তুলনার অভ্যাস বিষিয়ে দিচ্ছে সম্পর্ক

দু’জন মানুষের মধ্যে তুলনা টানা এ সময়ের কোনও নতুন ঘটনা নয়। সেই কবে সৎমেয়ে বেশি সুন্দরী না কি তিনি নিজে— তা জিজ্ঞেস করে আয়নার সামনে কত না জানি কান্নাকাটি করে সময় নষ্ট করেছিলেন রানি। তবে সময়টা বদলাচ্ছে।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

কে বেশি ভাল?

Advertisement

কে কম?

ভালর কোনও শেষ নেই। শ্রেষ্ঠ খোঁজার চেষ্টাও বৃথা তাই। বরং তুলনা টানাটানির ফাঁকে কোথায় যে হারিয়ে যায় অনেক সুখের মুহূর্ত, তার খেয়াল রাখা দরকার বলে আবারও মনে করাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement

দু’জন মানুষের মধ্যে তুলনা টানা এ সময়ের কোনও নতুন ঘটনা নয়। সেই কবে সৎমেয়ে বেশি সুন্দরী না কি তিনি নিজে— তা জিজ্ঞেস করে আয়নার সামনে কত না জানি কান্নাকাটি করে সময় নষ্ট করেছিলেন রানি। তবে সময়টা বদলাচ্ছে। গতি বাড়ছে জীবনের। ফলে সমস্যার মেঘ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাই আরও সতর্ক হওয়া দরকার বলে মনে করাচ্ছেন মনোবিদ থেকে সমাজতাত্ত্বিক, সকলেই। কারণ, যত বেশি আসবে তুলনা, সম্পর্কে ততই টান পড়তে পারে বলে মনে করেন তাঁরা। সম্পর্কের টানাপড়েনে ঘটে যেতে পারে কঠিনতম দুর্ঘটনাও।

যেমনটা ইতিমধ্যে ঘটেও গিয়েছে বেশ কয়েক বার। কখনও প্রিয় বন্ধুর নতুন বান্ধবীর সঙ্গে তুলনা শুরু হলে ভেঙেছে মন। কখনও আবার সন্তানের জন্য কে কত বেশি কাজ করেছে, তা নিয়ে তুলনা করে নষ্ট হয়েছে পারিবারিক আহ্লাদের সময়টুকু। স্কুল, অফিস, বাড়িতে এমন ঘটনা আরও যে কত ঘটে। সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘এমনই পরিস্থিতি চার দিকে যে, সাবধানে না চললে ভয়ঙ্কর হবে পরিস্থিতি।’’

শহরের এক স্কুল সূত্রের খবর, কার হাতের লেখা বেশি ভাল, তা নিয়ে দুই ছাত্রীর মায়ের মধ্যে ছিল তুলনা টানাটানির লড়াই। দুই বন্ধুর মধ্যে কখনও কারও হাতের লেখার নম্বর কম এলেই জুটত বকুনি। রেষারেষি এমনই দিকে গড়াল যে, দুই মায়ের মধ্যে বন্ধ হল মুখ দেখাদেখি। স্কুলের ওই দুই বন্ধুর মধ্যেও কঠিন হল সম্পর্ক। তার প্রভাব পড়ল বাকি ক্লাসেও। মনরোগের চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলেন, ‘‘তুলনা টানলে আসলে এক জনকে উপরে তুলতে গিয়ে অন্য জনকে নীচে নামানো হয়ে যায়। তা কারওরই ভাল লাগে না। ছোটদের ক্ষেত্রে তা মানসিক বিকাশের জন্য অতি ক্ষতিকর।’’ এর জেরে শুধু সম্পর্কই নষ্ট হয় না, হতে পারে আরও বড় ক্ষতি। তাঁর বক্তব্য, বড় হওয়ার সময়ে অন্যদের সঙ্গে বারবার তুলনা করা যে কোনও মানুষের মধ্যে হিংসা বেশি ঢোকে। বড় হয়ে যা কর্মক্ষেত্রে এগোনোর সময়ে বড় বাধা হতে পারে।

সম্প্রতি আরও কঠিন ঘটনা ঘটেছে। শহরের একটি নামী কলেজের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় ফের উঠে এসেছে এই তুলনার প্রসঙ্গ। মেধাবী দাদার সঙ্গে তুলনা টেনে বকুনি জুটেছিল তাঁর। অভিযোগ, তার পরেই নিজের ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল তাঁর ঝুলন্ত দেহ। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল মনে করেন, তুলনার জালে তলানিতে গিয়ে ঠেকে আত্মবিশ্বাস। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়ে থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নিজের জনেরাই যদি ভরসা না জোগাতে পারেন, তবে এমন পরিস্থিতি এড়ানো খুব কঠিন।

আসলে কারও সঙ্গে কারও তুলনাই হয় না। অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘আমরা যে আসলে গণতন্ত্রর ভাবনাটাই শিখিনি, তুলনা টানার জেরে বারবার হওয়া দুর্ঘটনা তারই প্রমাণ।’’ তিনি মনে করান, কখন কোন আচরণে কাউকে আঘাত করে ফেলছি, সেইটা সবের আগে খেয়াল করা প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন