জৌলুসেই কি রোগ আড়াল, সংশয় রয়েই গেল সভায়

প্রাপ্তমনস্কতা মানেই এগিয়ে যাওয়া কিনা, তা নিয়ে বইল মতামতের স্রোত। পাশাপাশি উঠে এল আরও কিছু বিষয়— সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কি পরিণত হয়েছে, নাকি এখনও অনেকটা পথ যাওয়া বাকি? কিংবা, দৌড়ে এগিয়ে থাকাকেই প্রকৃত বিকাশ হিসেবে ধরে নেওয়া কি যুক্তিসঙ্গত?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৮
Share:

প্রাপ্তমনস্কতা মানেই এগিয়ে যাওয়া কিনা, তা নিয়ে বইল মতামতের স্রোত। পাশাপাশি উঠে এল আরও কিছু বিষয়— সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কি পরিণত হয়েছে, নাকি এখনও অনেকটা পথ যাওয়া বাকি? কিংবা, দৌড়ে এগিয়ে থাকাকেই প্রকৃত বিকাশ হিসেবে ধরে নেওয়া কি যুক্তিসঙ্গত?

Advertisement

এমন নানা প্রশ্ন উস্কে দিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরে জমে উঠেছিল এক বিতর্কসভা— পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল-হকিকত সংক্রান্ত। বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স (বিসিসিআই)-এর উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানটির গোড়াতেই চেম্বারের প্রেসিডেন্ট তথা শহরের এক অন্যতম বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ারম্যান অলোক রায়ের অনুরোধ, স্বাস্থ্যে এ রাজ্য এখনও প্রাপ্তমনস্ক হয়েছে কি না, সে সম্পর্কে রায় দেওয়ার আগে যেন গোটা রাজ্য সম্পর্কে প্রকৃত ছবিটা মাথায় রাখা হয়।

বিতর্কের বিষয়বস্তু ছিল: ‘এ রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রাপ্তমনস্ক হতে এখনও দেরি আছে।’ সঞ্চালক— কার্ডিওথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকার। বিতর্কের সুরটা শুরুতেই চড়া তারে বাঁধা হয়ে গেল, যখন কুণাল বললেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ শব্দটার সঙ্গে প্রাপ্তমনস্কতা শব্দটা একত্রে উচ্চারিত হলে সেটা অন্য তাৎপর্য পায়।’’

Advertisement

বিষয়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে অর্থনীতিবিদ সুমন মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কোন স্বাস্থ্য পরিষেবার কথা বলা হচ্ছে? বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেই যদি এ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার ছবি বলে ধরে নেওয়া হয়, তা হলে আসল সমস্যাকে ‘বাইপাস’ করা হবে।’’ সুমনবাবুর মতে, একশো দিনের কাজ বা মিড-ডে মিলের মতো প্রকল্প নিয়ে যতই প্রচার হোক, প্রাথমিক স্তরে মানুষের অনাহার, অপুষ্টির চিত্রটা খুব বেশি বদলায়নি। ‘‘স্বাস্থ্যের অধিকার তো এ সবের থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।’’— পর্যবেক্ষণ অর্থনীতিবিদের।

দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক সুমিত রায়ের কথায় ‘‘হাসপাতালের পরিকাঠামোই শেষ কথা নয়। রোগী সেই পরিষেবা নিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন কি না, সেটাও সমান বিচার্য।’’

তা হলে কি স্বাস্থ্যে এ রাজ্য সত্যিই তেমন এগোয়নি? পরিসংখ্যান দিয়ে বিপক্ষের বক্তা, মেডিকা হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর সৌমেন বসুর দাবি, রাজ্য এগিয়েছে। যা শুনে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালের চক্ষু-চিকিৎসক অশোক রঙ্গরাজনের বক্তব্য: শুধু বড় বড় হাসপাতাল নয়, স্যানিটেশন, মশাবাহিত রোগ বা সংক্রামক রোগের পরিস্থিতিও মাপকাঠি। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ কতটা এগিয়েছে? বিপক্ষের আর বক্তা— সল্টলেকের এএমআরআই হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় আবার মনে করেন, প্রাপ্তমনস্কতা নির্ভর করে চারটি বিষয়ের উপরে— পরিকাঠামো, শিক্ষা, আর্থিক সামর্থ্য আর সেই নির্দিষ্ট পরিষেবা সম্পর্কে ধ্যানধারণা। ‘‘এই চারটির নিরিখে আমরা খুব ভাল জায়গায় রয়েছি, তা নয়। কিন্তু গত দশ বছরে ছবিটা অনেকটা বদলেছে। বেসরকারি হাসপাতালে তো বটেই, কিছু ক্ষেত্রে সরকারি পরিষেবাতেও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।’’— অভিমত কৃষ্ণেন্দুবাবুর।

অন্য দিকে সাংবাদিক স্বাতী ভট্টাচার্য যুক্তি-জাল বুনে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, স্বাস্থ্যে এ রাজ্য আদৌ সাবালক হয়নি। সিএমআরআইয়ের মেডিক্যাল সুপার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কিংবা শিল্পপতি এস রামলিঙ্গম যদিও তা মানেননি। তাঁরা পেশ করেছেন রাজ্যের নানাবিধ সাফল্যের ছবি। শেষমেশ শ্রোতাদের ভোটে পক্ষের বক্তারাই জয়ী হয়েছেন। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠের মত, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিণতমনস্ক হতে বাংলার এখনও দেরি আছে।

বিপক্ষ হাল ছাড়েননি। তাঁদের সওয়াল, বিশ্বের যে কোনও শহরে এমন বিতর্কের আয়োজন হলে সব সময়ে বিরোধীপক্ষই হারবে। কারণ, কোথাও মানুষ নিজের জায়গার স্বাস্থ্য-পরিষেবা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন