জয়পুরে কী ‘পোশাক’ পরলেন কৃতি শ্যানন? ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
রাজস্থানের জয়পুরে বলিউডের এক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের ‘মেহফিল’ বসেছিল গত দু’দিন ধরে। সেই মেহফিল আলো করে মরুশহরের বালিতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন বলিউডের নক্ষত্রেরা। শাহরুখ খান থেকে কার্তিক আরিয়ান, করিনা কপূর থেকে কৃতি শ্যানন— কে ছিলেন না সেখানে! তারকাদের ক্যামেরাবন্দি করতে হাজির ছিলেন ছবিশিকারিরাও। তাঁদের দৌলতেই জয়পুরে কে কী করলেন, পরলেন, তার ছবি-ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। বসেছে বিচারসভাও। কে কত ভাল সেজেছেন, কার থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না, কে আরও একটু ভাল সাজতে পারতেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে নায়িকাদের সাজগোজের বিচার করতে বসে একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন অধিকাংশেই। জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী কৃতির সাজ ছিল নজরকাড়া।
দু’দিনের অনুষ্ঠানে দু’দিনই সাদা পোশাক পরেছিলেন কৃতি। এক দিন পশ্চিমী ধাঁচের ইভনিং গাউন। আর এক দিন ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাক। এই দ্বিতীয় দিনের পোশাকটি নিয়েই শুরু হয়েছে আলোচনা। জানা গিয়েছে, পোশাকটি খাস রাজস্থানেরই পরিধেয়। আর তার একটি নামও আছে— ‘পোশাক’।
রাজপুত রমণীদের ‘পোশাক’-এর অন্তর্গত অলঙ্কারও। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
বাংলায় ‘পরিধেয়’ শব্দটিরই আর এক নাম পোশাক। রাজস্থানেও ‘পোশাক’-এর অর্থ পোশাকই। কিন্তু ‘পোশাক’ নামের রাজস্থানী পরিধেয়টি পুরুষদের জন্য নয়। রাজপুত মহিলাদের যে ঐতিহ্যবাহী সাজ, তারই আর এক নাম ‘পোশাক’। রাজপুত রমণীরা বিশেষ অনুষ্ঠানে ওই ‘পোশাক’ পরতেন। তবে তা পরার বিশেষ নিয়মও ছিল। রাজস্থানের মহিলাদের ‘পোশাক’ পরতে হত পাঁচটি পর্যায়ে। কারণ, ‘পোশাক’-এর পাঁচটি ভাগ রয়েছে।
‘পোশাক’-এর পাঁচ ভাগ
১। ঘাগরা: ঘাগরা জিনিসটি কী, তা অনেকেই জানেন। ঘের দেওয়া স্কার্টের মতো দেখতে। শরীরের নীচের অংশের পোশাক। ঘাগরায় সাধারণত পাড় থাকে। থাকে ঐতিহ্যবাহী নকশার কাজও।
২। কাঁচুলি: খানিকটা মেয়েদের উর্ধ্বাঙ্গের অন্তর্বাসের মতো দেখতে। কাঁচুলির বিশেষত্ব হল, উর্ধ্বাঙ্গে পরার ওই পোশাকের হাতা থাকে কিন্তু বোতাম, চেন বা হুক থাকে না। কাচুলি বাঁধতে হয়। পিঠের দিকে দু’টি দড়ি দিয়ে বাঁধা খাকে কাঁচুলি।
৩। কুর্তি: কুর্তার মহিলা সংস্করণ নয়। রাজস্থানি ‘পোশাক’-এর কুর্তি আদতে হাতাহীন জ্যাকেট যা কাঁচুলির উপর পরতে হয়। কুর্তির ঝুল সাধারণত হয় হাঁটু বা ঊরুর মাঝামাঝি অংশ পর্যন্ত।
কৃতির ওই পোশাকের নকশা করেছেন রাজস্থানেরই পোশাকশিল্পী রাঘবেন্দ্র রাঠৌর। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
৪। ওড়না: ঘাগড়ার সঙ্গে মাথায় ওড়না দেওয়া রাজস্থানের দস্তুর। সেটিও ছিল ‘পোশাক’-এর অঙ্গ।
৫। রাজস্থানি গয়না: রাজস্থানি গয়না মানে মাথার টিকলি, গলার হার, হাতে চুড়ি থাকবেই। রাজপুত রমণীদের ‘পোশাক’-এর অন্তর্গত সে সবও।
কৃতির পোশাকটিতে অবশ্য কাঁচুলি তেমন দৃশ্যমান নয়। কুর্তিও হাতাহীন নয়। ফিনফিনে আধা স্বচ্ছ ঘাগরার সঙ্গে ফুল হাতা জ্যাকেট পরেছেন কৃতি। সঙ্গে পরেছেন সোনার গয়না। কৃতির ওই পোশাকের নকশা করেছেন রাজস্থানেরই পোশাকশিল্পী রাঘবেন্দ্র রাঠৌর। তবে কৃতির মতো রাজস্থানি ‘পোশাক’ আপনিও পরতে পারেন।
খাঁটি রাজপুতানার ‘পোশাক’ রাজস্থানেই পাওয়া যাবে। কেউ বেড়াতে গেলে তাঁকে দিয়ে আনতে দিতে পারেন। দেশের বিভিন্ন শহর অবস্থিত রাজস্থানের এম্পোরিয়ামেও পাওয়া যেতে পারে ‘পোশাক’। ইদানীং অবশ্য অনলাইনেও রাজস্থানের বিক্রেতারা পোশাক বিক্রি করেন। বিভিন্ন সমাজমাধ্যম থেকে খুঁজে নিতে পারেন। ‘পোশাক’ কিয়দংশে সেলাই করা অবস্থাতে পাওয়া যায়। বাকিটা নিজের মাপ বুঝে বানিয়ে নিতে হয়।