পায়ে পায়ে জীবাণু, আরশোলা থেকে সাবধান

গরমের শুরুতেই পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন সনৎ আর কুহেলী। রাস্তার খাবারে রুচি নেই। তার উপরে গরম। কুহেলী বাড়ি থেকে রান্না করে এনেছিলেন হাল্কা কিছু খাবার। কিন্তু হোটেলে পৌঁছতে না-পৌঁছতেই পেটের গন্ডগোল দেখা দিল সনতের। স্থানীয় চিকিৎসক জানালেন, ‘ফুড পয়জনিং’ বা খাদ্যে বিষক্রিয়া। একটা দিন ভীষণ উদ্বেগের সঙ্গে কাটিয়ে কোনও রকমে বিমান ধরে কলকাতায় ফিরলেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ১০:১৩
Share:

• গরমের শুরুতেই পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন সনৎ আর কুহেলী। রাস্তার খাবারে রুচি নেই। তার উপরে গরম। কুহেলী বাড়ি থেকে রান্না করে এনেছিলেন হাল্কা কিছু খাবার। কিন্তু হোটেলে পৌঁছতে না-পৌঁছতেই পেটের গন্ডগোল দেখা দিল সনতের। স্থানীয় চিকিৎসক জানালেন, ‘ফুড পয়জনিং’ বা খাদ্যে বিষক্রিয়া। একটা দিন ভীষণ উদ্বেগের সঙ্গে কাটিয়ে কোনও রকমে বিমান ধরে কলকাতায় ফিরলেন তাঁরা।

Advertisement

• কলেজ থেকে বন্ধুদের সঙ্গে শিক্ষামূলক ভ্রমণে গিয়েছিলেন পলাশ দে। কয়েক দিন দেদার মশলাদার খাবার খেয়ে রীতিমতো অরুচি ধরে গিয়েছিল। প্রাণটা আনচান করছিল ঘরোয়া খাবারের জন্য। কিন্তু বাড়ি ফিরে সাধারণ ডাল-ভাত খাওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। অসহ্য পেটব্যথা, সঙ্গে বমি। চিকিৎসক জানালেন, ‘ফুড পয়জনিং’ বা খাদ্যে বিষক্রিয়া। এবং সেটা হয়েছে বাড়ির খাবার থেকেই।

গ্রীষ্মের শুরুতেই অনেকে এই সমস্যায় ভুগছেন। তাই আগে থেকেই এ বিষয়ে সাবধান হতে বলছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, অস্বাস্থ্যকর খাবার, অপরিস্রুত জল এবং অপরিচ্ছন্নতা এই সমস্যার মূল কারণ। সেই সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে পোকামাকড় থেকেও খাদ্যে বিষক্রিয়া হতে পারে। বর্ষাকালে এই আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। এসএসকেএম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান সত্যগোপাল মাইতি জানান, ফুড পয়জনিংয়ের ক্ষেত্রে মাছি এবং আরশোলার ভূমিকা মোটেই কম নয়। রান্নাঘর যতই পরিষ্কার রাখা হোক না কেন, অনেক সময়েই পাইপ বেয়ে আরশোলা ঢুকে পড়ে। আর সঙ্গে নিয়ে আসে মারাত্মক সব জীবাণু।

Advertisement

অনেকে আরশোলা দেখলেই শিউরে ওঠেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই শিউরে ওঠা বা ভয় পাওয়াটা এক দিক থেকে খুবই অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে। সেটা স্বাস্থ্যের দিক। তাঁরা বলছেন, আরশোলার উপদ্রবকে হেলাফেলা করলেই সর্বনাশ। যতটা ক্ষতিকারক মনে করা হয়, আরশোলা তার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতিকর।

আরশোলার চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এই পতঙ্গটি জোরালো আলো পছন্দ করে না এবং যে-কোনও ধরনের কম্পনের ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর। তাই বসবাসের জন্য এরা বেছে নেয় এমন জায়গা, যেখানে সচরাচর মানুষের হাত পড়ে না। রান্নাঘর অন্ধকার হয়ে গেলে বাসনপত্রের উপরে এরা অবাধে ঘোরাঘুরি করে আর তা থেকেই ছড়ায় সংক্রমণ। অনেকেই গরমে খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে খাবার না-ঢেকে রেখে দেন। সে-ক্ষেত্রে সমস্যা আরও ভয়াবহ হতে পারে। একটি পূর্ণবয়স্ক আরশোলা তার জীবৎকালে প্রায় এক লক্ষ আরশোলার জন্ম দেয়। ফলে এক বার যদি বাড়িতে আরশোলা বাসা বাঁধে, তাদের সবংশে নির্মূল করা রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়ে।

সত্যগোপালবাবু বলেন, ‘‘আরশোলা থেকে খুব সাবধানে থাকতে হবে। যে-কোনও পরিবেশে এদের টিকে থাকার ক্ষমতা অসীম। এমনকী নতুন ফ্রিজের ভিতরেও আরশোলাদের বাসা বাঁধতে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’’

পোকামাকড়ের বয়ে আনা জীবাণু থেকে যে-‘ফুড পয়জনিং’ হয়, ব্যাক্টেরিয়াঘটিত ‘ফুড পয়জনিং’-এর থেকে তার চরিত্র কতটা আলাদা, তা ব্যাখ্যা করলেন চিকিৎসক প্রবীর বিশ্বাস। পতঙ্গবাহিত জীবাণু থেকে খাদ্যে যে-বিষক্রিয়া হয়, তাতে ব্যাপারটা দাঁড়ায় অনেকটা আন্ত্রিকের মতো। ফলে অনেক সময়েই রোগ নির্ণয়ে দেরি হয়ে যায়। তাঁর পরামর্শ, যদি দেখা যায় দীর্ঘদিনেও পেটের রোগ সারছে না, তা হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কারণ, এই ধরনের জীবাণুর উপরে সাধারণ ওষুধ বিশেষ কাজ করে না। ‘‘এ দেশে তো মাছি-আরশোলা বেশি। তাই সাবধান থাকতে হবে। কেননা এদের থেকে শুধু ফুড পয়জনিং নয়, টাইফয়েডের মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে,’’ সতর্ক করছেন প্রবীরবাবু।

ভিন্ন মতও আছে। পোকামাকড় থেকে খাদ্যে বিষক্রিয়ার আশঙ্কা প্রায় উড়িয়েই দিচ্ছেন চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার। ‘‘খাবারদাবার সংরক্ষণের ব্যাপারে মানুষ এখন যথেষ্ট সচেতন। প্রধানত অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং জল থেকেই খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়। এ-সব ক্ষেত্রে পোকামাকড়ের ভূমিকা খুবই কম,’’ বলছেন দীপঙ্করবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন