এবং ডগা ফাটা, রুক্ষ চুলের সমস্যা দূর হয়।

হেয়ার বোটক্স করাতে মোট দেড় থেকে দু’ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।

বোটক্সে লাভ অনেক, ক্ষতি কি কিছু আছে?

বোটক্স করালে অন্তত চার মাসের জন্য নিশ্চিন্ত। চুল একই রকম নরম ও জেল্লাদার থাকবে। চুলের ঘনত্বও বাড়বে। সাধারণত বোটক্সের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব কম। তবে যদি কারও অ্যালার্জির ধাত বা চর্মরোগ থাকে, তা হলে সতর্ক হতে হবে। সে ক্ষেত্রে মাথার তালুতে হালকা চুলকানি বা র‌্যাশ হতে পারে।

বোটক্স করানোর পর প্রথম সপ্তাহে চুল একটু বেশিই তেলতেলে মনে হবে। তবে ধীরে ধীরে তা চলে যাবে।

খরচ কত পড়বে?

চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী খরচ নির্ভর করবে। কোন সালোঁতে করাচ্ছেন, তার উপরেও খরচ নির্ভর করবে। আবার চুল যদি খুব রুক্ষ হয়ে যায় বা চুলের মান খুব বেশিই খারাপ হয়, তা হল বোটক্স করাতে সময়ও লাগবে এবং খরচও সেই অনুপাতে বাড়বে। কলকাতায় হেয়ার বোটক্স করাতে সাধারণত চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগবে।

প্রিয়ঙ্কা জানাচ্ছেন, এক বার বোটক্স করিয়ে নিলে চুলের স্বাস্থ্য বজায় থাকবে দীর্ঘ দিন। চুল অকালে পাকবে না। ভিতর থেকে চুলের পুষ্টি হবে, ফলে ধীরে ধীরে চুলের মান আরও ভাল হবে। ত্বকের বোটক্স যেমন চল্লিশোর্ধ্বরা বেশি করান, হেয়ার বোটক্সে তেমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোনও বয়সেই করানো যায়। বোটক্স করানোর পর কী ভাবে চুলের যত্ন নিতে হবে, তা সালোঁ থেকে জেনে নিতে হবে মনে করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement