Nirmala Sitharaman

শাড়িতে বাংলার কাঁথার কাজ, পদ্মশ্রী তকদিরা আর অর্থমন্ত্রী নির্মলা মিলে গেলেন একই সুতোর টানে

২০২৩ সালে স্পষ্টই দক্ষিণী শাড়ি পরে বাজেট বক্তৃতা দিয়েছিলেন নির্মলা সীতারামন। সেই শাড়িতে ছিল দক্ষিণী কাজও। এ বার বাংলার ছোঁয়া। শাড়িটা সিল্কের হলেও তাতে বাংলার কাঁথার কাজ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩৬
Share:

(বাঁ দিকে) পদ্মশ্রী তকদিরা বেগম। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পোশাকের বৈচিত্র সব সময়েই আলোচনার কেন্দ্রে থাকে। পাগড়ি থেকে উত্তরীয়— সবেতেই নতুন কিছু দেখা যায় তাঁর পরনে। এ বারেও আলোচনায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের পরনের শাড়ি।

Advertisement

পুরুষ অর্থমন্ত্রীরা কী পোশাক পরে বাজেট পেশ করেন, তা নিয়ে কোনও আলোচনা ছিল না। তবে নির্মলা প্রতি বারেই নজর কাড়েন। ভারতীয় হস্তশিল্পের প্রতি তাঁর টান প্রত্যেক বার লক্ষ করা যায়। বৃহস্পতিবারে নীল-সাদা শাড়িতে সংসদে দেখা গেল নির্মলাকে। তবে এই নীল-সাদা আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নয়। বরং উল্টো। মমতা সাদা খোলের নীল পাড় শাড়ি পরেন। আর নির্মলা পরলেন নীল রঙের শাড়ি। উপরে সাদা সুতোর কাজ।

সেই সুতোর কাজেই বাংলার সঙ্গে যোগসূত্র। বাঙালিয়ানার নজির হিসাবে যে কাঁথার কাজকে আলাদা করা হয়ে থাকে, সেটাই ছিল নির্মলার শাড়িতে। শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ খানিক তসর কাপড়ের রঙের। হাতার কাছে শাড়ির পাড় কেটে বসানো।

Advertisement

অনেকের মতে, এই শাড়ির জমি দক্ষিণী মালবেরি সিল্ক। অনেকের দাবি, ‘পিয়োর সিল্ক’। আবার কারও বক্তব্য, এটা তসর। তা হলে বাংলার শাড়ি, বাংলার কাজ বলা যেত। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নিজে কিছু বলেননি। তবে কাঁথার কাজ যে রয়েছে, তা ঠিক।

সম্প্রতি পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন বীরভূমের কাঁথার কাজের শিল্পী তকদিরা বেগম। তিনি খুশি নির্মলার পরনের শাড়ি দেখে। একে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পরেছেন। তার উপরে আবার বাজেট পেশের দিনে। গোটা দেশ একটি দিনই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে আলাদা নজরে দেখে। আনন্দবাজার অনলাইনকে বোলপুরের জামবুনির বাসিন্দা তকদিরা বললেন, ‘‘আমার তো খুব ভাল লেগেছে। ঠিক কী কাপড়, সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। তবে বাংলার কাঁথার কাজ যে রয়েছে, সেটা স্পষ্ট। আমার তো মনে হয়, অর্থমন্ত্রী এই শাড়িটা পরায় কাঁথার কাজের প্রচারও হল।’’

ছোটবেলা থেকেই কাঁথার কাজ করেন তকদিরা। তাঁর নিখুঁত কাজ ভারতে তো বটেই, আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রশংসা পেয়েছে। অনেক দেশে গিয়েছেন নিজের শিল্পসৃষ্টির দৌলতে। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী দিয়ে আসলে কাঁথার কাজকেই সম্মানিত করেছে বলে মনে করেন তকদিরা। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘শাড়িটায় অর্থমন্ত্রীকে খুব মানিয়েছিল। বিশেষত, তিনি ব্লাউজের রংটা খুব সুন্দর বেছেছেন। একঝলকে আমার মনে হয়েছিল তসরের শাড়ি। তবে পরে মনে হল এটা দক্ষিণ ভারতের মালবেরি সিল্ক হতে পারে। ব্লাউজটা কিন্তু তসরের।’’ নির্মলা নিজে দক্ষিণ ভারতীয়। তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে তাঁর জন্ম এবং বড় হওয়া। দক্ষিণের কর্নাটক থেকেই তিনি রাজ্যসভা সদস্য।

নির্মলার পরনের শাড়ির সঙ্গে অনেকে ‘রাজনৈতিক যোগাযোগ’ও খুঁজছেন। তাঁদের বক্তব্য, যে রঙের শাড়ি পরে নির্মলা বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তৃতা করেছেন, তাকে তামিলনাড়ুতে ‘রামার ব্লু’ বলা হয়। এর থেকেই টেনে আনা হচ্ছে অযোধ্যা, রামমন্দির এবং রামলালার মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ। নির্মলার পোশাক বাছাই নিয়ে যাঁরা কথা বলেন, তাঁরা মনে করছেন গত বছরের কথা। ২০২৩ সালের বাজেট নির্মলা পেশ করেছিলেন হাতে বোনা ইলকল সিল্কের শাড়ি পরে। কালো পাড়ের লাল রঙের সেই শাড়ির উপরে ছিল কর্নাটকের ধারওয়াড় এলাকার বিখ্যাত ‘কাসুটি’ শিল্প। সেটাও সুতোর কাজ। সুতোর টানে নির্মলা সে বার দক্ষিণের সঙ্গে মিললেও এ বার তাঁর সুতোর বন্ধন বাংলার সঙ্গে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন