Puja Special 2025

রাতভর ঠাকুর দেখে টেরিটি বাজারে নাক শিঁটকে চিনা ব্রেকফাস্ট করতাম

দুর্গাপুজো নিয়ে বাঙালির নানা স্মৃতি। সেই স্মৃতির পাশাপাশি পুজো কেমন কাটছে, বাকি দিনগুলির পরিকল্পনাই বা কী রকম? ভাগ করে নিলেন অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

সাহেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০০
Share:

সাহেব চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

এ বছর আমার অষ্টমীটা কাটবে আমার পাড়ার পুজো প্যান্ডেলেই। বালিগঞ্জ কালচারালের পুজো এ বার ৭৫ বছরে পা দিয়েছে, তাই পুজো ঘিরে এ বছর জাঁকজমক আর ঘটা যেন আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। আমার বাবার প্রাণ ছিল বালিগঞ্জ কালচারালের পুজো। আর এখন এত পুজোর ভিড়েও আমার মনটা পড়ে থাকে সেই ছেলেবেলার পুজো প্যান্ডেলেই। একটা সময় ছিল, যখন পুজোয় ঠাকুর দেখা ঘিরে আলাদা উন্মাদনা ছিল, তবে এখন আর সেই সুযোগ আর ইচ্ছে কোনওটাই হয় না।

Advertisement

ছেলেবেলার পুজোর কথা ভাবলেই মনে পড়ে যায় বিডন স্ট্রিটে দর্জিপাড়ায় মামাবাড়িতে যাওয়া। সেখানে হত ভাইবোনদের জমায়েত। রাতভর জেগে ঠাকুর দেখা, হইচই আর খাওয়াদাওয়া। যখন প্রথম প্রথম চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম সেই সময়ও ভাইবোনদের সঙ্গে ঠাকুর দেখার প্ল্যানটা ছিল মাস্ট।

পুজোর দিনগুলি কী ভাবে কাটে সাহেবের? ছবি: সংগৃহীত।

মনে আছে পুজোর সময় ভাইবোনদের সঙ্গে বেরোনো মানেই সারা রাত ধরে উত্তর কলকাতার মোটামুটি সব ছোটবড় প্যান্ডেলে ঢুঁ মারতেই হবে। আর সব শেষে কলেজ স্কোয়্যার আর মহম্মদ আলি পার্ক হয়ে ওরা আমায় টেনে নিয়ে যেত টেরিটি বাজার, ওখানকার চাইনিজ় ব্রেকফাস্ট খেতে। আমি ভাই আদ্যপান্ত বাঙালি মানুষ, নাম সাহেব হলেও সাহেবি বা বিদেশি খাবারের প্রতি কোনও টানই নেই আমার! বরং মাছ-ভাত পেলেই আমি খুশি। সেই আমি, ভাইবোনদের পাল্লায় পড়ে মোমো, থুকপা, ওয়ানটন খেতাম বছরের ওই একটা দিন। তখন নাক শিঁটকে সেই চিনা খাবারগুলি খেতাম বটে, তবে এখন মনে হয় ওই দিনগুলির আনন্দটাই ছিল আলাদা।

Advertisement

মনে পড়ে, যখন সবে সবে একটু নামডাক হতে শুরু করেছে, তখন পুজো পরিক্রমায় বিচারক হওয়ার জন্য প্রচুর আমন্ত্রণ আসত। ওই ফাঁকে শহরের নামীদামি প্রায় সব প্যান্ডেলই দেখা হয়ে যেত। আমন্ত্রণ এখনও আসে, তবে পুজোর ক’দিন শহরের রাস্তাঘাটের যে বেহাল দশা হয়, সেই ভয়ে এখন আর পুজো পরিক্রমায় যাই না। এখন একটা ঠাকুরও দেখি না। যে বছর কলকাতায় থাকি, সে বছরগুলিতে বালিগঞ্জ কালচারালের পুজো ঘিরেই আমার দিন কেটে যায়। আর এই চত্বরে বেশ কয়েকটা ভাল ভাল ক্যাফে আছে, বন্ধুবান্ধবরা কেউ দেখা করতে এলে সেই সব বাহারি ক্যাফেতেই বসে আমাদের আড্ডার আসর। পাড়ার পুজোয় আনন্দ করা, খাওয়াদাওয়া আর আড্ডা— আমার পুজোর প্ল্যান একেবারে তৈরি।

শহরে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর হয়তো দেখি না, তবে পুজোর সময় এখন আর কলকাতা ছেড়ে যেতেও ইচ্ছে করে না। বিদেশের শো থাকলে আলাদা ব্যাপার, তবে পুজোর সময় দিল্লি, মুম্বইয়ের শোয়ের জন্য আমন্ত্রণ পেলে এখন আর যাই না। একটা সময় প্রচুর শো করেছি, এখন আর করি না। কয়েক বছর ধরে পুজোর ক’টা দিন শহরের বদলে যাওয়া আমেজটা বেশ চোখে পড়ছে। যত দিন যাচ্ছে, পুজোগুলো কেমন যেন কর্পোরেট পুজোয় পরিণত হচ্ছে। ষষ্ঠী থেকে দশমী— আগে দুর্গাপুজোর যাবতীয় আয়োজন হত ওই পাঁচ দিনের জন্য। তবে এখন তো মহালয়া আসার আগে থেকেই পুজো শুরু হয়ে যাচ্ছে শহরে। হইহুল্লোড় করার সময়টা হয়তো বেড়ে গিয়েছে, তবে দুর্গাপুজোর আসল আমেজ কিন্তু ধীরে ম্লান হচ্ছে হলে আমার মনে হয়।

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement