Lifestyle News

স্ট্রোক ঠেকাতে জীবনযাত্রার পরিবর্তন করুন

স্নায়ু–শল্যবিদ নৃপেন ভৌমিক জানালেন সুজাতা মুখোপাধ্যায়কেস্নায়ু–শল্যবিদ নৃপেন ভৌমিক জানালেন সুজাতা মুখোপাধ্যায়কে

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৮ ১৯:৩৫
Share:

স্ট্রোক হলে রক্ত যতটা জমার তা তো জমেই, তার পাশাপাশি জল জমে ব্রেনের ওই অংশ ফুলে যায়৷

প্র: স্ট্রোক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পৌঁছে গেলে নাকি রোগী পুরো সেরে যান?

Advertisement

উ: কত বড় স্ট্রোক হয়েছে, কোন ধরনের স্ট্রোক হয়েছে, রোগীর সাধারণ স্বাস্থ্য কী রকম, ইত্যাদি বহু কিছুর উপর নির্ভর করে রোগী কতটা সুস্থ হবেন বা আদৌ হবেন কি না৷

Advertisement

প্র: মাথায় জমা রক্ত গলিয়ে দিলেই তো হয়।

উ: ব্রেনের রক্তনালীতে ডেলা জমলে তা গলানো যায় ঠিকই, যাকে থ্রম্বোলিসিস বলে৷ তবে তার কার্যকারিতা কিন্তু প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়৷

প্র: কিন্তু আমরা যে শুনেছি এই পদ্ধতি স্ট্রোকের চিকিৎসায় যুগান্ত নিয়ে এসেছে?

উ: এর দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা হয়নি এখনও৷ তা ছাড়া প্রচুর খরচও আছে৷

প্র: খরচ হোক, কিন্তু রোগী ভাল হচ্ছেন কি না, প্রশ্ন সেটাই৷

উ: সে ব্যাপারে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি৷

প্র: আর ওই যে শিরা থেকে রক্তের ডেলা বার করে আনার চিকিৎসা?

উ, থ্রম্বেক্টমি। না, এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার কোনও অর্থ নেই৷

প্র: কেন?

উ: দেখুন, মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্তের ডেলা জমলে ওই নালী দিয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ ফলে মস্তিষ্কের যে অংশে রক্ত যোগান দিত এই নালী, সেই অংশ রক্তের অভাবে তিন মিনিটের মধ্যে মরে যায়৷ এ বার আপনি যা-ই করুন না কেন, মৃত অংশে কি প্রাণ সঞ্চার করতে পারবেন?

প্র: তা হলে তো স্ট্রোক হওয়া মানে সব শেষ?

উ: তা নয়৷ ওই অংশের কোষ মরলেও তার আশপাশের কোষেদের যদি ভাল করে ট্রেনিং দেওয়া যায় তারা ওই ঘাটতি অনেকটাই মিটিয়ে দেয়৷

প্র: কী ভাবে?

উ: ফিজিওথেরাপি করে৷ তার আগে চিকিৎসারও বিরাট ভূমিকা আছে৷

প্র: কিন্তু আপনি যেমন বললেন, অপারেশনের তো তেমন ভূমিকা নেই?

উ: তা-ও আছে৷ তবে অনেক বুঝেশুনে করতে হয়৷ করা যায় বলেই করে দিলাম, এমন হলে হবে না৷ ওষুধপত্রের চেয়ে অপারেশন করলে যদি রোগী বেশি ভাল থাকেন তবেই অপারেশনের প্রশ্ন৷

প্র: যেমন?

উ: মাথার শিরা ছিঁড়ে স্ট্রোক হলে এবং রক্ত যদি ব্রেনের ভেতরে জমে থাকে, অপারেশন করতে গেলে প্রচুর সুস্থ কোষের ক্ষতি হয়৷ তাতে ভাল হয় না প্রায় সময়েই৷ সে ক্ষেত্রে ওষুধ এবং ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ–ই প্রধান চিকিৎসা৷

প্র: আর ব্রেনের উপরে জমলে?

উ: রক্ত যদি ব্রেনের একদম উপরের অংশে জমে সুস্থ কোষেদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে কনজারভেটিভ চিকিৎসার চেয়ে অপারেশনে বেশি ভাল ফল হয় অনেক সময়৷

প্র: কনজারভেটিভ চিকিৎসা বলতে?

উ: ওষুধপত্র দেওয়া ও কড়া পর্যবেক্ষণে রাখা৷

প্র: ওষুধে রক্ত গলে?

উ: সময়ের সঙ্গে রক্ত নিজের নিয়মে মিলিয়ে যায়৷ ওষুধ দেওয়া হয় অন্য আর যে ক্ষতি হয় ব্রেনে ও আরও যে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তা সামলাতে৷

প্র: যেমন?

উ: স্ট্রোক হলে রক্ত যতটা জমার তা তো জমেই, তার পাশাপাশি জল জমে ব্রেনের ওই অংশ ফুলে যায়৷ সুস্থ কোষেদের উপর চাপ দিতে থাকে৷ ওষুধ দিয়ে এই চাপ সরানোর চেষ্টা করা হয়, যাতে নতুন করে আর কোনও ক্ষতি না হয়৷

প্র: রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখারও চেষ্টা করা হয় নিশ্চয়ই?

উ: সে তো বটেই৷ না হলে নতুন করে অঘটন ঘটতে পারে৷ তবে বাড়াবাড়ি করলে বিপদ আছে৷ ৭০ বছরের মানুষের ক্ষেত্রে ১৬০–১৭০/৯০–১০০ প্রেশারই কিন্তু স্বাভাবিক৷ তাকে আরও কমাতে গেলে ব্রেনে ঠিক ভাবে রক্ত পৌঁছয় না, বিপদ বাড়ে৷

প্র: আচ্ছা, এই যে অপারেশনের কথা আগে বললেন, তা কি খুলি কেটে করা হয়?

উ: অবশ্যই৷ না হলে ব্রেন পর্যন্ত পৌঁছবেন কী করে?

প্র: খুলির হাড়টা পরে জুড়ে দেওয়া হয়?

উ: যে অপারেশনের কথা এখানে বললাম, ক্র্যানিওটমি, তাতে হাড় তখনই জুড়ে দেওয়া হয়৷ আর এক ধরনের অপারেশন আছে, যাকে বলে ডিকমপ্রেশন সার্জারি, তাতে খুলির কাটা অংশ পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখা হয়৷ ব্রেন স্বাভাবিক হয়ে গেলে পেট কেটে তাকে বের করে বসানো হয় জায়গা মতো৷

প্র: এ তো সাঙঘাতিক ব্যাপার! কাটা খুলি নিয়ে দিন কাটান রোগী?

উ: দিন কাটানো মানে কি আর চলাফেরা, ওঠাবসা করা? ব্রেন ফুলে এমন অবস্থা হয়ে থাকে যে তা না কমা পর্যন্ত রোগী হাসপাতালে শুয়ে থাকেন৷

প্র: খোলা ব্রেনে সংক্রমণের আশঙ্কা তো থাকে?

উ: ওষুধপত্র দেওয়া থাকে৷ সমস্যা হয় না তেমন৷

প্র: কিন্তু ও ভাবে খুলে রাখার কারণটা কী?

উ: স্ট্রোক হলে ব্রেন তো ফুলে যায়৷ বেশি ফুলে গেলে খুলির মধ্যে জায়গার অভাব হয়৷ তাই খুলি কেটে একটু জায়গা করে দেওয়া হয়৷

প্র: এত কাণ্ড করার পরে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন?

উ: বেঁচে থাকেন৷

প্র: শুধু বেঁচে থাকেন! তা হলে আর লাভ কী?

উ: অনেক সময় বেঁচে থাকাটাই লাভ৷

প্র: অর্থাৎ স্ট্রোক ঠেকানোর চেষ্টা করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ? আপনারা তো কিছু ওষুধও দেন অনেক সময়৷ রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ৷ সে সব তা হলে নির্দ্বিধায় খাওয়া যাবে?

উ: ঠেকানোর চেষ্টা তো অবশ্যই করতে হবে৷ এ ব্যাপারে সবচেয়ে কার্যকর জীবনযাত্রার পরিবর্তন বা লাইফস্টাইল মডিফিকেশন৷ তবে তা হলেই যে রোগ হবে না এমন নয়৷ আবার এই ধরনের ওষুধপত্র খেয়ে এক ধরনের স্ট্রোক, যাকে ইস্কিমিক স্ট্রোক বলে, তা কিছুটা ঠেকানো গেলেও, অন্য ধরনের স্ট্রোক বা হেমারেজিক স্ট্রোকের চান্স কিন্তু বেড়ে যায়৷ বাড়ে তার জটিলতাও৷

প্র: তা হলে উপায়?

উ: ওই যে বললাম, লাইফস্টাইল মডিফিকেশন৷ তার সঙ্গে ডাক্তার বললে ওষুধও খাবেন৷ কারণ তিনি ওষুধ দেবেন ভালমন্দ বিচার করে৷

স্ট্রোক ঠেকাতে কী কী করণীয়:

যত ছিপছিপে থাকবেন, তত চান্স কমবে বিপদের৷

রক্তচাপ, সুগার ও কোলেস্টেরল–ট্রাইগ্লিসারাইডের সমস্যা থাকলে নিয়ম মেনে ও প্রয়োজনে ওষুধ খেয়ে তাদের বশে রাখুন।

ঘাম ঝড়ানো ব্যায়াম করুন নিয়মিত৷

পরিবারে কম বয়সে স্ট্রোকে মৃত্যুর ইতিহাস থাকলে মাঝেমধ্যে একটু চেকআপ করাতে হবে৷

হালকা স্ট্রোক, যাকে ট্রান্সিয়েন্ট ইস্কিমিক অ্যাটাক বলে, তার লক্ষণ দেখা দিলে, চলতে হবে ডাক্তারের পরামর্শমতো৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন